সুমন ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ

  ২৬ জুন, ২০২২

উল্লসিত জনতা উঠে পড়লেন সেতুতে

সেতু উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুতে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। হাজার হাজার মানুষ সেতুতে উঠতে পেরে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এ সময় অনেকে হেঁটেই পদ্মা সেতুতে উঠে পড়েন। পদ্মা সেতুতে উঠে সবাই নিজেকে মুঠোফোনে ক্যামেরাবন্দি করেছেন ও সেলফি তুলেছেন। অনেকে সঙ্গে সঙ্গেই পদ্মা সেতুর ছবি ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন ইতিহাসের সাক্ষী থাকার জন্য। নিরাপত্তা বলয় ভেঙে হাজার হাজার মানুষ পদ্মা সেতুতে উঠে গেলে নিরাপত্তা বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা সেতুর ওপর যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। সেতুতে উঠে পড়া মানুষকে আধা ঘণ্টার মধ্যেই নামিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এমন দৃশ্যের ঘটনা ঘটে।

কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ইতিহাসের সাক্ষী হতে পদ্মা সেতুর ওপর সেলফি তুলতে এসেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন। এখন থেকে সেতুতে যানবাহন চলবে। মানুষ সেতুর ওপর চলাচল করতে পারবে না। তাই এখনই সেতুতে ওঠার সুযোগ কাজে লাগালাম।

জুয়েল রানা নামের স্থানীয় একজন সাংবাদিক বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন ছিল সেতুতে ওঠার। আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলো। সেজন্য আমরা মহাখুশি। কাকলি আক্তার নামের একজন দর্শনার্থী বলেন, এত দিন পদ্মা সেতু নির্মাণের খবর দেখতাম। আজ সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।

এদিকে বরিশাল থেকে আসা মো. জব্বার খান বলেন, আমি পদ্মা সেতু উদ্বোধন দেখতে গত শুক্রবার বরিশাল থেকে এসেছি। আসলেই পদ্মা সেতু আমার জন্য অনেক কষ্টের অবসান ঘটাল। এত দিন আমার বাড়ি যেতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। পদ্মা সেতু হওয়ায় আমার এবং আমার মতো দক্ষিণবঙ্গের মানুষের চিরদিনের জন্য কষ্ট দূর হলো।

আবু সাঈদ নামের এক যুবক বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতুতে ওঠার।

আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সেজন্য আমি অনেক খুশি।

এর আগে বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ১২টা ৬ মিনিটে সেতু দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর জাজিরার অভিমুখে রওনা হন। তার আগে ১১টা ৪৮ মিনিটে নিজ হাতে নির্ধারিত টোল দেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে আজ রবিবার ২৬ জুন ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর যানচলাচল শুরু হবে।

নিরাপত্তার কারণে জনসভা এলাকায় ভোররাত থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ। তাই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। উদ্বোধনের পরপরই মাওয়া প্রান্ত থেকে প্রথমে জনস্রোত সেতুতে ওঠে। হাজার হাজার জনতা পায়ে হেঁটে সেতুতে ঘুরে বেড়ান। কেউ কেউ মোটরসাইকেল নিয়েও সেতুতে ওঠেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাউকে সেতুতে উঠতে বাধা প্রদান করতে দেখা যায়নি। কেউ কেউ সেতুর পাশের সীমানা বেড়ার নিচ দিয়েও সেতুতে ওঠে। তবে ঘণ্টাখানেক পর সোয়া ২টার দিকে সেতু থেকে জনতাকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়। ৩টার দিকে পুরো সেতু খালি হয়ে যায়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

শরীয়তপুর থেকে আসা এক তরুণ বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে উঠে পড়েছি। পায় হেঁটে তো আর উঠতে পারব না। আজ পায়ে হেঁটেই উঠব। পদ্মা সেতু দেখে কিছু বলার আর ভাষা নেই। আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।’

সেতুতে ওঠা আলামগীর হোসেন বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জে থাকি। আজ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেখতে এসেছি। কিন্তু উদ্বোধন অনুষ্ঠানস্থল থেকে অনেক দূরে আমাদের আটকে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। পরে হেঁটে অনেক দূর থেকে পদ্মা সেতুতে এসে উঠেছি।’

এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে উঠেছে পদ্মার দুপাড়ের মানুষ। পদ্মা সেতু একনজর দেখতে এবং উদ্বোধন অনুষ্ঠান-পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বর্ণিল আয়োজন পদ্মা পাড়ে।

এই উৎসবে যোগ দিতে সকাল থেকে জাজিরা প্রান্তে পদ্মাপাড়ের কাঁঠালবাড়ী এলাকায় জড়ো হতে থাকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। সড়ক পথের পাশাপাশি নদী পথেও সুসজ্জিত লঞ্চে চড়ে জনসভায় যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য বদলের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে পদ্মা সেতু। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে, তাই যেন বাঁধভাঙা উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে পদ্মা পাড়ের এই জনপদে। আনন্দ উদ্‌যাপনে মাতোয়ারা এখানকার মানুষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close