প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৩ মে, ২০২২

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে টালমাটাল শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির পাঁচবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে তাকে শপথ পড়ান বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর।

এর আগে গত সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিক্রমাসিংহে। এরপরই তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বলে শোনা যায় এবং বিক্রমাসিংহের দল বিষয়টি নিশ্চিত করে। এদিকে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনায় শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, তার ছেলে নামাল ও তাদের ১৫ মিত্রের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলম্বোর আদালত।

রনিল বিক্রমাসিংহের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ। সিলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনার পর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি।

৭৩ বছর বয়সি এই ইউএনপি নেতা ৪৫ বছর ধরে সংসদে আছেন। তার ব্যাপক আন্তর্জাতিক সংযোগ আছে এবং তাকে একজন দক্ষ আলোচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সহিংস বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গত সোমবার পদত্যাগ করার পর তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলেও দেশটির চলমান অচলাবস্থা শিগগিরই কাটছে না বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ ছাড়া জাতীয় ঐক্যের সরকারে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দলগুলো।

প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে কারফিউ উপেক্ষা করে কলম্বোয় তার কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ চলছে। সেখানে বিক্ষোভে অংশ নেন মোহনদাস অরবিন্দ নামের একজন। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না রাজাপাকসে পরিবারের কেউ সরকারে থাকুক।’

করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। ঋণের চাপ আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে।

এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। গত শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বিক্ষোভের লাগাম টানতে এরপর জারি করা হয় কারফিউ।

এরই মধ্যে সোমবার দেশজুড়ে বিক্ষোভে রাজাপাকসের অনুগত কয়েক ডজন ব্যক্তির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামবানটোটায় রাজাপাকসের পৈতৃকবাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। সহিংসতা বন্ধে ‘দেখামাত্র গুলির’ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। যদিও সরকার পরে বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

অচলাবস্থা নিরসনে শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে বলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সম্পর্কে মাহিন্দা রাজাপাকসের ছোট ভাই।

সেনা পাহারায় গত মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছাড়েন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এর আগে হাজারো বিক্ষোভকারী বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। এতে সেখানে প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আটকা পড়েন।

এরপর খবর ছড়িয়ে পড়ে মাহিন্দা রাজাপাকসে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিঙ্কোমালি শহরে একটি নৌঘাঁটিতে সপরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। রাজধানী কলম্বো থেকে ওই নৌঘাঁটির দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার। সেখানেও জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনায় শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, তার ছেলে নামাল ও তাদের ১৫ মিত্রের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলম্বোর আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ জারি করা হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত সোমবারের ওই ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছে।

আদালতের এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, আদালতে রাজাপাকসে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও চাওয়া হয়েছিল। তবে যেকোনো সন্দেহভাজনকে আটক করার ক্ষমতাই পুলিশের আছে উল্লেখ করে এ আবেদন নাকচ করে দেন ম্যাজিস্ট্রেট।

সোমবারের সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, রাজাপাকসে এবং তার মূল সহযোগীরা নিজেদের প্রায় ৩ হাজার সমর্থককে বাসে করে রাজধানীতে নিয়ে গিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করতে প্ররোচিত করেছিলেন।

এ ছাড়া তার অনুসারীরা তার বাসভবন থেকে বেরিয়ে এসে লাঠি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান। হামলার পর অন্তত ২২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close