নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ মে, ২০২০

রোববার থেকে সব খোলা, চলবে বাসও

প্রজ্ঞাপন জারি

করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ আর না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ওই দিন থেকে সীমিত পরিসরে ট্রেন, লঞ্চ ও বাসও চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এমন নানা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। প্লেন চলাচলেও বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষ নিজ ব্যবস্থাপনায় প্লেন চলাচলের বিষয়ে বিবেচনা করবে।

বৈশ্বিক মহামারি রূপ নেওয়া ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ আটকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ দেশের অফিস-আদালত; তখন থেকে গণপরিবহনও রয়েছে বন্ধ। ঘরবন্দি থাকার এই সময়ে কয়েকটি বিধিনিষেধ শিথিলের পর যখন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সবচেয়ে বেশি; তখন ঈদ কাটিয়ে অফিস ও গণপরিবহন চালু হতে যাচ্ছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত খুলছে না; চলাফেরায় বিধিনিষেধও আগের মতো থাকছে।

আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে বলে গত বুধবার জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। স্বাস্থ্যবিধিসহ বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে সীমিত পরিসরে অফিস চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ছুটি বাড়ছে না। অর্থনৈতিক কর্মকা- সীমিত আকারে চালু রাখা হবে। পাশাপাশি নাগরিক জীবনের সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত আকারে চলবে। বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তানসম্ভবাদের এ সময় অফিসে আসা যাবে না।

৩০ মের পর আর ছুটি না বাড়ায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির মেয়াদ আপাতত শেষ হচ্ছে।

ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার ঠেকানোর লক্ষ্যে সবাইকে ঘরে রাখতে গণপরিবহন বন্ধ করে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি; অনেকটা অন্য দেশগুলোর জারি করা লকডাউনের মতো। পরিস্থিতির উন্নতি দেখে বিভিন্ন দেশ লকডাউন শিথিল করে জনজীবন স্বাভাবিকতা ফেরানোর পথে হাঁটছে; যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্ক করেছে, সতর্কতায় এই ঢিল রোগ পুনরায় ব্যাপক আকারে ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশে এপ্রিলে পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার পর মে মাসে ঈদের আগে আরো কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়; তারপর কোভিড-১৯ সংক্রমণ হার সবচেয়ে বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

এই অবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে আরো কিছু দিন কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করলেও অর্থনীতিবিদদের অনেকে আবার স্থবির অর্থনীতি চালু করতে সীমিত আকারে সব কিছু খোলার পক্ষে মত জানিয়ে আসছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ এর আগে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে আলোচনা করে লকডাউন নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সাধারণ ছুটি আর না বাড়ানোর ইঙ্গিতই ছিল। তিনি বলেছিলেন, ঝড়-ঝঞ্ছা-মহামারি আসবে। সেগুলো মোকাবিলা করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা কিন্তু সব ওপেন করে দিচ্ছি না, সীমিত পরিসরে চলবে, বলেন প্রতিমন্ত্রী।

গণপরিবহন চালু হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, গণপরিবহনও ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে চালু হবে। ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেসব সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, পরে সেখানে প্রধানমন্ত্রী এটা যোগ করেছেন যে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে এবং সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলতে পারবে।

ঢাকাসহ সারা দেশেই গণপরিবহন চলতে পারবে কিনা এই প্রশ্নে ফরহাদ বলেন, হ্যাঁ, সারা দেশেই চলাচল করতে পারে। কারণ অনেক মানুষেরই ব্যক্তিগত গাড়ি নেই, তাদেরও যাতায়াত করা প্রয়োজন। সেজন্য ১৫ দিনের জন্য সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু করা হবে। ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত আমরা এসব নিয়মকানুন কতটুকু মানতে পারলাম সেটা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিমান চলাচলও করতে পারবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। দীর্ঘদিন সব কিছু বন্ধ রাখলে অর্থনীতিসহ বেসরকারি খাতগুলো যে ক্ষতির মুখে পড়ছে সে বিষয়টি মনে করিয়ে দেন ফরহাদ।

দীর্ঘদিন গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জীবিকার সংকটে পড়া পরিবহন শ্রমিকরা এরই মধ্যে বিক্ষোভে নেমেছেন বিভিন্ন স্থানে।

অফিস খুললেও এই সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ। নাগরিকদের চলাফেরায় আগের মতোই বিধিনিষেধ থাকছে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগের মতোই রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। এই সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। হাট-বাজার এবং দোকানপাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বেচাবিক্রি চলবে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচলে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে চেকপোস্টের ব্যবস্থা থাকবে। জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এটা বাস্তবায়ন করবে।

সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রার্থনা চলবে বলে জানান ফরহাদ।

বর্তমানে ৯৫ শতাংশ মানুষ বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করছেন দাবি করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাকি ৫ শতাংশকেও এর মধ্যে আনতে হবে।

স্কুল বন্ধ থাকছে : অফিস খুললেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি; ফলে এগুলো ১৫ জুন পর্যন্ত বন্ধই থাকছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ১৭ মার্চ থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে নির্ধারিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে গেছে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে তবে অনলাইন বা ভার্চুয়াল ক্লাস চলবে।

প্রধানমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, অর্থনীতির প্রয়োজনে বিভিন্ন খাতে বিধিনিষেধ শিথিল করলেও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কেটে না যাওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধই রাখা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close