সংসদ প্রতিবেদক

  ০১ মার্চ, ২০১৮

সংসদে রওশন এরশাদ

অঙ্কের হিসাব নয় জনগণ চায় দৃশ্যমান উন্নয়ন

বিরোধী দলের নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘অঙ্ক কষে কষে আমরা অনেক কিছু দেখাতে পারি। অঙ্কের হিসাবে শুভংকরের ফাঁকি থাকে। তাই জনগণ দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে চায়। ব্যাংকিং খাতগুলোর কি অবস্থা তা সবাই জানেন। অর্থনীতির খাতে ধস নেমেছে। শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। অর্থমন্ত্রীর মতো এরকম যোগ্য মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ব্যাংকে এত বড় ধস নামল কেন?’ তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষা খাত ও শেয়ারবাজার দেশের জনগণের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গুরুত্ব সহকারে এ বিষয়গুলোর সমাধান করতে হবে।’

গতকাল বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তবে রওশন এরশাদ এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘এই সংসদ প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। সবার মনে আছে কি অবস্থায় কোন সময় আমরা নির্বাচন করেছি। জাতীয় সংকট উত্তরণের জন্য আমাদের দলই তখন এগিয়ে এসেছিল দেশ ও দেশের জনগণকে সাহায্য সহযোগিতা করতে। অতীতে যেসব সংসদ শেষ হয়েছে কোনোবার কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি। এবার শান্তিপূর্ণভাবে সংসদ শেষ হচ্ছে।’

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘হরতাল অবরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি জনগণকে। টকশোতে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু তারা জানেন না যে, আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অনুসরণ করছি। তাদের পার্লামেন্ট সিস্টেমে সরকারকে সহযোগিতা করে বিরোধী দল। কিন্তু তারা এটা না বুঝে বিরোধী দলের সমালোচনা করছে।’

রওশন এরশাদ বলেন, দেশে কিছু কিছু বিষযে সমস্যা আছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক স্নেহশীল মহিলা। মায়ের দরদ দিয়ে সবকিছু সমাধানের চেষ্টা করেন। সে কারণে আমি কিছু কথা বলি। প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তারপরও উনি যে চেষ্টা করছেন এটা যদি জনগণ জানতে পারে তাহলে তারা শান্তি পায়। আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা অনেক কম। কিন্তু আমরা কি সেটা পূরণ করতে পারছি? চালের দাম বেশি। এর সঙ্গে মাছ, মাংসের দাম অনেক বেশি। এখন মানুষ ভাতের সঙ্গে আলুভর্তা খেতে পারে। কিন্তু ভর্তা দিয়ে কত দিন খাবে।

তিনি বলেন, দেশের জনগণ শান্তি চায়। শান্তিতে থাকতে চায়। আমাদের সেই শান্তি দিতে হবে। এটা করতে হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। যত দ্রæত সম্ভব এটা করতে হবে। জনগণের কাজ নেই বলে দেশে মাদকের বিস্তার লাভ করছে বেশি। এতে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে এটা একটি বড় ধরনের দুর্যোগ বলে মনে করি। দেশের সমস্যাগুলো যদি চিহ্নিত করে দ্রæত সমাধান করা যায় তাহলে আমরা এখনই উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে পারব।

রওশন এরশাদ বলেন, পদ্মা সেতু অবশ্য আমাদের অবকাঠামোগত বড় মাইলফলক। এটার কাজ শুরু হয়েছিল তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে। এখন এর বরাদ্দ হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এত টাকা বরাদ্দ কেন। কিছুদিন পর পর যদি বরাদ্দ বাড়ানো হয় তাহলে কি করে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেখানে দেখেন কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা আছে। শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে অনেক কম অনুদান দেওয়া হয়। এতে উদাসীন থাকলে শিক্ষার উন্নয়ন হবে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস লেগেই আছে। সৌদি আরব থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থা দেশে বারবার কেন হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন করে শিক্ষা খাতে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কি হবে। এটা বন্ধ হবে কবে? সরকার কেন এটা বন্ধ করতে পারছে না? এখানে শিক্ষামন্ত্রীকে যদি এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় উনি কি জবাব দেবেন? সরকার যদি এক্ষেত্রে না পারে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিয়ে চেষ্টা করতে পারে। তারা কি এটা পারবে না? সাধারণ লোক তো প্রশ্নপত্র ফাঁস করে না। যারা প্রশ্নপত্র তৈরি করে তারা এটা ফাঁস করছে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে এটার দায়িত্ব দিয়ে দেন। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য বলতে কি দেশে কিছু আছে। এ প্রশ্ন আমি সবার কাছে করতে চাই। এটা রোধ করতে না পারলে কাদের নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। হাসপাতালে কোনো জায়গা নেই। সব মানুষ অসুস্থ। এগুলো আপনি বন্ধ না করলে কে করবে। আপনি বলছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়বেন। কিন্তু কাদের নিয়ে গড়বেন। আজকের শিশুরা তো বাজারে থাকা খাদ্যের সঙ্গে বিষ খাচ্ছে। এসব বিবেচনা না করলে দেশের জনগণ, নতুন ভবিষ্যৎ কোথায় যাবে?

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করেন। ভোটারদের কথা চিন্তা করেন। আমরা চাই দেশের মানুষ ভালো থাকুক। এখন যত উন্নয়ন হয়েছে অতীতের কোনো সরকারের সময় হয়নি। আমরা বিরোধী দল হিসেবে সহযোগিতা করেছি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এখনো ঝুলে রয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এগুলো দেখতে হবে। আনান কমিশন কিছু শর্ত দিয়েছিল। তাদের থেকে কার্যকর হবে প্রধানমন্ত্রী যে ৫টি শর্ত দিয়েছেন সেটা। যত দ্রæত সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

বিরোধী দলের নেতা বলেন, ছেলেমেয়েরা আজকাল স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছে। এগুলো ব্যবহারের জন্য সীমারেখা থাকা উচিত। প্রয়োজনে ১৮ বছরের নিচে স্মার্ট ফোন নয়- এরকম একটি বিধান করা যেতে পারে। তাহলে ভার্চুয়াল ভাইরাস থেকে ছেলে মেয়েরা রক্ষা পাবে। তারা লেখাপড়া করতে পারবে, স্বাস্থ্য নষ্ট হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist