আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২১ জানুয়ারি, ২০১৮

সিনেটে উত্থাপিত বিল অনুমোদন হয়নি

অচলাবস্থায় মার্কিন সরকার

বন্ধ হয়ে যাবে অনেক দফতর হ চাকরি হারাবে অনেকে

সরকারের বাজেট বাড়ানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে উত্থাপিত একটি বিল পাস না হওয়ায় দেশটির সরকারি কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের বাজেট বাড়ানো নিয়ে প্রস্তাবিত ওই বিল সিনেটে প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেস একই দলে নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও সরকারের বাজেট বাড়ানোর বিল অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হলো। খবর : বিবিসির।

এ জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা তাদের বেপরোয়া দাবির নিচে বৈধ নাগরিকদের জিম্মি করে রেখেছে। মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স আরো বলেন, ‘তারা রাজনীতিকে সবকিছুর ওপরে রেখেছে। তারা জাতীয় নিরাপত্তা, সামরিক ব্যবস্থা, অরক্ষিত শিশু এবং দেশকে তার সব নাগরিকের সেবা করতে সক্ষম রাখার বিষয়গুলোকে অবহেলা করেছে।’ অন্যদিকে সিনেটে ডেমোক্র্যাটিক নেতা চাক সচুমার বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলটি মেনে নিতে কংগ্রেসে তার দলকে ‘প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন’। আগামী মাস পর্যন্ত সরকারের বাজেট বাড়ানোর বিল পাসের শেষ সময় ছিল গত শুক্রবার মধ্যরাত। কিন্তু শেষ মুহূর্তেও বিলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সিনেটরদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ থাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটরদের নেতা

মিচ ম্যাককনেল ভোটের সিদ্ধান্ত নেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিলটি হাউস অব রি-প্রেজেন্টেটিভে ২৩০-১৯৭ ভোট পাস হয়। কিন্তু সিনেটে সেটি ৫০-৪৯ ভোট পেয়েছে। পাঁচজন রিপাবলিক সিনেটর বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে জানায় বিবিসি। যদিও পাঁচ ডেমোক্র্যাট সিনেটর বিলে সমর্থন দিতে র‌্যাংক ভেঙেছেন। এর আগে ২০১৩ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে সিনেটরদের মতবিরোধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ১৬ দিন পর্যন্ত ওই অচলাবস্থা ছিল। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক কর্মী ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন অনেক দফতর বন্ধ হয়ে যাবে। তবে জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ চলবে। যার মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা, ডাক, বিমান ওঠানামার কাজ, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সেবা, হাসপাতালে জরুরি বিভাগে সেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কারাগার, কর বিভাগ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন অন্যতম। বন্ধ হয়ে যাবে জাতীয় উদ্যান এবং স্মৃতিস্তম্ভগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ। ওবামার আমলে ওই অলাবস্থা নিয়ে জনরোষ দেখা দিয়েছিল।

সিনেটে ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে নিজের হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা আমাদের দক্ষিণের বিপজ্জনক সীমান্তের সামরিক, সুরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য একদমই ভালো কিছু মনে হচ্ছে না।’

সরকার অচলে যা ঘটতে পারে : বাজেট বাড়ানো নিয়ে সিনেটে উত্থাপিত একটি বিল পর্যাপ্ত সমর্থন না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এর ফলে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় নয় কেন্দ্রীয় সরকারের এমন অনেক কর্মীকে অবৈতনিক ছুটিতে যেতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত অনেক দফতরও বন্ধ হয়ে যাবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ চলবে, যার মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা, ডাক, বিমান ওঠা-নামার কাজ, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সেবা, হাসপাতালে জরুরি বিভাগে সেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কারাগার, কর বিভাগ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন অন্যতম। রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২৬ জানুয়ারি থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়ার আগে এ সপ্তাহেই তারা শেষবারের মতো বেতন পাবেন।

বিবিসি জানায়, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের বাজেট বাড়ানো নিয়ে প্রস্তাবিত ওই বিল সিনেটে প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেস একই দলের নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও সরকারের বাজেট বাড়ানোর বিল অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হলো। এর আগে ২০১৩ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে সিনেটরদের মতবিরোধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ১৬ দিন পর্যন্ত ওই অচলাবস্থা চলেছিল। তখন আট লাখের বেশি কর্মীকে অবৈতনিক ছুটিতে যেতে হয়েছিল। জাতীয় উদ্যান ও স্মৃতিস্তম্ভগুলোর রক্ষণাবেক্ষণেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল; যা নিয়ে দেখা দিয়েছিল জনরোষ।

এর আগে এ ধরনের ঘটনায় ছুটিতে যাওয়া কর্মীদের সামান্য ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল কংগ্রেস। ট্রাম্প প্রশাসনও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে বলে গত শুক্রবার জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এ দফা কতজনকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হবে এবং কোন কোন দফতরের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা জানা যায়নি। তবে ২০১৩ সালের সময়ে এ ধরনের অচলাবস্থায় কী ঘটেছিল, তার একটি তুলনা টেনে যা হতে পারে তার একটি ধারণা দিয়েছে রয়টার্স।

সামরিক বাহিনী : সরকারের অচলাবস্থার কারণে আফগানিস্তানে যুদ্ধ এবং ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে গত শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সামরিক বাহিনীর ১৩ লাখ সদস্য প্রতিদিনকার মতোই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। তবে প্রয়োজনীয় নয় সামরিক বাহিনীর এমন কর্মকা-ে নিয়োজিত বেসামরিকদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হতে পারে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিম ম্যাটিস বলেছেন, তহবিল আটকে গেলে রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই যুদ্ধজাহাজগুলো চলতে হবে, বন্ধ থাকবে সামরিক বিমানের উড্ডয়নও।

বিচার বিভাগ : মার্কিন বিচার বিভাগের বেশির ভাগ কর্মীই প্রয়োজনীয়। সরকারি অচলাবস্থা শুরু হলে বিভাগটির এক লাখ ১৫ হাজার কর্মীর মধ্যে ৯৫ হাজারই কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

আর্থিক নজরদারি : কংগ্রেসে বাজেট ঠিক হলেও স্টক মার্কেটের নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিস অ্যান্ড অ্যাক্সচেঞ্জ কমিশনের অর্থায়ন হয় বিভিন্ন আর্থিক খাত থেকে পাওয়া ফি’র মাধ্যমে। এর আগে সরকারি অচলাবস্থা চলার সময়ও তারা সাময়িকভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়েছিল। তবে মার্কিন কংগ্রেস যদি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও অচলাবস্থা নিরসন করতে না পারে তাহলে এর কর্মীদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ছুটিতে যেতে হবে।

হোয়াইট হাউস : গত শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, বাজেট নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে হোয়াইট হাউসের এক হাজার ৭১৫ কর্মীর মধ্যে এক হাজারেরও বেশি কর্মীকে ছুটিতে যেতে হবে। তেমনটা হলে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন এবং সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্ধারিত সফরের সময় তাকে অতিরিক্ত কর্মীসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া লাগতে পারে বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ন্যাশনাল পার্ক : রেঞ্জার্স এবং নিরাপত্তারক্ষীদের দায়িত্বে রেখেই অচলাবস্থার মধ্যেও ন্যাশনাল পার্কগুলো খোলা রাখার পরিকল্পনা আছে ট্রাম্প প্রশাসনের। ২০১৩ সালের অচলাবস্থায় পার্কগুলো প্রতিদিন সাড়ে সাত লাখ দর্শক হারিয়েছে বলে অলাভজনক ন্যাশনাল পার্ক কনজারভেশন অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ক্ষতি হয়েছে ৫০ কোটি ডলারের ওপরে।

পর্যটন খাত : ওবামার আমলে হওয়া অচলাবস্থায় স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরের মতো জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল লিংকন মেমরিয়াল, লাইব্রেরি কংগ্রেস ও ন্যাশনাল আর্কাইভস। এ দফা এ ধরনের উন্মুক্ত কেন্দ্রগুলো বন্ধ না রাখার পরিকল্পনা আছে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ট্যাক্স : ২০১৩ সালে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগের ৯০ শতাংশ কর্মীকেই বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল বলে লিবারাল সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেস জানিয়েছে। ওই কারণে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার ট্যাক্স জমা হতে দেরি হয়েছিল, ভাষ্য ব্যবস্থাপনা ও বাজেট দফতরের।

মেইল ডেলিভারি : দৈনন্দিন কর্মকা- পরিচালনার অর্থ কর থেকে না আসায় অচলাবস্থাতেও যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

ভ্রমণ : নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা কাজ করায় বিমান ও রেল যোগাযোগে ২০১৩ সালের অচলাবস্থা তেমন প্রভাব ফেলেনি। খানিকটা ধীরগতির হলেও পাসপোর্টবিষয়ক কর্মকা-ও স্বাভাবিক ছিল।

আদালত : অতিরিক্ত অর্থ না পেলেও সুপ্রিম কোর্টসহ কেন্দ্রীয় আদালতের তিন সপ্তাহ পর্যন্ত কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হবে না বলে ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্যসেবা : ২০১৩ সালে বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যবীমার কর্মকা-ও কোনো বাধা ছাড়াই অব্যাহত ছিল। তবে কয়েকশ রোগী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেবার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও এবার তা হবে না বলে ধারণা প্রশাসনের।

শিশু : পাঁচ বছর আগের অচলাবস্থায় আলাবামা, কানেকটিকাট, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিসিসিপি ও সাউথ ক্যারোলাইনার ছয় হাজার ৩০০ শিশুর জন্য চালানো একটি কর্মসূচি নয়দিন বন্ধ ছিল।

সামাজিক নিরাপত্তা : ওইবার সামাজিক নিরাপত্তা ও প্রতিবন্ধকতা অনুসন্ধানের কাজও একেবারে বন্ধ ছিল না, বিভিন্ন দফতরও খোলা ছিল তবে সেগুলোর কার্যক্রম ছিল সীমিত।

লোন : আয় ও সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর ভেরিফিকেশনসহ সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে দেরি হওয়ায় বন্ধকী ও অন্যান্য লোন অনুমোদনের প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়ে গিয়েছিল।

ভেটেরান : ২০১৩ সালের অচলাবস্থার সময় ভেটেরান বিষয়ক দফতরের বেশির ভাগ কর্মীই কাজ চালানোর সুযোগ পেয়েছেন। ভেটেরানদের জন্য থাকা চিকিৎসাসেবা এবং অন্যান্য সুবিধাদিও অব্যাহত ছিল। যদিও শিক্ষা এবং মামলা সহায়তার কার্যক্রমে ধীরগতি ছিল।

ফুড ইন্সপেকশন : কৃষিবিভাগের মিট ইন্সপেক্টররও কাজে বহাল ছিলেন। তবে কৃষি পরিসংখ্যানবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশের কাজ স্থগিত ছিল, বিভাগের ওয়েবসাইটও ছিল নিস্ক্রিয়।

জ্বালানি : তহবিল ছাড়ে খুব বেশি দেরি না হলে তাদের কর্মীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তবে অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে ‘স্বল্পসংখ্যক’ কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়া লাগতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist