ফয়জুন্নেসা মণি

  ২৫ জুলাই, ২০১৭

প্রিয় মাছ

ইল্শে কথা

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। বাঙালির কাছে ইলিশ খুব প্রিয়। বাংলা ও আসামের ভাষায় ইলিশ শব্দটি পাওয়া যায় এবং তেলেগু ভাষায় ইলিশকে বলা হয় পোলাসা, গুজরাটে ইলিশ মাছ মোদেন (স্ত্রী) বা পালভা (পুরুষ) নামে পরিচিত। ইলিশ সুস্বাদু, সু-ঘ্রাণ ও কাঁটাযুক্ত মাছ। অক্টোবর এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসকে ইলিশের প্রজনন মৌসুম ধরা হয়। ইলিশের জীবনের অধিকাংশ সময় কাটে সাগরে। কিন্তু ডিম পাড়ার আগে সে নদীর মিঠা পানিতে আসে। একটি মা ইলিশ সর্বনিম্ন দেড় লাখ এবং সর্বোচ্চ তেইশ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয়। পদ্মার ইলিশের স্বাদে সেরা হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে। আবার ভারতের রূপনারায়ণ, গঙ্গা ও গোদাবরী নদীর ইলিশ তাদের সুস্বাদু ডিমের জন্য বিখ্যাত। ইলিশ সাগর থেকেও ধরা হয়, কিন্তু নদীর মাছের মতো সুস্বাদু নয়। পদ্মার ইলিশের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। চাঁদপুরের ইলিশ স্বাদে অনন্য, খ্যাতিতেও বিশ্বসেরা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চাঁদপুরের ইলিশের চাহিদা আকাশচুম্বী। আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা বুকিং দিয়ে রাখেন। গবেষণায় জানা যায়, ইলিশে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মানুষের দেহের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ও ইনসুলিনের লেভেল কমায়, হৃদরোগ উপশম করে। ইলিশে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। যার তেলে আছে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে কার্তিক মাসের শেষ পর্যন্ত সময়কে ইলিশ ধরার মৌসুম বলা হয়। তবে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসকে ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চাঁদপুরের ইলিশের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু ভারতে পাচারকৃত বাংলাদেশের ইলিশে ভারতীয় স্টিকার লাগিয়ে বিদেশে রফতানি করা হয় বলেও জানা গেছে! সম্প্র্রতি চাঁদপুর জেলাকে ইলিশের বাড়ি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। দেশের প্রায় ১০০টি নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়। একদা বিখ্যাত পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, গড়াই, চিত্রা ও মধুমতী নদীতে বিপুল পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যেত। এখন শুষ্ক মৌসুমে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। তবে অভয়াশ্রম করায় বর্তমানে পদ্মা নদীতে ইলিশের প্রাপ্যতা বেড়েছে। পান্তা-ইলিশ এখন শহুরে বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। আর হিন্দুদের পুজোয় চলে সর্ষে ইলিশ। ভালো খবরটি হচ্ছে- বিশ্বের মোট ইলিশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ শতাংশ আসে জাতীয় মাছ ইলিশ থেকে, যার অর্থমূল্য আনুমানিক সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ১০ বছরে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা থাকায় কমপক্ষে দেড় কোটি মা ইলিশ আহরণ থেকে রক্ষা পায়। এর থেকে প্রায় ৪৭ হাজার কেজি ডিম প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হয়, যা থেকে শতকরা ৫০ ভাগ হিসেবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি রেণু উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে শতকরা মাত্র ১০ ভাগ রেণু আহরণ থেকে রক্ষা পেলেও তিন হাজার কোটি ইলিশের উৎপাদন বাড়ে। আরো একটি আশার খবর হচ্ছে, ইলিশের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ইলিশের উৎপাদন, আকার ও বিচরণ ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। এক কেজি গড় ওজনের ইলিশ মাছ বাংলাদেশে ফিরতে শুরু করেছে। মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশে ধরা পড়া ১৭ হাজার ইলিশের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য দিয়েছে।

গত কয়েক বছরে পদ্মা ছাড়াও সারা দেশেই সুরমা-কুশিয়ারার আশপাশের বড় বড় বিল ও হাওর এলাকা থেকেও আমরা ইলিশ ধরা পড়ার খবর পাচ্ছি। এটা নিঃসন্দেহে সুখবর। মাছবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী- ইলিশ পাওয়া যায় বিশ্বের এমন ১১টি দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশের উৎপাদন ক্রমাগত বাড়ছে, বাকি ১০টিতেই ইলিশের উৎপাদন কমছে। আর এই বৃদ্ধি পাওয়ার হার, প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে না বললেই নয়, আমরা যদি ইলিশের নামে জাটকা ধরা থেকে মাত্র দু’মাস নিজেদের বিরত রাখতে পারি, তাহলে সেরা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য বিশ্বের সেরা মাছটি খাবার সুযোগ তৈরি হতে বাধ্য।

লেখক : কবি ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist