ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

  ২০ মার্চ, ২০২৪

মুক্তমত

চিকিৎসা বিজ্ঞানে রমজানের গুরুত্ব

রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। রোজা শব্দটি ফারসি। এর আরবি পরিভাষা হচ্ছে সওম, বহুবচনে বলা হয় সিয়াম। সওম অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। পরিভাষায় সওম হলো আল্লাহর সন্তুটি কামনায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার থেকে বিরত থাকা। সময়ের আবর্তে আরবি সনের এগারোটি মাস অতিক্রম করে আমাদের কাছে হাজির হয়েছে রহমতের ঝরনাধারা রমজানুল মোবারক।

বহু প্রতীক্ষিত বস্তু যখন সুন্দর উপস্থাপনায় কারো কাছে উপস্থিত হয়, তখন আর আনন্দের কোনো সীমা থাকে না। তেমনি চাতক পাখির মতো দীর্ঘ এগারোটি মাস প্রতীক্ষার পর মুসলমানদের কাছে যখন মাহে রমজানুল মোবারক উপস্থিত হয়, তখন প্রবাহিত হতে থাকে রহমতের ঝরনাধারা। খুলে দেওয়া হয় ক্ষমার দুয়ার। খুলে দেওয়া হয় জান্নাত। আকাশের দরজা। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজা। কবর আজাব। শয়তানকে করা হয় শিকলবন্দি। পবিত্র করে তোলা হয় মানুষকে। পাপ থেকে করা হয় মুক্ত। ধনীরা আদায় করতে থাকে গরিবের হক। আদায় করতে থাকে জাকাত। আদায় করে ফিতরা। পাপীরা তাওবার মাধ্যমে ফিরে আসে সত্যের দুয়ারে। ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র দাঁড়িয়ে যায় একই কাতারে। দীর্ঘ এক মাসব্যাপী রমজানের কঠোর পরিশ্রম ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালা জাল্লা শানহুর তাকওয়া অর্জন ও এর সামগ্রিক সুফল সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে বিশ্বব্যাপী মানবতার শান্তি ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত হবে।

রমজানের রোজা সাধনার মাধ্যমে মানুষের অন্তরের রিপুকে মহান আল্লাহতায়ালা জাল্লা শানহুর তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিত করা হয়। অন্তরের পশু প্রবৃত্তি তথা নফসে আম্মারাকে বশীভূত করে মানুষ নফসে লাওয়্যামা ও নফসে মুতমাইন্নার (সর্বোচ্চ প্রশান্ত আত্মা) পর্যায়ে উপনীত হয়। প্রকৃত রোজাদার তাই এ মাসে আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংশোধনের পর্যায় উপনীত হয়। আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালা জাল্লা শানহুর নৈকট্য লাভ করে। আর সত্যিকার সিয়াম সাধনার মাধ্যমে সমাজ থেকে সব অন্যায়, অনাচার, ব্যভিচার ও সন্ত্রাস দূরীভূত হয়। গোটা ব্যক্তি জীবনে নিরাপদ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা লাভ করা যায়।

হজরত আবু হুরায়রা (রা). থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমল দশ গুণ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়ে থাকে। মহান আল্লাহতায়ালা জাল্লা শানহু বলেন, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। কেননা, রোজা একমাত্র আমারই জন্য রাখা হয়, আর আমিই এর প্রতিদান দেব। বান্দা আমারই জন্য নিজের কামনা ও পানাহার পরিহার করে থাকে। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে, একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি হলো (পরকালে) তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের সময়। নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ-মহান আল্লাহতায়ালা জাল্লা শানহুর কাছে মিশকের সুগন্ধি থেকেও অধিক সুগন্ধময়। রোজা হলো ঢালস্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কারো রোজার দিন আসে, সে অশ্লীল কথাবার্তা বলবে না এবং গ-গোল করবে না। তাকে যদি কেউ কটূ কথা বলে অথবা লড়াই করতে চায়, তবে সে যেন বলে আমি একজন রোজাদার। (বোখারি ও মুসলিম)

অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সর্বক্ষণ আহার সীমাতিরিক্ত ভোজন ও দূষিত খাদ্য খাওয়ায় শরীরে এক প্রকার বিষাক্ত উপকরণ ও উপাদানের সৃষ্টি হয় এবং জৈব বিষ জমা হয়। যার কারণে দেহের নির্বাহী ও কর্মসম্পাদন অঙ্গ প্রতঙ্গগুলো বিষাক্ত উপকরণ ও জৈব বিষ দমনে অক্ষম হয়। ফলে তখন জটিল ও কঠিন রোগের জন্ম হয়। দেহের মধ্যকার এমন বিষাক্ত ও দূষিত উপাদানগুলো অতিদ্রুত নির্মূলকরণের নিমিত্তে পাকস্থলীকে মাঝেমধ্যে খালি করা একান্ত প্রয়োজন। রোজাই এর একমাত্র সহায়ক। যার বিকল্প করা যায় না।

১৯৬০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম কর্তৃক মানব শরীরের ওপর রোজার প্রভাব শীর্ষক গবেষণামূলক নিবন্ধ অনুযায়ী জানা যায়, রোজা দ্বারা শরীরের ওজন সামান্য হ্রাস পায় বটে, তবে তা শরীরের কোনো ক্ষতি করে না বরং শরীরের মেদ কমাতে রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অপেক্ষা অধিক কার্যকর। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার আলোকে আরো জানা যায়, যারা মনের করেন রোজা রাখলে শূল বেদনার প্রলোপ বৃদ্ধি পায়, তাদের এ ধারণা সঠিক নয় বরং ভোজনে তা বৃদ্ধি পায়।

মহান আল্লাহতায়ালা জাল্লা শানহু আমাদের সঠিক আকিদা ও আমলের মাধ্যমে জীবন গঠনের তাওফিক এনায়েত করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close