reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ মার্চ, ২০২৪

অস্থিরতা দূর করতে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন

সমাজে অস্থিরতা দিন দিন বাড়ছে। বৈষম্য, অসম প্রতিযোগিতা, বস্তুবাদী মনোভাব, নীতিহীনতা ইত্যাদি উসকে দিচ্ছে এই অস্থিরতার পারদ। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। ছোটখাটো সমস্যায়ও মানুষ জড়িয়ে পড়ছে বিবাদে, ঘটাচ্ছে হত্যার মতো ঘটনা। কিংবা বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ।

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক। গত শুক্রবার রাতে ফেসবুকে সুইসাইড নোট পোস্টের পর কুমিল্লা শহরে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। এরপর গত শনিবার ঢাকার মিরপুরে নারীঘটিত কারণে ব্যস্ত সড়কে জনসম্মুখে এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি গোপালগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে তিন শিশুসন্তান নিয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় তাদের অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যায় ছোট মেয়ে। ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে। স্বামীর ওপর অভিমান করে দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ যমুনা খাতুন নামের এক নারী বিষপান করেন। বিষক্রিয়ায় তার তিন সন্তান মারা যায়। পরে যমুনা খাতুনও মৃত্যুবরণ করেন। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছিল কিছুদিন আগে। উপজেলার পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে একই পরিবারের স্বামী বিকাশ সরকার, স্ত্রী স্বর্ণা সরকার ও তাদের মেয়ে পারমিতা সরকার তুষির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মামার সঙ্গে মোটা অঙ্কের ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান ভাগনে। এভাবে একটার পর একটা ঘটনা বলতে থাকলে সে তালিকা শুধু দীর্ঘই হবে। সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও সামাজিক-পারিবারিক সহিংসতার জের ধরে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নারী-শিশু, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, এমনকি স্বনামধন্য সংগীতশিল্পীও বেছে নিয়েছেন মৃত্যুর পথ। সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাটি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, সমাজে কেন এই অস্থিরতা? কেন এই খুন-আত্মহনন? সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হওয়া, অর্থনৈতিক বৈষম্য, হতাশা, অতিরিক্ত ভোগবাদিতা, মাদকের প্রসার, কর্মহীনতা, নৈতিকতার অভাব ইত্যাদি কারণে আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অর্থলিপ্সা মানুষকে হিংস্র করে তুলছে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় অর্থশালীদের পক্ষেই থাকে সবকিছু। আইন, বিচার কোনো কিছুই সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে নয়। ফলে তারা যখন আইনের শাসনের কথা ভাবে, তখন এই পথে যাওয়ার চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় হিসেবে মনে করে। আবার একজন অপরাধী একটা অপরাধ করার পর সেটা ঢাকতে আরো একাধিক অপরাধ করেন- এটাই আমাদের সহজাতপ্রবণতা।

সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অস্থিরতা দূর করা জরুরি। এই অস্থিরতা কারো একার পক্ষে দূর করা সম্ভব নয়। সবার উচিত দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা। দৃষ্টিভঙ্গি বদলালে জীবন বদলে যাবে। তাই নিজেকে বদলাতে হবে। মনের শক্তি অনেক বড় শক্তি। নৈতিক শক্তি তার চেয়েও শক্তিশালী। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি জনশুদ্ধির চেষ্টা করলে দেশে স্থিরতা ফিরে আসবে, আসবে শান্তি। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close