reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ মার্চ, ২০২৪

কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে হবে

একটি দেশের জনসংখ্যার মধ্যে তরুণ জনগোষ্ঠী বেশি হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তরুণদের বিপুল অংশ সম্ভাবনার সুযোগ হিসেবে গণ্য হবে, যদি প্রতিটি কর্মক্ষম মানুষকে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া যায়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাসহ সামাজিক অন্যান্য সূচকের উন্নয়ন হয়।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনশক্তি বেশি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের বিপুল এই জনশক্তিকে এখনই কাজে লাগাতে না পারলে ভবিষ্যতে কর্মক্ষম জনশক্তির সংকট হবে। তখন চাইলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের কাজে পাওয়া যাবে না, বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের (কোনো একটি দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যখন শ্রমশক্তিতে পরিণত হয়) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ জনগণনার হিসাবে ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সের জনসংখ্যা ৬৫ থেকে ৬৬ শতাংশ। এরাই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। ২০৪১ সালের মধ্যে এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে না পারলে উন্নয়নে পিছিয়ে যাবে দেশ। কারণ মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাচ্ছে, কমছে জন্মহার। তখন প্রতি পাঁচজনে একজন বয়স্ক মানুষের বয়স হবে ৬০ বছরের বেশি। ফলে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা তখন কমে যাবে।

সর্বশেষ স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসারস অ্যান্ড স্টাফসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। তাদের মধ্যে নারী ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ জন, যা সরকারি চাকরিজীবীর প্রায় ২৬ শতাংশ। ২০১০ সালে নারী চাকরিজীবীর সংখ্যা ছিল ২১ শতাংশ। দেশে এখন বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৭০ হাজার এবং নারী ৭ লাখ ৮০ হাজার। ২০২২ সালে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ১০ হাজার। বিবিএসের হিসাব সঠিক ধরে নিলেও এক বছরে দেশে ৪০ হাজার বেকার বেড়েছে। বিবিএস ২০২২ সালের জরিপে বলেছে, উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ১২ শতাংশ বেকার। সংখ্যার হিসাবে এটা ৮ লাখ। এরা সবাই স্নাতকোত্তর, চিকিৎসক ও প্রকৌশলী।

বলাবাহুল্য, আগামী ২০ বছরে কোন খাতে কত লোক লাগবে, কোন ধরনের যোগ্যতার লোক লাগবে, সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। ফলে সবাই চাচ্ছে উচ্চ ডিগ্রি নিতে, কিন্তু তা বাস্তবে কাজে আসছে না। আমরা বিদেশে জনশক্তি পাঠাচ্ছি, তাদের কোনো পেশাগত দক্ষতা নেই। ফলে তারা শ্রমিকের কাজ করছেন। তাই তাদের আয়ও কম। তাদের প্রশিক্ষিত করে পাঠাতে পারলে তারা ভালো কাজ পেতেন, রেমিট্যান্সও বেশি আসত।

জিডিপি থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স আহরণ, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড হতে পারে বিরাট সুযোগ। তাই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করে দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করার সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সেজন্য বর্তমান বাজারব্যবস্থায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে সামনে রেখে তারুণ্যকে চাকরির বাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। এ ছাড়া ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে অনেক বাজার সুবিধা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থায় সক্ষমতার জন্য দক্ষতার ভিত্তিতে তরুণদের গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close