শিকদার মো. জিননুরাইন

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দৃষ্টিপাত

কর্মবীর শেখ কবির হোসেন : একটি সাফল্যগাথা

মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্য দিয়ে- বয়সের মধ্যে নয়। কর্মই মানুষকে জাগিয়ে তোলে। শেখ কবির হোসেন এক অসাধারণ কর্মযোদ্ধা। কাজের মাধ্যমে তিনি অমরত্ব লাভ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই যেকোনো কাজকে তিনি অতি আপন এবং জরুরি মনে করেন। তিনি মনে করেন কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। অসম্ভব মেধাবী, চৌকস এই গুণী ব্যক্তিত্ব কর্মজীবনের সূচনালগ্ন থেকে কাজের মধ্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত আছেন।

মহান ৭১-এর এই বীরযোদ্ধার জন্ম ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ সালে বাংলার ইতিহাসখ্যাত টুঙ্গিপাড়ার শেখ বাড়িতে। তিনি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই। তার বাবা খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন, মা রাহেলা খাতুন। তার বাবা স্ব-উদ্যোগে অসাধারণ সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ‘খান সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য ছিলেন। শেখ কবির হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং কর্মজীবনে শুরুতে পরিসংখ্যান ব্যুরো সোনালী ব্যাংক সর্বশেষ বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনে তার চাকরি জীবনের অবসান হয়। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বাবার আদর্শে ব্রতী হয়ে তারই প্রদর্শিত পথে হাঁটতে শুরু করেন। তিনি খুবই পরিণামদর্শী। প্রত্যেক কাজের আগে ভাবেন। কারণ পরে ভাবলে কাজ ভালো হয় না, সফলতা নাও আসতে পারে।

সমাজসেবা ও শিক্ষাবিস্তারের মানসে তার পথচলা শুরু। প্রথমেই সমাজসেবায় স্ব-প্রণোদিত হয়ে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি লায়নস ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের মতো পৃথিবীব্যাপী একটি বড় মাপের সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থেকে দেশ-বিদেশে সমাজসেবা কার্যক্রমের বিস্তার ঘটাতে থাকেন। তিনি জেলা গভর্নর কাউন্সিল, চেয়ারম্যান এবং লায়নস ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক পরিচালক হিসেবে কাজ করে সমাজসেবার ক্ষেত্রকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করেছেন। তিনি লায়ন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন ফাইন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যশিক্ষা সংগঠন ‘হেল্প’র চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, জাতীয় ভোক্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজের মাধ্যমে সমাজসেবায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন। এ ছাড়া তিনি অসংখ্য সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সম্মানিত সদস্য হিসেবে তার গতিশীল ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যে স্ব-উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং জাতীয় পর্যাযে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে শীর্ষপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এই শিক্ষাবান্ধব গুণী ব্যক্তিত্বের শিক্ষার প্রতি দেখা যায় সু-গভীর অনুরাগ। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এ কথা সত্য। তবে গুণগত-বিশ্বমানের সুশিক্ষাই হতে পারে জাতির মেরুদণ্ড। তাই তাকে নিখাঁদ বিরল এক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব বলা যৌক্তিক হবে। শিক্ষার প্রতি অনুরাগী হয়ে নিজে ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাবার নামে খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। বর্তমানে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া তিনি কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত থেকে শিক্ষার মানোন্ননের পাশাপাশি আরো অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক এবং যোগ্য অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

তার কথা ও কাজে অপূর্ব মিল আছে। তিনি যথাসময়ে কাজ শুরু ও শেষ করতে বদ্ধপরিকর। বহুমুখী প্রতিভা এবং অসংখ্যগুণের অধিকারী যেমন প্রবল ব্যক্তিত্ব, অসম্ভব মেধা, প্রখর স্মৃতি শক্তি, দেশপ্রেম, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা, কর্মসম্পাদনে পারঙ্গমতা, ধৈর্য, সময়জ্ঞান, সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী, সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব, সুকৌশল অবলম্বনে দক্ষ, সবার সঙ্গে সদ্ভাব রাখা দক্ষ প্রশাসক শেখ কবির হোসেনের সর্বক্ষেত্রে রয়েছে ব্যাপক পদচারণে যা সর্বজন বিদিত।

বঙ্গবন্ধু ১৯৬০ সালের ১ মার্চ লাইফ বিমা কোম্পানিতে যোগদান করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিমা কোম্পানিতে থেকেই ৬ দফা প্রস্তুত করে ছিলেন এবং সফলতা এনেছিলেন। তাই শেখ কবির হোসেন বিমাশিল্পকে প্রথমে প্রাধান্য দিয়ে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স নামে একটি বিমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। তিনি দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর সভাপতি হিসেবে বহু দিন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিমাশিল্পের প্রচার-প্রসার ঘটিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছেন। তিনি ইন্স্যুরেন্স একাডেমির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান, সিডিবিএলের চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল টি কোম্পানির চেয়ারম্যান, সাবেক পরিচালক ঢাকা এক্সচেঞ্জ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর কবিকো লিমিটেড, কবিকো ফুড লিমিটেড, মাসুদা ডেইরি নিউট্রেশন লিমিটেড ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতার সঙ্গে সফল নেতৃত্বদানের মাধ্যমে দেশের শিল্প তথা ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ ছাড়া তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উচ্চপদে আসীন থেকে দেশসেবায় অগ্রগামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বিজনেস আইকন (মূর্তপ্রতীক) হিসেবে স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছেন।

বয়োজ্যেষ্ঠ এই মহৎপ্রাণ ব্যক্তিত্বের বয়স তার কর্মে প্রভাব ফেলতে পারেনি। অসংখ্য সাফল্য, কর্মনিষ্ঠা আর দায়িত্বশীল আচরণে উৎসাহিত ও অনুপ্রানিত হয়ে তাকে অনেকেই অভিভাবক হিসেবে পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বহু কর্মগুণের অধিকারী এই মহৎ ব্যক্তিত্ব তার অসামান্য নেতৃত্বে ও সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে লায়ন্স ক্লাব অব ইন্টারন্যাশনাল থেকে শুভেচ্ছা দূত পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, লিডারশিপ মেডেলসহ সমাজসেবায় শেরেবাংলা স্বর্ণপদক ২০০০, মানবসেবায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ গবেষণা পরিষদ থেকে স্বর্ণপদক, মানবসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট পুরস্কার ২০১৯ অর্জনসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ২০২৩ সালে রাষ্ট্রীয় বিমা পুরস্কার অর্জন করেন।

দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠলেও শেখ কবির হোসেন তার ঊর্ধ্বে থেকে কোনো পোর্ট ফোলিও ব্যবহার না করে এবং সরকারের কোনো দায়িত্বশীল পদ ধারণ না করে তিনি তার বহুমুখী প্রতিভা, সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব, নিজস্ব ভাবমূর্তি, বিচক্ষণতা, দূর-দর্শিতা, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা ও সব মহলের সঙ্গে সু-সম্পর্কের মাধ্যমে তিনি তার বিভিন্ন স্তরের কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। ২০০৮ সালে টুঙ্গিপাড়া সমিতির সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে বন্দি জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবি করেন।

এ বিশ্ব সভায় মহান আল্লাহ শ্রেষ্ঠজীব মানুষকে প্রেরণ করেছেন মানবতার কলাণ্যে ও মঙ্গলের জন্য। সে সৌভাগ্য সবার হয় না। এ জন্য চাই মেধা-মনন, দেশপ্রেম, সদিচ্ছা, মহৎপ্রাণ, অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং বহুমুখী প্রতিভা, যা শেখ কবির হোসেনের মধ্যে দৃশ্যমান। তাই তিনি সবার কাছে পরম পূজনীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছেন।

লেখক : কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ

ড. ইমদাদুল হক মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ, টুঙ্গিপাড়া

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close