মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী
ধর্মকথা
শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের প্রকোপ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে গরিব-দুঃখীরা বিপদে পড়েছে, তাদের কষ্ট বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অসহায় শীতার্ত মানুষদের সহায়তা করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। তারা বিত্তবানদের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ানোর প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের দানের দৃষ্টান্ত হলো যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হলো এবং তা থেকে সাতটি শিষ উৎপন্ন হয়েছে আর প্রতিটি শিষে রয়েছে ১০০ শস্যকণা। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে চান তাকে প্রাচুর্য দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় জ্ঞানময়। (সুরা বাকারাহ, আয়াত ২৬১)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবে, মহান আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন।’ (মুসলিম) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, বান্দা যেভাবে ভাইয়ের বিপদের সাহায্যকারী হয়েছে, আল্লাহও তার বিপদে দুনিয়া-আখিরাতে উত্তম সাহায্যকারী হবেন। মানবসেবায় নিজেকে সাধ্যমতো উৎসর্গ করা ধর্ম ও মানবিকতার দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানবসেবায় তার ভাইয়ের সঙ্গে চলে, ওই কাজ না করা পর্যন্ত আল্লাহ ৭৫ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তাকে ছায়াদান করেন। তারা তার রহমত ও মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে থাকে। তার প্রতি কদমে একটি গুনাহ মাফ হয় এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।’ (আত তারগিব)
জলীলুল কদর সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখাশোনা করোনি।’ সে বলবে, ‘হে আমার রব! কীভাবে আমি আপনাকে দেখাশোনা করব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল? অথচ তুমি তাকে দেখাশোনা করোনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখাশোনা করতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে? হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাওয়াওনি।’ সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমি আপনাকে কীভাবে খাওয়াব, আপনি তো সৃষ্টিকুলের রব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাওয়াতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে? হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! আপনাকে কিরূপে পানি পান করাব, আপনি তো সব সৃষ্টির রব?’ তিনি বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পানি পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে?’ (মুসলিম)
শীতার্তদের সর্দি-কাশি ঠাণ্ডাজনিত নানা ধরনের রোগব্যাধি আক্রান্ত করছে। অনেকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের অভাবে তারা নিজেরা নিজেদের পরীবার-আত্মীয়স্বজনদের ভালো চিকিৎসা করাতে পারছে না। তাই জরুরি ভিত্তিতে শীতার্তদের প্রয়োজনীয় গরম কাপড়, লেপ-কম্বলসহ ত্রাণ সহায়তা, শুকনা খাদ্যসামগ্রী প্রদান, আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা একান্ত জরুরি। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া করো। আকাশের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (মুসতাদরাক) হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই! মহান আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বোখারি, মুসলিম) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের সেবা ও উপকারের জন্য আল্লাহ কিছু নিবেদিতপ্রাণ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ বিপদে পড়লে তাদের শরণাপন্ন হয়। এসব রহমদিল ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (আত তারগিব)।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে নিজেদের সাধ্য সামর্থ্য অনুসারে শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর, তাদের সাহায্য-সহায়তা করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ,
মিরপুর-০২, ঢাকা
"