আজহার মাহমুদ

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

মুক্তমত

অপসংস্কৃতি নয়, নিজ সংস্কৃতিকে বাঁচান

বিনোদন বলতে আমরা বুঝি আনন্দ কিংবা মনোরঞ্জন। আর এই বিনোদনের একটি সংস্কৃতি আছে। আছে একটা ঐতিহ্য। কিন্তু বর্তমান সময়ের বিনোদন এমন এক পর্যায়ে এসেছে যা আমাদের সংস্কৃতিকে ভূলুণ্ঠিত করে তুলছে। বলতে গেলে আজ আমরা আমাদের বিনোদনের রুচিটাই পাল্টে ফেলেছি। আমাদের বিনোদন এখন মোবাইল নির্ভর হয়ে উঠেছে। আরো সহজভাবে বলতে গেলে, ফেসবুক-ইউটিউব নির্ভর। আমরা এখন অনলাইনে বিনোদন নিই এবং দিই। আজকাল টেলিভিশনও দেখে না আমাদের তরুণরা। কারণ টেলিভিশনে আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে বিনোদনের অনুষ্ঠান হয়। যা আমাদের ভালো লাগে না। আমাদের ভালো লাগে ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম। আমরা ফেসবুকে নোংরা এবং অসামাজিক বিষয় থেকে এখন বিনোদন নিচ্ছি। ফেসবুকে এখন যে পরিমাণ অসামাজিক ভিডিও-ছবি শেয়ার হয় তা রীতিমতো অসভ্যতার পর্যায়ে পড়ে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এখন সেসব দিকেই ঝুঁকছে। আমরা যেসব বিষয় থেকে বিনোদন নিচ্ছি তা থেকে আমাদের ভালো কিছু শেখার না থাকলে মন্দ অনেক কিছুই শেখার আছে।

এখন ফেসবুকে, ইউটিউবে হাতের মুঠোয় পাশ্চাত্যের গান, সিনেমা, সিরিজ দেখা যাচ্ছে। আমরা আমাদের পছন্দের গান শেয়ার করলেও সেসব গানই শেয়ার করি। বাংলা গান, বাংলা সিনেমা, বাংলা কোনো কিছুই আমাদের ভালো রাগে না। আমরা আজ এসব বিষয়ের জন্য ভুলে যাচ্ছি আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। শুধু তা-ই নয়, আমরা অফলাইনের বিনোদন এখন হারিয়ে ফেলছি। মঞ্চ নাটক দেখা, লোকগান শুনা, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্রসংগীতসহ অনেক কিছুই আমরা এখন মুছে ফেলছি আমাদের জীবন থেকে। আমরা হয়তো জানি না আমাদের সংস্কৃতির মূল রূপটি আছে লোকগানে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমাদের কাছে এখন দেশীয় সংস্কৃতির চেয়ে বিদেশি সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখনকার তরুণদের নজরুল সংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, লোকগান সম্পর্কে কিছু বলতে বললে কিছুই বলতে পারবে না। আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলেও সঠিক সংস্কৃতি নিয়ে বলতে পারবে এমন তরুণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

অথচ আমাদের তরুণরা যদি এভাবে আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে না জানে তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের সংস্কৃতি খুঁজে পাবে কি-না তাও সন্দেহ। সেইসঙ্গে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির চর্চা হবে। আজকাল আমাদের ডিভাসইগুলোতে হিন্দি এবং ইংরেজি সিনেমার রাজত্ব চলছে। ভিন্ন সংস্কৃতির কন্টেন্ট দেখা, শুনা নিয়ে আমার তেমন আপত্তি নেই। আপত্তি তখনই যখন নিজ দেশের ভালো কাজকে আমরা উৎসাহ না দিয়ে ভিন্ন সংস্কৃতির কাজগুলো নিয়ে মেতে থাকি।

বুকে হাত দিয়ে আমরা কজন বলতে পারব যে আমরা টেলিভিশন দেখলেও বাংলাদেশি চ্যানেল দেখি! মূলত আমরা ভারতীয় চ্যানেল ছাড়া কিছুই দেখি না। এটা লাজ্জার হলেও সত্য। আমাদের রুচি এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে। আর এই রুচি পরিবর্তন করতে হবে আমাদের নিজেদেরই। নয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমরা হারিয়ে ফেলব আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের নিজ বিনোদন। অপসংস্কৃতিই হয়ে উঠবে আমাদের বিনোদন। আমরা শুধু বিনোদিত হলে তো হবে না, আমাদের বুঝতে হবে এই বিনোদন থেকে আমরা কি শিখতে পারব। বিনোদন মানে শুধু আনন্দ নয়, বিনোদন মানে আনন্দর মাঝে জ্ঞান আহরণ করা। আমরা যদি ভালো কিছু থেকে বিনোদন নিতে পারি তবে কেন আমরা নোংরা বিষয় থেকে বিনোদন নিতে যাব?

তাই আমাদের সংস্কৃতি ঠিক রেখে বিনোদন নিতে হবে সবার। সংস্কৃতির অপচর্চা করে বিনোদন নেওয়া কখনোই ভালো কাজ নয়। আমার দেশের সংস্কৃতি আমার জন্য গর্ব। এই কথাটি মাথায় রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের নিজ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে আমাদের বিনোদন নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। আমাদের সচেতনতাই পারে আমাদের সংস্কৃতি এবং বিনোদনকে টিকিয়ে রাখতে। তাই আসুন আমরা আমাদের সংস্কৃতি থেকে বিনোদিত হই এবং অন্যকে বিনোদিত করি।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close