reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ জুলাই, ২০১৯

গণপিটুনি বন্ধে ব্যবস্থা নিন

আধুনিক চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা নিয়ে যতই বড়াই করি না কেন, এখনো আমাদের সমাজ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। মিথ্যা ও গুজবকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, ততটা যুক্তি ও সুপ্রসূত জ্ঞান দ্বারা তা বিবেচনা করা হচ্ছে না। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। ‘পদ্মা সেতুর জন্য রক্ত ও মাথা প্রয়োজন’Ñ ফেসবুকে এমন গুজব ছড়ানোর পর সারা দেশে ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল পক্ষ থেকে বিষয়টিকে স্রেফ গুজব বলা হলেও এখনো সে আতঙ্ক কাটেনি। যার খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। ছেলেধরা সন্দেহে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে দুই নারীসহ অন্তত পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া একই সময়ে ৯ জেলায় ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধীসহ অন্তত ১১ জনকে মারধর করা হয়েছে। রোববারও নওগাঁয় অন্তত ছয়জনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, প্রায় এক মাস ধরে এ ধরনের গুজবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার প্রেক্ষাপটে ও বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশ এই অপরাধ সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করেছে। পুলিশ সদর দফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণপিটুনি দিয়ে মৃত্যু ঘটানো ফৌজদারি অপরাধ। কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে ‘গণপিটুনি’ না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। এটাই বাঞ্ছনীয়, কারণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াটা অপরাধ ও ফৌজদারি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সন্দেহ নেই, একটি পক্ষ গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। এই অপশক্তি সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রতিপক্ষের সাফল্য মøান করে দেওয়ার অব্যর্থ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত প্রতিটি গুজবের পেছনে একাধিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যুক্ত থাকে, যারা এই গুজবকে কাজে লাগায়। পদ্মা সেতুর জন্য রক্ত ও মাথা প্রয়োজন বলে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলও আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। একটি মিথ্যা গুজব শান্তিপ্রিয় মানুষকে যে কতটা নির্মম করে তুলতে পারে, তার প্রমাণ এরই মধ্যে পাওয়া গেছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত মানুষের তত্ত্বাবধানেও যদি এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে, তবে আমাদের সমাজ কত কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও গুজবে বিশ্বাসী; তা চিন্তা করে শিউরে উঠতে হয়। কেবল যে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ঘটছে, তাই নয়। মাঝে মাঝেই চোর, ডাকাত ও ছিনতাইকারী সন্দেহে বা অন্যান্য কারণেও গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ঘটে।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আইনের প্রতি আস্থাহীনতা ও নৈতিক অবক্ষয় থেকে মানুষ এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে। এসব হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করতে না পারার সুযোগটি কাজে লাগায় অপরাধপ্রবণ লোকরা। এ অবস্থায় কোনো গুজবে কান দিয়ে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা বন্ধ করার জন্য সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত। আমরা আশা করব, দেশের দায়িত্বশীল নাগরিকদের পাশাপাশি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও গণপিটুনিতে হত্যা বন্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close