মোতাহার হোসেন

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৯

মতামত

সম্ভাবনা ও বিস্ময়ের নাম

বাংলাদেশে গত ১০ বছরে যে হারে উন্নয়ন হয়েছে সেই হারে বিশ্বের কোথাও এত স্বল্প সময়ে এ রকম উন্নয়ন সাধিত হয়নি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন, চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ-জ্বালানির নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একই সঙ্গে মানুষের গড় আয়ুু বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, দারিদ্র্য হ্রাস, রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ বৃদ্ধি। জিডিপি প্রায় ৮ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছানো সব মিলিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’। পাশাপাশি বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের দৃষ্টিতে অপার সম্ভাবনা ও বিস্ময়ের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ।

এখন দেশে দৈনিক সর্বোচ্চ ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাড়ে ৩৫ কোটি বই বিতরণ, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে সাড়ে ৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক আর এসব ক্লিনিক থেকে ৩৬ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরের হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিশেষায়িত হাসপাতাল। স্বল্প খরচে রোগীরা এসব বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে পারছে। এ সুযোগ আরো সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। গ্রামীণ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দেশের প্রতিটি গ্রামকে পাকা সড়কের আওতায় আনা হয়েছে। এবার তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমায় আসার আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ নামে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিতে শহরের আদলে শহরের মতো সব সুযোগ-সুবিধাসংবলিত গ্রামকে গড়ে তোলার যে প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে গ্রাম আর শহরের মধ্যে ব্যবধান, পার্থক্য থাকবে না। গ্রামে বসবাসকারীদের জীবন মান শহরের মানুষের সমপর্যায়ে পৌঁছাবে। গ্রামের মানুষ উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন পাবে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশ এবং বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে বাংলাদেশকে। এর ফলে বৈশ্বিক বিভিন্ন সূচকেও বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। কিছু সূচকে ভারতকেও পেছনে ফেলে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অবকাঠামো খাতে যেসব মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে, সেগুলো সম্পন্ন হলে উন্নয়নের এই গতি অনেক বেশি ত্বরান্বিত হবে। আগামী ১০ বছরে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৫ থেকে ৩০তম। এমন গৌরবময় একটি দেশের স্বপ্নই তো দেখেছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের আপামর মানুষ।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে কী ছিল? না ছিল রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, না ছিল গ্যাস ও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ। না ছিল কল-কারখানা, না ছিল সম্পদ। প্রায় শূন্য থেকে যাত্রা করতে হয়েছিল। একেবারে শূন্য অবস্থায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর। তখন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। সেই বাংলাদেশ যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উন্নয়নের পথে যাত্রা করেছিল জাতির পিতার হাত ধরেই। কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সপরিবারে তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় চলে এসেছিল, শুরু হয়েছিল ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, থমকে গিয়েছিল উন্নয়ন। এক দশক আগেও দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াটের নিচে। মূলত এক দশকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যেতে থাকে। আজ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। ২০২৫ সালে তা ৩০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াবে। এর ওপর ভিত্তি করে দেশে ব্যাপক হারে গড়ে উঠছে কল-কারখানা। কর্মসংস্থান বাড়ছে দ্রুত। দারিদ্র্যের হারও কমছে দ্রুততার সঙ্গে। দেশের উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা এখন পুরোপুরি নির্বাসিত। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের স্থান হবে জাদুঘরে। শিক্ষায় আসছে পরিবর্তন। কর্মমুখী শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে। শতভাগ শিশু প্রাথমিক শিক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের কাজ শেষ পর্যায়ে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। উড়াল সেতু, উড়াল সড়ক, চার লেনের রাস্তা, নদী খনন এসবই যোগাযোগ ব্যবস্থায় রীতিমতো বিপ্লবের সূচনা করেছে। সংগত কারণেই বিশ্বব্যাপী আজ চলছে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার গল্প।

সরকারি মহল থেকে বলা হচ্ছে, এবার জিডিপি হবে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। অবশ্য বাংলাদেশের জিডিপির ব্যাপারে বরাবরই রক্ষণশীল হিসাব দেওয়া বিশ্বব্যাংকও তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়ে ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হয়েছে। তাদের মতে, ২০৩৩ সালে বাংলাদেশ হবে ২৪তম দেশ। শুধু অর্থনীতির সূচকেই নয়, সুশাসন-গণতন্ত্রের সূচকেও এগোচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) যে বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচক প্রকাশ করেছে, তাতে চার ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ৮৮তম। বৈশ্বিক লিঙ্গ সমতা সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে (৪৮তম), যেখানে ভারতের অবস্থান ১০৮তম আর পাকিস্তানের অবস্থান তালিকার সর্ব নিম্নে। নানা ক্ষেত্রে অর্জনের এ ধারাবাহিকতা আমাদের ধরে রাখতেই হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যে হারে উন্নয়ন হয়েছে তা যদি সমান্তরাল গতিতে চলে তবে ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে অনেকদূর। এজন্য সদ্য গঠিত চমকের মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিরলস ও নিরন্তরভাবে কাজ করবেনÑ এ প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিগত সময়ের ১০ মেগা প্রকল্পের আশু বাস্তবায়ন জরুরি। তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে সম্মান ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হবেÑ এটা শতভাগ নিশ্চিত। আমরা সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন বুনছি। আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের কান্ডারি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close