সতীর্থ রহমান

  ০৭ এপ্রিল, ২০১৮

বিজ্ঞান

আলোকিত হোক পৃথিবী

বিজ্ঞান শব্দের অর্থ ‘বিশেষ জ্ঞান’। যে বিশিষ্ট জ্ঞান পরীক্ষা ও প্রমাণ দ্বারা নির্দিষ্ট হয়, তাকেই বিজ্ঞান বলে, যা কিছু আমরা অবলোকন করি, তারই মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ দৃষ্টিই জ্ঞান প্রতিষ্ঠার প্রধান উপায়। অতি প্রাচীনকাল থেকে মানুষ তার ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে কোনো ধারণাকে বিশ্লেষণ করেই আবিষ্কার করে বিশেষ কোনো জ্ঞান। মানুষ বিজ্ঞানকে প্রয়োগ করেছে তার নিজের প্রয়োজনে। সভ্যতার সেই শুরুতে বিজ্ঞান মানবজীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। যেমন : মিসরীয় সভ্যতা, গ্রিক ও রোমান সভ্যতা, হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতার সূচনায় দেখা যায় মানুষের চিন্তা-চেতনায় বিজ্ঞানের ধারণার উন্মেষ ঘটেছে। কোনো বিষয়ের সার্বিক তথ্য ও তত্ত্বের সম্যক জ্ঞানার্জনই বিজ্ঞান। বিজ্ঞান এমন এক বিশেষ জ্ঞান, যা পরীক্ষা-প্রমাণ, যুক্তি আর অভিজ্ঞতার দ্বারা নির্ণেয় এবং প্রতিষ্ঠিত। এ জ্ঞানকে অর্জন করেই মানুষ করায়ত্ত করেছে বিশ্ব প্রকৃতিকে। বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি ও প্রকৃতিতে ঘটা ঘটনাবলি সম্পর্কিত জ্ঞান। এ জ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত অথবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত। পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কে সৃষ্ট জ্ঞান ও জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াই হলো বিজ্ঞান। মানুষের প্রয়োজনে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করার জন্য যেসব যন্ত্র, কৌশল উদ্ভাবিত হয়, তাই প্রযুক্তি। আইসিটি হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। অর্থবহ খবরই হচ্ছে তথ্য। বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী বিপ্লব এনেছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের কোনো সীমা নেই। এর দ্বারা প্রায় সবকিছুই সম্ভব। ইন্টারনেট কোনো একক বিষয় নয়, এটি একটি জটিল পদ্ধতি। অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেট বলে। ইন্টারনেট হলো নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কের রাজা। পৃথিবীর যেকেনো জায়গায় ইন্টারনেট চোখের পলকে কোনো তথ্য পাঠিয়ে দেয় বা এনে দেয়।

প্রাথমিক বিজ্ঞান শিখন সামগ্রী, অনুসন্ধানভিত্তিক বিজ্ঞান শিখন। শিখন শেখানো সামগ্রীর মধ্যে পড়ে, ১. পাঠ্যপুস্তক, ২. শিক্ষক সংস্করণ, ৩. শিক্ষক নির্দেশিকা, ৪. শিক্ষক সহায়িকা, ৫. প্রশ্ন পুস্তিকা, ৬. বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা ও ৭. বিজ্ঞান বিষয়ের সূচিপত্র। বিজ্ঞানে প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা, বিজ্ঞান শিখন শেখানোর পরামর্শ। অনুসন্ধানভিত্তিক শিখনের বৈশিষ্ট্য, শিখনের ধাপসমূহ, উদ্ঘাটন, অনুসন্ধানমূলক কাজ, শিক্ষক নির্দেশিত অনুসন্ধান। শিক্ষার্থী পরিকল্পিত অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ, পরিমাপকরণ, শ্রেণিকরণ, পূর্বানুমান, সম্ভাব্য ব্যাখ্যাদান, ফল প্রকাশ, পরীক্ষণ, অনুমিত সিদ্ধান্ত, বদ্ধ প্রশ্ন, উন্মুক্ত প্রশ্ন, কার্যকর প্রশ্ন, নমুনা প্রশ্ন। যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়ন কৌশল, প্রশিক্ষণের মূল্যায়ন ও সমাপনী অধিবেশন। আবার পাঠ পরিকল্পনার ধাপসমূহের মধ্যেÑশিরোনাম, পাঠ্যাংশ, শিখনফল, আবেগসৃষ্টি, উপস্থাপনের ধাপ, শিখন-শেখানো কার্যাবলি, মূল্যায়ন, শিক্ষকের কাজ, শিক্ষার্থীর কাজ অন্যতম। শ্রেণি কার্যক্রমের সূচনা/প্রস্তুতি/নিরাপদ পরিবেশ ও আবেগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পাঠের উপযোগী করতে কিংবা পাঠের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে পাঠের শুরুতে নানা ধরনের কৌশল ব্যবহার করা হয়। উপস্থাপন/শিখন শেখানো কার্যাবলিই হচ্ছে মূলত সক্রিয় কার্য সম্পাদনের মূল প্রক্রিয়া। পাঠের জন্য বরাদ্দ মূল সময়টা এখানেই ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি মূল্যায়ন শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিজ্ঞান শিক্ষার লক্ষ্য একটি উদ্দেশ্য ১৩টি। প্রাথমিক বিজ্ঞান শিক্ষাক্রম প্রণয়ন প্রক্রিয়া, প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ের প্রান্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ, প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ের শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা চিহ্নিতকরণ, বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনফল চিহ্নিতকরণ, বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু নির্ধারণ, শিখন শেখানো ও মূল্যায়ন, কৌশল নির্ধারণ ও সুপারিশকরণ, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন। বিজ্ঞান মজার বিষয়। বিজ্ঞান পাঠকে কীভাবে আনন্দদায়ক করা যায়? ক্লাসে রস দিতে হবে। বিজ্ঞান ক্লাসে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখাতে হবে। বিভিন্ন ধরনের শিখনসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষক সংস্করণ অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে। কোনো একটি পাঠ শেষে শিক্ষার্থী কী জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবে সে সম্পর্কে পূর্বনির্ধারিত, সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট বাক্য হলো শিখনফল। প্রাথমিক স্তরে প্রায় তিন হাজার শিখনফল রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা ১৮টি ও প্রান্তিক যোগ্যতা ২৯টি।

বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অজানার সন্ধান। বিজ্ঞানকে মানুষ প্রয়োগ করতে শুরু করেছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি মুহূর্তে। জলে-স্থলে-মহাশূন্যে জগতের সর্বত্র আজ বিজ্ঞানের জয়জয়কার। পৃথিবী আজ ছোট হয়ে আসছে শুধু বিজ্ঞানের কল্যাণে। মানুষ এখন মহাকাশ জয় করে মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের চিন্তা করছে। রোবট বা যন্ত্রমানব অসাধ্য সাধন করছে। কম্পিউটার মানুষের সামনে এক অজানা জগতের সিংহদ্বার খুলে দিয়েছে। মানুষ যত অগ্রসর হচ্ছে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ততই বিস্তৃতি লাভ করছে। মানুষ চায় ভবিষ্যতে পৃথিবী আরো উন্নত হবে। বিজ্ঞানের দ্বারাই ঘটবে পৃথিবীর উন্নতি। সে উন্নত পৃথিবীর ফল ভোগ করবে মানুষ। মানুষের সুখ-শান্তিÍ ও সমৃদ্ধি বিজ্ঞানই বাড়িয়ে তুলবে। বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন করে সমগ্র বিশ্বে এক মহা-আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ ও বন্ধ করতে হবে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের ফলে মানুষের কিছু অকল্যাণ ঘটছে। এটম বোমা মুহূর্তে পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ফোন, ফেসবুক, ইন্টারনেট, প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানের বদৌলতে পৃথিবীতে মহা-অকল্যাণ নেমে আসতে পারে। বিজ্ঞান এখন উন্নতির চরম শিখরে। ভাঙাগড়া প্রকৃতির খেলা। মানুষই একদিন পৃথিবী ধ্বংসের কারণ হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন কাজকে করে তোলে সহজ। আবার কখনো তা নিত্যকাজে ব্যাঘাতও ঘটাতে পারে। প্রযুক্তিকর্মীদের উদ্ভাবনী চিন্তায় যে এ প্রযুক্তিই ব্যাঘাত ঘটায়, এ নিয়ে সম্প্রতি এক জরিপের ফল প্রকাশ করেছে মাইক্রোসফট করপোরেশন। ই-মেইল, খুদেবার্তা ও নোটিফিকেশন প্রায়ই কাজের ব্যাঘাত ঘটায়। আর এ সমস্যাকে ‘টেকনোস্ট্রেস’ নাম দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে দূরে থাকার কোনো উপায় নেই। যোগাযোগের জন্য এর ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু কীভাবে এর সঠিক ও ফলপ্রসূ ব্যবহার করা যাবেÑএর শিক্ষা থাকা উচিত কর্মীদের। সৃজনশীলতা থেকে উদ্ভাবনী চিন্তা আসে। আর তাই কম্পিউটারের সামনে বসে যন্ত্র হয়ে যাওয়ার কিছু নেই, সেটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার প্রয়োজন।

আমরা বিজ্ঞানের যুগে বাস করছি। আধুনিক যুগ জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান ছাড়া আধুনিক সভ্যতা অচল। পানি, মাটি ও বাতাস বাদ দিলে যেমন জীবনের কাজকর্ম স্তব্ধ হয়ে যায়, বিজ্ঞানকে বাদ দিলেও তেমনি সভ্যজগৎ প্রাণহীন ও নিষ্পন্দ হয়ে পড়ে। এযুগে প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদক্ষেপে, সভ্য মানুষ বিজ্ঞানের কাছ থেকে রসদ আহরণ করে জীবন ধারণ করছে। বিজ্ঞানের অবদানে আমাদের জীবন হয়েছে সহজ, সুন্দর আর উপভোগ্য। বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আমাদের অস্তিত্ব প্রায় বিপন্ন হয়ে যাবে। যে দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে যত এগিয়ে, সে দেশ তত উন্নত। তাই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদেরও বিজ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত হতে হবে। বিজ্ঞানচর্চার প্রথম ধাপই হলো বিজ্ঞানকে ভালোবাসা। বিজ্ঞানের ব্যবহারকে করতে হবে জীবনমুখী। বিজ্ঞানকে করতে হবে আমাদের জীবনের প্রগতির বাহন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন আবিষ্কার মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হোক। পৃথিবীতে হিংসা-হানাহানি, রক্তপাত, যুদ্ধবিগ্রহ ও জঙ্গিবাদের উত্থান বাড়ছে। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। আমরা সৃজনশীল, তথ্যসমৃদ্ধ ও বিজ্ঞানমনস্ক হই। অজ্ঞতা, কুসংস্কার, কূপমূকতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে দূরে থাকি। আমরা বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হই। বিজ্ঞানের সুফল পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ূক। বিজ্ঞানের জয় হোক-এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : প্রাবন্ধিক, শিক্ষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist