সিস্টেম লসে দুই সিটি
২৯ বছরেও ঘুম ভাঙেনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের। এ যেন কুম্ভকর্ণকে হার মানানোর চেয়েও বেশি। যখন এ ধরনের সংবাদ কানে আসে, তখন দিগি¦জয়ী বীর আলেকজান্ডারের কথা মনে পড়ে। তিনি ভারতে বসবাসরত মানুষ এবং প্রকৃতির বিচিত্রতা দেখে বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন, ‘কী বিচিত্র এ দেশ সেলুকাস!’ সম্ভবত নানান আকৃতির, প্রকৃতির এবং নানান বর্ণ ও স্বভাবের মানুষ দেখে আলেকজান্ডার বিস্মিত হলেও এ দেশের মানুষকে তা স্পর্শ করতে পারেনি। স্পর্শ করতে পারেনি বলেই কোনো কিছুতেই এখানকার মানুষ বিস্মিত হন না। বিস্মিত করার মতো কাজ এরা অহরহ কাজ করাতেই এরা অভ্যস্থ। আর অভ্যস্থ বলেই এমন কোনো কাজ নেই যে, তারা তা করতে পারেন না। তা সে ভালোই হোক কিংবা খারাপ। একাধারে এরা নোবেলজয়ী হয়ে যেমন দেখাতে পারেন, পারেন দুর্নীতিতে শ্রেষ্ঠ হতেও।
কিছুদিন আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন ছিল অখন্ড। এখন দ্বিখন্ডিত (উত্তর ও দক্ষিণ)। খবরে প্রকাশ, ঢাকা সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং নম্বর ২৯ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পুনর্নির্ধারণ হয়নি। এর ফলে প্রতিবছর ৪০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ)। স্বাভাবিক কারণে প্রশ্ন উত্থাপিত হতেই পারে, কেন এই গাফিলতি! এতকাল এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হতে দেখা যায়নি। অনেকের মতে বিষয়টিকে ইচ্ছাকৃতই হিমাগারে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। তবে জবাব থাক আর না-ই থাক, করপোরেশন রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিবছর ৪০০ কোটি টাকা। এ টাকার দায় কে নেবে?
দায় বহনের জন্য লোক খোঁজা হলে তখন আর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাই এ দেশ ও সমাজের বিচিত্রতা। ঢাকার সামগ্রিক চিত্রের কম উন্নয়ন হয়নি। বেড়েছে নাগরিক সেবা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নাগরিক সেবার ব্যয়। কেবল বাড়েনি হোল্ডিং ট্যাক্স। ট্যাক্সের তালিকায় যুক্ত হয়নি অসংখ্য ভবন। আর পুরনো ভবনের মালিকরাও ট্যাক্স দিচ্ছেন পূর্বের নির্ধারিত হারেই। ফলে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে করপোরেশন। দীর্ঘ সময় ঢাকা শহরের আয়তন বেড়েছে, ভবনের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু হোল্ডিং নম্বর সেভাবে বাড়তে পারেনি। বাড়তে পারেনি কর্মকর্তাদের অনৈতিক ভোগবাদী লালসা এবং ইচ্ছাকৃত গাফিলতির কারণে। আমরা মনে করি, বিষয়টির একটি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সমাধান হওয়া দরকার। এ ধরনের অনৈতিক আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টিকে আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখতে পারে। আর এটাই প্রতিটি বিবেকবান মানুষের প্রত্যাশা।
"