বিপর্যয় মোকাবিলায় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্পের প্রচ- ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। যেকোনো সময় নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। কারণ, বাংলাদেশ অবস্থান করছে ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং মিয়ানমারের টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে। ভারতীয় ও ইউরেশীয় প্লেট দুটি উনিশ শ চৌত্রিশ সালের পর থেকে দীর্ঘদিন হিমালয়ের পাদদেশে আটকে আছে, অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নড়াচড়া বা ভূমিকম্পের। বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থান করছে যে ইন্দো-অস্ট্রেলীয় প্লেট, সেটিও প্রতি বছর ৪৫ মিলিমিটার করে ইউরেশীয় প্লেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর তাই যত দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশে ভূমিকম্পের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ভূমিকম্প আঘাত হানলে ১৪ কোটি মানুষের জীবন বিপদের মুখে পড়বে। ২০১৬ সালে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনেও এ আশঙ্কা ব্যক্ত বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতি এতটাই ভয়াবহ হতে পারে যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়তো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
ভূ-বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানী ঢাকার ৬৫ শতাংশ এলাকা ভবন নির্মাণের উপযোগী নয়। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল ভবন। এ ক্ষেত্রে রাজউকের উচিত ঢাকা মহানগরীসহ আশপাশের এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সেগুলোর সংস্কার করা। আর যেগুলো সংস্কার করা সম্ভব নয়, সেগুলো অবিলম্বে ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করা। এমনকি নতুন ভবনগুলোর নির্মাণকাজেও সঠিকভাবে তদারকি করা উচিত। কিন্তু রাজউক এসব কাজ সঠিকভাবে করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে প্রতিমুহূর্তে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে মানুষ। তবে ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয় থেকে তাদের জানমাল রক্ষায় সরকারের উচিত কোনো ধরনের হেলাফেলা না করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গত রোববার রাজউক আয়োজিত ভূমিকম্পবিষয়ক এক সেমিনারেও এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সেখানে সরকারের দায়িত্বপূর্ণ মন্ত্রীসহ উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। তারা বলেন, ঢাকায় রিক্টার স্কেলে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে, তা মোকাবিলা করা অত্যন্ত দুরূহ হবে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আমরা জানি, সরকার ইমারত নির্মাণ বিধিমালা হালনাগাদ করেছে এবং শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে বাড়িঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করা হলে তা ভূমিকম্প সহনীয় হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজউকের অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করা হয়। নতুন বাড়িঘরে ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজউককে ভবন ব্যবহার সনদ বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের বিষয়ে আরো কঠোর হতে হবে।
রাজধানীতে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে গ্যাসলাইন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গ্যাসলাইন ভূমিকম্পের সময় বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। বারবার সতর্কতার পরও কোনো তরফ থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয় হচ্ছে না। তবে, এই উদাসীনতার বেড়াজাল থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব ন।
"