আবু ছাকিব মো. নাজমুল হক, ফেনী সরকারি কলেজ

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

আনন্দ ভ্রমণে ফেনী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগ

I can’t rast from travel, I will drink life to the less’ কথাটি বলেছেন ইংরেজি সাহিত্যের কবি আলফ্রেড টেনিসন। মানুষ ভ্রমণ করে, ঘুরে বেড়ায় দেশ-বিদেশ। দেখে স্রষ্টার সৃষ্টি, দেখে আকাশ-বাতাস আর উপভোগ করে সৌন্দর্য। তবে আমি সম্ভবত ভ্রমণপিপাসুদের কাতারে পড়ি না, ভ্রমণে তেমন একটা নেশা আছে এটাও হলফ করে আমার পক্ষে বলা মুশকিল। কিন্তু কলেজের ডিপার্টমেন্ট থেকে আনন্দ ভ্রমণ হবে আর আমি থাকব না। এটা মানা যায় না। এ নিয়ে তিনবার ডিপার্টমেন্টের ছোট-বড় সহপাঠীদের নিয়ে ভ্রমণ করেছি। আমাদের এবারের গন্তব্য ছিল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল, বান্দরবানের মেঘলা এবং পাহাড়ি কন্যাখ্যাত নীলাচল।

সকাল নয় তখন ভোর ৫টা। বন্ধুর কল শুনেই চোখ দুটি খুলে গেল। এরপর প্রস্তুত হয়েই পৌঁছে গেলাম কলেজগেটে। তখন ৬টা ১০। একে একে হাজির হতে লাগল ভ্রমণের সদস্যরা। উপস্থিত হলেন আমাদের পথপ্রদর্শক বিভাগীয় প্রধান মো. মোস্তাক হোসেন, সহকারী অধ্যাপক শিহাব উদ্দিন এবং সহকারী অধ্যাপক এবং আমাদের ট্যুর আয়োজনের আহ্বায়ক মো. মাহফুজ উদ্দিন।

এবার যাত্রা শুরুর পালা। সকাল ৭.১৫ আমাদের ৭০ জনের বহর নিয়ে কলেজগেট থেকে ছাড়ে দুটি বাস। আমি ছিলাম দ্বিতীয় বাসে। সেই বাসে ছিল ২০১৯-২০, আমরা ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীরা। ফেনীর আঞ্চলিক সড়ক পার হয়ে যখন বাসের যাত্রা শুরু হলো মহাসড়কে তখনই শুরু হলো বাসের ভেতর আমাদের হই-হুল্লোড়। সবাই গা ভাসালো উন্মাদনায়। এরই মাঝে ৮.৩০ নাগাদ বাসেই বিতরণ করা হয় সকালের নাশতা। নাশতা হিসেবে ছিল খিচুড়ি। নাশতা শেষে এবার সবাই মাতলো গানের সুরে। গিটার আর খমকের তালে গলা ছেড়ে গান ধরলো সবাই। এভাবেই আমরা পৌঁছে যাই আমাদের প্রথম গন্তব্য পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। সময় তখন সকাল ৯.৩৫। এবার আমাদের সমুদ্র বিলাসের পালা, সবাই যার যার মতো ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্রের নোনাপানির সৌন্দর্যে মিশে যেতে। কেউবা হাটে খালি পায়ে বালুকাময় সৈকতে। কেউবা ব্যস্ত হয়ে পড়ে সুন্দর সময়কে ফ্রেম বন্দি করতে। ১০.২০-এ আমরা আবার যাত্রা শুরু করি আমাদের পরবর্তী গন্তব্যে। এবারের যাত্রার শুরুতেই আমরা পেয়ে যাই নবনির্মিত সৌন্দর্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল, বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা যে স্মার্ট বাংলার পথে এগিয়ে গেছে অনেকদূর তা আমাদের চর্ম চক্ষুর সামনে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে তখন। টানেল পার হওয়ার পর সবার জন্য ছিল আনন্দ খাবার। অর্থাৎ চাটনি, চকলেট, সেন্টারফ্রুট, ডালমুট ইত্যাদি।

পতেঙ্গা বিরতিতে আমাদের বাসে আসেন আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রাণ, আমাদের ডিপার্টমেন্টের সুর সবার প্রিয় মাহফুজ উদ্দিন স্যার। টানেল পার হওয়ার পর বান্দরবান পৌঁছা পর্যন্ত স্যারের গলার সুরে মেতে ছিল পুরো বাস। আমাদের এনার্জি কমলেও কমেনি স্যারের এনার্জি, পুরোটা বাসে দাঁড়িয়ে থেকে গান করে আমাদের উৎসাহ দিয়ে মাতিয়ে রেখেছেন। আসলে স্যারের সুর ছাড়া আমাদের সব আয়োজনই অসম্পূর্ণ। দুপুর ১২.১০-এ আমরা পৌঁছে যাই বান্দরবানের মেঘলায়। সবাই একসঙ্গে ঢুুকে পড়ি মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে। একজনের এন্ট্রি ফি ছিল ৫০ টাকা করে। পাহাড়ে ঘেরা মেঘলার সৌন্দর্য আত্মস্ত করা শেষ হয় আমাদের প্রায় ২.২০-এর দিকে। এরপর সবাই একসঙ্গে পাঁচ মিনিট বাস ভ্রমণ করে চলে আসি বান্দরবান শহরে। সেখানেই হয় আমাদের মধ্যাহ্নভোজ। খাবার মেন্যুতে ছিল সাদা ভাতের সঙ্গে সোনালি মুরগি, ডাল ও সবজি। পানিসহ এই প্যাকেজটির দাম রেখেছিল ২১০ টাকা করে। যদিও খাবারের মান মোটামুটি ছিল। আমরা বান্দরবান মডেল থানার সামনে তাজিং ডং রেস্টুরেন্টে আমাদের দুপুরের খাবারের পর্ব শেষ করি। এবার যাওয়ার পালা আমাদের ভ্রমণের শেষ গন্তব্য পাহাড়ি কন্যা নীলাচলে। তবে এবার আর বাস নয়, আমরা নীলাচলের পথ ধরেছি পাহাড়ি যানবাহন চান্দের গাড়িতে করে। এটি ছিল আমাদের সবার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। গাড়ির ওপরের অংশ দিয়ে মাথা বের করে বাতাসের বিপরীতে দ্রুতবেগে পাহাড়ের দিকে ছুটে চলার অনুভূতিটা অসাধারণ। ৩.৩০ নাগাদ আমরা পৌঁছে যাই নীলাচলে। ৫টি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করা হয়েছিল আমাদের জন্য। প্রতিটিতে ১৪ জন করে যাওয়া যায়। প্রতিটি গাড়ি টোলসহ ১১২০ টাকা করে ভাড়া নিয়েছে। নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রের এন্ট্রি ফিও নিয়েছে ৫০ টাকা করে।

নীলাচলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, প্রতিটি ভ্রমণকারীর মন ছুঁয়ে যাবে নীলাচল। মেঘের সঙ্গে আমরা, দেখতেই মন জুড়িয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে চারদিকে পাহাড়ের দৃশ্য এক অন্যরকম অনুভূতি জাগিয়েছিল মনে। আমরা আমাদের এই আনন্দ ভ্রমণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটা নীলাচলের সৌন্দর্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছি। আমার সঞ্চালনায় সেখানে গান করেন মাহফুজ উদ্দিন স্যার, আকবর, মাধব, আবৃত্তি করেন নেয়ামতুল্লাহ এবং নাচ দিয়ে সবার মন মাতিয়ে তুলে সাওজিয়া, রাইসা এবং তাদের পুরো টিম। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয় আমাদের র‌্যাফেল ড্র। যেখানে দশজনকে পুরস্কৃত করা হয়। এখানেই শেষ হয় আমাদের ভ্রমণ। এবার ফেরার পালা।

আবার চান্দের গাড়িতে করে আমরা বান্দরবান শহরে আসি। এবং সেখান থেকে বাসে উঠে ৬.৪৫ নাগাদ আমরা রওনা দিই বাড়ির পথে। বাসে উঠেই সবাইকে দেওয়া হয় সন্ধ্যার নাশতা। ছিল কলা, কেক, বরই এবং পানি। ফেরার ক্লান্ত শরীর যে বসে থাকবে এমনটি মোটেই নয়। কিছুক্ষণ সবাই বিশ্রাম নিলেও পরক্ষণেই শুরু হয় হই-হুল্লোড় এবং স্যারের সঙ্গে সুর মেলানোর চেষ্টা। এভাবেই আমাদের ফেরার সময়টাও আনন্দময়তায় কেটেছে। ফেরার পথে গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে ছিল আমাদের আধাঘণ্টার যাত্রাবিরতি। সন্ধ্যার নাশতাতেই আমরা থেমে থাকিনি। সবার জন্য ছিল রাতের নাশতাও, রাত ১০টা নাগাদ সবাইকে দেওয়া হয় বনফুলের চিকেন পেটিবার্গার, মিস্টি, কেক এবং পানি। যার খরচ পড়ে প্রায় ১১০ টাকার থেকে একটু বেশি। এভাবে হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকতে থাকতে আমরা ১২.৩০ নাগাদ পৌঁছে যাই কলেজের সামনে। এবার সবাই ছুটে যায় নিজের আপনালয়ে।

এত সুন্দর একটা আয়োজন উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আমাদের বিভাগীয় প্রধান মো. মোস্তাক হোসেন স্যার, শিহাব উদ্দিন স্যার এবং মাহফুজ উদ্দিন স্যারকে এবং অসংখ্য ধন্যবাদ ট্যুর আয়োজক কমিটিকে যাদের পরিশ্রমে এত সুন্দর একটা ট্যুর সবাই উপভোগ করল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close