reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ মার্চ, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় স্বাধীনতা দিবস

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ফলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয়েছিল ৯ মাসব্যাপী স্বাধীনতার সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। তরুণ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা দিবস এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। প্রেরণা জোগায় নিষ্ঠার পথে নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার। এটি শুধু একটি দিবস হিসেবে নয়, নবীন জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার শপথে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করার দিন হিসেবেও অনন্যসাধারণ। এর বিস্তৃতিতে বদলে যায় জীবনের গতিপথ, নতুন শপথ নেওয়ার সাহস জোগায়। এ কারণে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম। মহান স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা, প্রত্যাশা ও মতামত জানাচ্ছেন মো. জুবাইল আকন্দ

স্বাধীনতা ও আমাদের করণীয়

স্বাধীনতা শব্দটি একটি আবেগের নাম। যে আবেগে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লেপ্টে আছে। তবে এই মহানন্দের নেপথ্যের ঘটনা তেমনই অভাবনীয়, বিভীষিকাময়, লোমহর্ষক ও সংগ্রামের ঘটনা, যা জাতির পিতার ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সূচিত ৯ মাসের সুতীব্র যুদ্ধ। লাখো বোনের ভাই, নববধূর স্বামী আর মায়ের ছেলের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ মহানন্দ। এতে আমার অগণিত বোনের ইজ্জতকে বলপূর্বক দখল করে প্রাণনাশ আর নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ সৃষ্টি করে একে একে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও কম না। আর ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা ভোগ করছি। বর্তমান সরকার অনন্য প্রচেষ্টায় এই দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ করে তুলেছেন। শুধু সরকার নয়, দেশকে আরো সমৃদ্ধ করতে রয়েছে সবারই দায়িত্ব ও কর্তব্য। তার মধ্যে একটি হলো শতভাগ নাগরিক শিক্ষিত হওয়া। তা হলেই স্বাধীনতা প্রকৃত অর্থবহ হবে। পাশাপাশি সর্বস্তরে মননশীল বা উচ্চতর শিক্ষিত লোকই শুধু জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে স্বদেশ আরো প্রগতিশীল হবে। বিশেষত আমাদের সবাইকে নিরেট অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে হবে। এ ক্ষেত্রে নজরুলের চেতনার মতো চেতনাকে ধারণ, লালন ও বহন করলেই অনন্য উৎকর্ষ হবে বলে আমার বিশ্বাস। অতঃপর কথিত শ্রেণি বা বিভাজন করা জাতপাতের ঊর্ধ্বে থেকে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যথার্থ সম্মান প্রদর্শন হবে।

মুহম্মদ রাসেল হাসান

শিক্ষার্থী, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ

২৬ মার্চ তারুণ্যের এক জাদুকরী অনুপ্রেরণা

২৬ মার্চ হচ্ছে আমাদের জাতীয় জীবনের এক অতি আনন্দের ও গৌরবের দিবস। দীর্ঘ সময় ধরে একটি জাতি নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে সমস্ত বাঙালি মুক্তির রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলার মানুষ আজ নিজ দেশের মাটিতে সুখের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে। ২৬ মার্চ বাঙালিদের এক অদম্য মনোবলে উৎসাহিত করেছিল মুক্তির সংগ্রামে। আজ সবার স্বপ্নের মাতৃভূমি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার ভিত্তি অনেক পুরোনো তবে এই দিনটি ছিল ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শুরু, যার সমাপ্তিতে আমাদের বিজয় আসে। ২৬ মার্চের সেই অনুপ্রেরণা বাঙালিদের হৃদয়ে এখনো বিরাজমান। ২৬ মার্চ তারুণ্যের এক জাদুকরী অনুপ্রেরণা।

আব্দু শুক্কুর বিজয়

শিক্ষার্থী, বাকলিয়া সরকারি কলেজ

ইসলামের আলোকে স্বাধীনতার তাৎপর্য

স্বাধীনতা নিছক কোনো শব্দ নয়, স্বাধীনতা যে কত বড় নিয়ামাত তা পরাধীন ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে পারেন। ফিলিস্তিনিদের ওপর সংগঠিত হওয়া নির্মম অত্যাচারের করুণ চিত্র দেখলে স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ডের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, প্রত্যেক মানবসন্তান স্বভাবজাত ধর্মের ওপর জন্মগ্রহণ করেন। (বোখারি : ১৩৫৮) মানুষের মাঝে স্বাধীনতার যে চাহিদা বিরাজমান আল্লাহ তা পূরণের অধিকারও দিয়েছেন ন্যায়সংঘতভাবে। স্বাধীনতা রক্ষা ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, এক দিন ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেওয়া পৃথিবী ও তার অন্তর্গত সবকিছুর চেয়ে উত্তম। (তিরমিজি : ১৬৬৭) ১৯৭১ সালে আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা অনেক জান-মাল ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত। এই অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কালোবাজারি, চোরাচালান, ঘুষ ও দুর্নীতি সব অপকর্মের বিরুদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে। প্রত্যেকের ন্যায়ের পক্ষে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়। স্বাধীনতা অর্জন-পরবর্তী স্বাধীনতা রক্ষায় এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় প্রতিটা মানুষ পরস্পর মিলেমিশে স্বাধীনতা রক্ষায় এগিয়ে আসুক। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার প্রত্যয় গড়ুক, সেই সঙ্গে সব অন্যায়ের অবসান হোক এটাই আমার প্রত্যাশা।

তৈয়বা খানম

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

শহীদের আত্মত্যাগ সার্থক হোক

কাহলিন জিবরান বলেছেন, ‘স্বাধীনতা ছাড়া একটা জীবন মানে আত্মা ছাড়া শরীর।’ এই স্বাধীনতা নামক আত্মাকে ফিরে পেতে মূল্য দিতে হয়েছে ত্রিশ লাখ বাঙালির রক্ত দিয়ে। রক্তস্নাত হয়ে এই সবুজ শ্যামল বাংলা পেয়েছিল স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা তখনই সার্থকতা পাবে, যখন বাংলার মানুষ পেটভরে খেতে পারবে, পড়তে পারবে, মন খুলে হাসতে পারবে, মুক্তকণ্ঠে কথা বলতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সব দুঃখের অবসান হবে।’ তাই এই স্বাধীনতা যেন শুধু ২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোতেই যেন আবদ্ধ না থাকে। এই স্বাধীনতা আমাদের বাঙালির কাছে অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতাকে ধারণ করতে হবে, অনুভব করতে হবে, এর সুফলতা ছাড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। তখনই আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।

নাদিয়া সুলতানা

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

সাহসী চেতনার ২৬ মার্চ

আঁধারের মাঝে এলো নতুন এক আলোর দিশা, স্বাধীনবাংলা ঘোষিত হলো ঘুমের ঘরে প্রাণ দিলাম মোরা। ঠিক এভাবেই অন্ধকারাচ্ছন্ন বিদঘুটে রাতে পিশাচদের কালো হানায় প্রাণ দিতে হয়েছে আমার দেশের শত শত নিরীহ মানুষদের। পরের দিনের ভোর সকালে ওঠার প্রত্যাশা নিয়ে ছোট্ট শিশুসহ, শত শত মানবতার ফেরিওলারা ঘুমাতে গেলেও ২৫ মার্চের মধ্যরাতে সে স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে তাদের। ২৬ মার্চ সকালে রক্তমাখা নিথর দেহ পড়েছিল নিজ গৃহে, ছাত্র, শিক্ষক, নেতাসহ আরো কত নিষ্পাপ প্রাণের। কিন্তু এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে উপহার পেয়েছি গোটা একটা স্বাধীন বাংলা। পিশাচদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশ মাতাকে প্রকাশ্যে এনেছিল বুক ভড়া রক্ত দানের মাধ্যমে। ২৫ মার্চের মধ্যরাতে ঘটে যাওয়া পৈশাচিক থাবায় দমে যায়নি বাংলার সন্তানরা।

২৬ মার্চ তাই শোকের। ২৬ মার্চ তাই শোকের বিনিময়ে পাওয়া গৌরবের। ২৬ মার্চ নিজ দেশমাতাকে স্বাধীন হিসেবে দেখার মতো আনন্দের। এই দিন মনে করায় বীর বাঙালিদের ঐক্যের কথা। জানান দেয়, অদমনীয় সাহসী যোদ্ধাদের আমরণ লড়াইয়ের কথা।

তানজিলা রুমা

শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close