ইসরাত জাহান, বাকৃবি

  ১১ জানুয়ারি, ২০২৪

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাই মূল বিষয় ছিল তুষারের

সম্প্রতি প্রকাশিত ৪৩তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট) ক্যাটাগরিতে ২য় স্থান অর্জন করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মো. তুষার ভূঁইয়া। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে লড়াই করেছেন টিকে থাকার জন্য। দেশব্যাপী লাখো প্রতিযোগীকে পিছু হটিয়ে অর্জন করে নিয়েছেন নিজের অবস্থান। বাস্তবতা বলতে তিনি বোঝেন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা, লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণে অটল থাকা। আজ শুনব তুষারের স্বপ্ন জয়ের কাহিনি। 

তুষারের জন্ম নরসিংদীর বেলাব উপজেলায়। তার বাবা মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া, মা মোক্তেজা বেগম। ২০১৩ সালে নরসিংদীর হাড়িসাংগান উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তুষার। স্কুল-কলেজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার গোলকধাঁধা তাকে পৌঁছে দেয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে বাকৃবির কৃষি অনুষদে ভর্তি হন তিনি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নতুন এক লড়াইয়ের সম্মুখীন হন তুষার। এ লড়াই হলো চাকরির মাঠে নিজের অবস্থান শক্তপোক্ত করার লড়াই। বেছে নিলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত পেশা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) নিজের নাম তালিকাভুক্ত করার লড়াই। শুরু করলেন কঠোর সাধনা। নিজের কঠোর সাধনা আর প্রস্তুতির দিনগুলো নিয়ে তুষারের স্মৃতিচারণের ভাষ্য ছিল এ রকম, ‘আজকের এই ফলাফলের পেছনের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি সময়ে নতুনভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা এবং মানিয়ে চলাটা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার ওইসব লড়াইয়ের সমষ্টি আজকের এই বাস্তবায়িত স্বপ্ন, একটি ক্যাডার অর্জন। সারা জীবন মনে রাখার মতো কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গর্ব করে বলার মতো এই যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপ আমাকে প্রতিনিয়ত শিখিয়েছে আর একটু একটু করে তৈরি করেছে। আমার কাছে মনে হয় বিসিএস একটি সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রম যেখানে ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমসাময়িক সময়ের দেশপ্রবাহ কিংবা বিদেশনীতির কিছুটা হলেও আঁচ করা যায়। কথা বলা থেকে সুরে সুর মিলানোর মতো করে প্রস্তুত করা হয় প্রতিটি পরিক্ষার্থীকে।’ 

স্বপ্ন দেখা যতটা সহজ বাস্তবায়ন করা ততটাই কঠিন। গুরুজনদের এমন মনোভাবের আবেশটুকুও পাননি তুষার। তার এই কঠিন সময়ে পাশে পাওয়া সহযোগীদের নিয়ে তুষার বলেন, ‘বিসিএসের এত এত অনিশ্চয়তা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাটাই মূল বিষয় ছিল আমার কাছে। হলে থাকার সুবাদে আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল, যারা সব সময় আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আমার এত বড় স্বপ্ন পূরণের অনুপ্রেরণার জোগান দিত তারা। সারা জীবন কৃতজ্ঞ রইব ওই মানুষদের প্রতি। তাদের প্রতিটি ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ আমার মনে অনেকটা আপন জায়গা করে নিয়েছে। তাদের বলা কথাগুলো আজও আমাকে শক্তি দিচ্ছে সামনের সময়ে আরো ভালো কিছুর করার। 

পরম করুণাময় আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি আমার এই অর্জন অনেকটাই বাবা-মায়ের হাত ধরে। আমার পরিবারের কাছে আমি সব সময়ই সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ও মানসিকভাবে সাহস পেয়েছি। পরিবারের কাছে পাওয়া স্বাধীনতা আর সাহসই নিজেকে অধ্যবসায়ী করে রাখার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। ৪৩তম বিসিএস ছিল আমার জন্য প্রথম রিটেন এবং ভাইভা। কাজেই এর ফলাফলও আমার জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষিত ছিল। আমার ওই দুশ্চিন্তার সময়গুলোতে সব সময় পাশে পেয়েছি বাবাকে এবং মাকে। আমার প্রথম আবেগের বড় অংশীদার ওই দুজন মানুষ। এই আবেগ ফলাফলের মাধ্যমে পরিমাপ করা কখনোই সম্ভব নয়। সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম যদি পরিবারের সঙ্গে রেজাল্টের সময়টা উপভোগ করতে পারতাম। আমার বন্ধু-বান্ধবরাও আমার এই রেজাল্টের বড় অংশীদার। প্রিলিমিনার, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার ৩ ধাপেই আমি বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ করে পড়াশোনা করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে গ্রুপ স্টাডি হলো বড় কোচিং সেন্টার। এতে নিজের দুর্বলতার জায়গাগুলো সহজে শনাক্ত করা যায়। মা-বাবার দেওয়া স্বাধীনতা, বন্ধুদের দেওয়া উৎসাহ এবং নিজের একাগ্রতা আমার চলার পথ মসৃণ করেছে।

অনুজদের অনুপ্রেরণার মানুষ হয়ে, দেশের কল্যাণে কাজ করার মতো করে নিজেকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা এক ক্ষুদ্র মানুষ আমি হতে চাই। বিসিএস ক্যাডার নয়, দেশের মানুষের সহায়ক হতে চাই আমি। দেশের মাটির গুণে কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টাটিই করতে চাই আমি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close