reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ জানুয়ারি, ২০২৪

শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা

শিক্ষা জাতি গঠনের হাতিয়ার, জাতিই উন্নয়নের কর্ণধার। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে প্রবর্তিত আধুনিকায়ন তত্ত্বকে অনুসরণ করতে গিয়ে বলতে হয়, অন্যসব খাতের মতো শিক্ষা খাতে যথাযথ বিনিয়োগ ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে আধুনিকায়নের মাধ্যমে একটি জাতির অগ্রগতি সম্ভব। শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রত্যুৎ দেবনাথ

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গড়ে উঠুক সোনার দেশ

একটি জাতির উন্নতি অনেকাংশেই নির্ভর করে তার শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। যেই জাতি জ্ঞান বিজ্ঞানের দিক দিয়ে এগিয়ে তারাই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। একটি দেশের মান কোন পর্যায়ে আছে, সেটি আমরা অনায়াসেই বুঝতে পারি সেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে। শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থেকে একটি জাতি কখনোই উন্নতির চূড়ায় আরোহণ করতে পারে না। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এই পর্যন্ত অনেকগুলো পরিবর্তন হয়েছে। যদিও বুদ্ধিজীবী মহলে প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা কমিশন নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের হতে হবে আরো বেশি বুদ্ধিমান, কর্মঠ ও বাস্তবজ্ঞান সমৃদ্ধ। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে এবং শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী করে তোলার লক্ষ্যে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে শিক্ষা কমিশন। ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশের মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে একমুখী সমন্বিত শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সাল থেকে এই পদ্ধতি ২য়, ৩য়, ৮ম ও ৯ম এবং ২০২৫ সালে এটি ৪র্থ, ৫ম ও ১০ম শ্রেণিতে চালু হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পদ্ধতি চালু হবে উচ্চমাধ্যমিকে। এখন শিক্ষকরা এই নতুন শিক্ষাব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের কতটুকু মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারছেন সেটিই দেখার বিষয়। আশা করি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর যৌথ সমন্বয়ে একটি নতুন সোনার দেশ উপহার পাব।

মো. জাহিদুল হক

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা ও আধুনিকতা একটি অন্যটির পরিপূরক

শিক্ষা জ্ঞান বিকাশের মাধ্যম। যুগের সঙ্গে সঙ্গে অগ্রসর হতে এবং সুশৃঙ্খল জাতি গড়ে তুলতে একটি রাষ্ট্রের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়ন একান্ত কাম্য। সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, মুক্তচিন্তার জাগরণ ইত্যাদি শিক্ষার আধুনিকায়নের মূল শক্তি হতে পারে। জীবনমুখী জ্ঞান আহরণের জন্য হাতে-কলমে শিক্ষার প্রসারতা বাড়াতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয় নিজে থেকে অনুসন্ধান এবং সঠিক চিন্তা দিয়ে যাচাই করার সুযোগ পায়। এ ছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দিক থেকে পরিপক্ব করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষায় আধুনিকতার সান্নিধ্য পেতে নিজেদের জানার আগ্রহ বাড়ানো, বই পড়ার অভ্যাস তৈরি এবং অবশ্যই অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও সরকারের এ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

প্রমিত দেবনাথ

অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাতির উন্নয়ন-উৎকর্ষে প্রয়োজন প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা

‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ এই কথাটি আমাদের অতি পরিচিত এবং এই উক্তিটির যথার্থতা আমরা চাইলেই অনুধাবন করতে পারি। কোনো একটি জাতির উন্নয়ন-উৎকর্ষের একমাত্র অস্ত্র হচ্ছে শিক্ষা। এযাবৎকালে আমরা যত উন্নত জাতি দেখতে পাই, সবাই শিক্ষায় এগিয়ে রয়েছে। যেহেতু পৃথিবীর প্রতিটি বিষয়-বস্তু প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল, সেহেতু শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসা সময়ের দাবি। আরেকটু ভালোভাবে বললে, শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়ন অতীব জরুরি। এই আধুনিকায়ন আসতে হবে একেবারে গোড়া থেকে। প্রাইমারি লেভেল থেকে শুরু করে উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত। শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়নে যুক্ত হতে পারে- পাঠদানের পদ্ধতিগত পরিবর্তন, সময়োপোযোগী শিক্ষা কারিকুলাম, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এ ছাড়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে একীভূতকরণও এর অন্তর্ভুক্ত- বিশেষ করে ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে স্মার্ট উপায়ে পাঠদান, ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।

আমরা যদি চলমান শিক্ষাব্যবস্থায় ওই পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসতে পারি, তাহলে আগামী দিনের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক গৌরবের সঙ্গে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে সমর্থ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

মো. মিরাজ ইসলাম

অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আধুনিকায়নে সুদূরপ্রসারী ও ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তনের গুরুত্ব রয়েছে

শিক্ষাক্ষেত্র সরকারি খাতের অন্যতম আলোচ্য বিষয়বস্তু হওয়ায় এ ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন অতীব প্রয়োজন। শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রথমেই ই-লার্নিংকে আরো প্রশস্থ ও সুদূরপ্রসারী করতে হবে। একটি বিষয়ের জন্য কারিগরি ক্ষেত্রে দক্ষ একাধিক শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ, সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা ও মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক ক্লাস দান এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটার শেখার সুযোগ নিশ্চিতকরণ শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়নে আবশ্যক। বিভাগভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ে ল্যাব চালুকরণ, শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ, কুইজ প্রোগ্রাম, বিজ্ঞানমেলা, শিক্ষামেলা, বিতর্ক ক্লাব, কমনরুম, সাংস্কৃতিক ক্লাব এসবই শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়নে অবদান রাখতে পারে। ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য আইসিটি বিভাগ চালু করা যেতে পারে। তৃতীয় শ্রেণি থেকেই সাধারণজ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন পাঠ্যসূচিতে সংযোজন প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রত্যেক শ্রেণিতে বয়সোপযোগী সামাজিক তথ্য প্রদান, সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মেলামেশার জন্য ক্যাম্পিং প্রদান ও সৃজনশীল পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাইকরণ শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে পারে।

রাত্রি বর্মণ

এমবিবিএস, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ (বারডেম)

সবস্তরে আধুনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন

সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে রূপকল্প ২০৪১-এর রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত, যোগাযোগ এবং বিদ্যুতের উন্নয়নের ফলে শহরের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামেও এখন আধুনিক মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের পাশাপাশি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অনেক ধরনের কাজ অনলাইনে ঘরে বসেই করা সম্ভব হচ্ছে। যেমন : ভর্তির ফরম পূরণ, রেজিস্ট্রেশন করা, পরীক্ষা ফি দেওয়া, পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে দেখা ইত্যাদি। এতে করে জনগণের আর্থিক অপচয় ও হয়রানি রোধ হয়েছে।

প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলে এখনো মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং কম্পিউটার ল্যাবের অভাব বিদ্যমান। আধুনিক শিক্ষাদানে অজ্ঞ শিক্ষকদের কারণে ছাত্রছাত্রীরা আধুনিক শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপরোক্ত সমস্যাসমূহের সমাধান হলে শিক্ষার্থীরা দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হতে পারবে।

সুস্মিতা চক্রবর্তী

সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এডুটেকভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাতেই ভরসা

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এটি আমাদের মৌলিক অধিকার। দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যপূরণে শিক্ষাই হচ্ছে প্রধান অবলম্বন। মেধা ও মননে আধুনিক এবং চিন্তা-চেতনায় অগ্রসর একটি সুশিক্ষিত জাতিই একটি দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। গত এক দশকে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির সমন্বয় ও ব্যবহার ছিল যুগান্তকারী একটা পদক্ষেপ। শ্রেণিকক্ষের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ ও আরো ফলপ্রসূ করার জন্য বিশেষায়িত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ব্যবহার শুরু হয়। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নিয়ে শিক্ষকরা প্রজেক্টর এবং ভিডিওর সমন্বয়ে শেখাতে সক্ষম হচ্ছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে শিক্ষকরা আরো বেশি কার্যকর শিক্ষাদান করতে সমর্থ হচ্ছেন। প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে এই স্মার্ট ক্লাসরুম এখন অনেক দূর এগিয়েছে। ডিজিটাল দুনিয়ায় শেষ সীমা বলে কিছু নেই। এখানে সর্বদা নতুন চিন্তা, উদ্ভাবন ও সম্পাদন চক্র চলমান থাকে। প্রয়োজনে যেকোনো সময়ে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যায়। এডুটেকভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারাই আমাদের মতো চিরাচরিত সমাজকে প্রবুদ্ধ করা এবং আধুনিকায়ন করা সম্ভব।

সোলায়মান রহমান

ইসলামিক স্টাডিজ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close