বিদেশ ডেস্ক

  ২১ অক্টোবর, ২০১৬

পাকিস্তানকে একঘরে করার বিপক্ষে মিয়ানমার ও ব্রিটেন

চীনের মতো হতাশ করল মিয়ানমারও। সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে একঘরে করতে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সু চি-কে পাশে পেতে চেয়েছিল ভারত। শান্তির নোবেলজয়ী এই নেত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর ছিল এর জন্য উৎকৃষ্ট সময়।

কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তথা ভারত সরকারকে এক প্রকার হতাশই করলেন সু চি। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সন্ত্রাসবাদকে কোণঠাসা করতে তিনি রাজি। কিন্তু কোনো দেশ বা সংগঠনের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন না তিনি।

তিন দিনের জন্য ভারতের মাটিতে পা রেখেছেন সু চি।

বুধবার সফরের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক ছিল মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সু চি-র। সেখানেই সে দেশের রাখাইন এলাকার জাতিদাঙ্গা এবং সাম্প্রতিক সন্ত্রাসের নিন্দা করে নয়াদিল্লি। উদ্দেশ্য ছিল, সন্ত্রাস প্রশ্নে নেপিদওয়ের সহমর্মিতা পাওয়া। ও পাকিস্তানকে চাপে ফেলা। এককথায় সে কাজে সাফল্য পেল না ভারত। সু চি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদকে একঘরে করতে হবে, কোনো দেশ বা ব্যক্তিকে নয়। আপাত দৃষ্টিতে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অবশ্য সফল। নিরাপত্তার প্রশ্নে নয়াদিল্লির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন সু চি। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের জমিকে কোনো প্ররোচনাতেই ভারত-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।

অন্যদিকে চীন, আমেরিকার পরে ব্রিটেনও জানিয়ে দিল, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের জন্মদাত্রী আখ্যা দিয়ে মোদির সুরে সুর মেলাতে রাজি নয় তারা। এমনকি, বেইজিংয়ের সুরেই লন্ডনের ব্যাখ্যা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘উল্লেখযোগ্য ত্যাগস্বীকার’ করেছে ইসলামাবাদ।

ব্রিটেনের ব্যাখ্যা, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে ব্রিটেন ও পাকিস্তানের একই রকম স্বার্থ রয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করতে আমরা দায়বদ্ধ।’ এখানেই শেষ নয়। ব্রিটেন বলেছে, ‘সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে পাকিস্তান ও সে দেশের মানুষ যে ত্যাগস্বীকার করছে, আমরা তা স্বীকার করি।’ এমনকী, পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির মোকাবিলায় সে দেশের সরকার কাজ করছে, এমন কথাও তুলে ধরেছে ব্রিটেন। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আগামী ৬ নভেম্বর থেকে তিন দিনের ভারত সফরে আসছেন। এর আগে ব্রিটেনের এই অবস্থান নয়াদিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে।

পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের জন্মদাত্রী হিসেবে তুলে ধরতে মোদি আহ্বানে সাড়া দেয়নি বেইজিং। বরং তাদের বক্তব্য ছিল, পাকিস্তান নিজেই জঙ্গি হামলার শিকার। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে, এবং এ জন্য অনেক মূল্যও দিতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মহল যাতে ইসলামাবাদের সেই ‘ত্যাগ’-কে সম্মান করে, তা নিয়ে বক্তব্য রেখেছিল চীন। নয়াদিল্লি এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এ বার সন্ত্রাসে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে ব্রিটেনের প্রতিক্রিয়াতেও বেইজিংয়ের সুরই ফিরে এলো।

পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের জন্য স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে এবং ভারতে তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারের উচিত এর কড়া নিন্দা করাÍ এই মর্মে একটি আবেদন জমা পড়েছিল ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে। এতে সই করেছেন প্রায় ২০ হাজার জন। ফলে সরকারকে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছে।

তবে এর মধ্যেই দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনার দরজাও খুলে রাখতে চাইছে মোদি সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, পাকিস্তানের উপর চাপ বজায় থাকবে।

কিন্তু আলোচনার সম্ভাবনাকেও খতিয়ে দেখা হবে। সংসদীয় কমিটির সামনে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার সময় গত কাল বিদেশসচিবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আবার কথাবার্তা শুরু করবে কিনা ভারত। বিষয়টিকে উড়িয়ে না দিয়ে তাৎপযপূর্ণভাবে এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে আগেও কথাবার্তা বলেছি। ভবিষ্যতেও আলাপ আলোচনা করা হবে। তবে কবে কথা হবে, তার কোনো তারিখ নেই।’’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist