প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ মার্চ, ২০২৪

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

চীন, রাশিয়া ও ইরানের নেতৃত্বে বিশ্বে ‘আধিপত্যহীন’ যুক্তরাষ্ট্র!

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে। সেটা হলো, তারা উভয়ই ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন। যদিও তারা কেউই খুব একটা বেশি ভ্রমণ করেন না। তবে সম্প্রতি দুই নেতা চীন সফর করেছেন। পরস্পরের প্রতি তাদের ভালোলাগা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গেল ডিসেম্বরে গাজা যুদ্ধ নিয়ে পুতিন-রাইসি ক্রেমলিনে বৈঠক করেছেন। গত ১৮ মার্চ পুতিন পুনরায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাইসি পুতিনকে বিলম্ব না করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাশিয়া, ইরান ও চীনের মধ্যে তেমন একটা বন্ধুত্ব ছিল না। ভেতরে ভেতরে তারা সাম্রাজ্যবাদী। প্রায়ই তারা পরস্পরের প্রতিবেশী দেশগুলোয় হস্তক্ষেপ করত এবং এশিয়ার বাণিজ্যপথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করত। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ ও কর্মকাণ্ডে সবকিছু বদলে গেছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিতকরণ-সংক্রান্ত চুক্তি করেছিল, কিন্তু ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর দুই বছর পর ২০২০ সালে জো বাইডেন আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফিলিস্তিনের হামাস ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থনের জন্য ইরানের বিরুদ্ধে আরো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হয়েছে। অন্যদিকে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লেগেই আছে। চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়- এই তিনটি দেশ একইভাবে অভিন্ন শত্রুর দ্বারা একত্র হয়েছে। ফলে তারা অভিন্ন পররাষ্ট্রনীতি এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশ তিনটি যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যহীন বহুপক্ষীয় বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। নতুন এই জোটের ভিত্তি হিসেবে তারা মনে করছে, নিজেদের অর্থনৈতিক বন্ধন আরো দৃঢ় করতে হবে।

চীন এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সীমাহীন’ অংশীদারত্বের অঙ্গীকার করেছে। এমনকি ইরানের সঙ্গে তারা ২৫ বছরের ৪০০ বিলিয়ন বা ৪০ হাজার কোটি ডলারের ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ ঘোষণা করেছে। তিনটি দেশই ব্রিকসের সদস্য। তিন দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ছে। তারা শুল্কমুক্তভাবে পণ্য বাণিজ্যের জন্য ব্লক গঠনের পরিকল্পনা করছে। সেই সঙ্গে অর্থ পরিশোধের নতুন ব্যবস্থা ও পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যপথ এড়িয়ে নতুন পথে বাণিজ্য করার পরিকল্পনা করছে।

এসব পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। এ রকম পশ্চিমাবিরোধী অক্ষশক্তি গঠিত হলে তাদের শত্রুরা নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সুযোগ পাবে। আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে এই দেশগুলো ঠিক কোথায় যাবে, সেটাই এখন তাদের বড় প্রশ্ন।

জ্বালানি কিনছে চীন : চীন দীর্ঘদিন ধরেই ইরান ও রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্রেতা। তবে এই দুটি দেশ একই সঙ্গে ইউরোপে প্রচুর তেল বিক্রি করত। ভৌগোলিক কারণে ইউরোপের সঙ্গে তাদের তেলের বাণিজ্য ছিল বেশ চাঙা। কিন্তু ইউরোপ রাশিয়া ও ইরানের তেল নেয়া বন্ধ করার কারণে চীন রাশিয়ার কাছে সস্তায় তেল কিনছে। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দরগুলো দিয়ে চীন দিনে ১ লাখ ব্যারেল তেল কিনত; এখন তা ৫ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে। ডিসেম্বরে রাশিয়া থেকে চীন দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত তেল নিয়েছে; যা চীনের মোট চাহিদার ১৯ শতাংশ।

বাড়ছে বাণিজ্য : রাশিয়া থেকে চীনের যেমন তেল কেনা বেড়েছে, একইভাবে রাশিয়াতেও চীনের রপ্তানি বেড়েছে। কোভিড-১৯-এর কারণে চীনের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চীন জুতা ও টি-শার্টের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতি রপ্তানিতে নজর দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close