আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সমালোচনার মুখে ইউক্রেন
রুশ সাংবাদিককে নিয়ে খুনের নাটক
কিয়েভে আশ্রয় নেওয়া রুশ সাংবাদিক আরকাদি বাবচেঙ্কোর ‘খুন’ নিয়ে নাটক সাজিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা-বিষয়ক সংস্থার এক কর্মকর্তা বাবচেঙ্কোকে নিয়ে ‘ভুয়া তথ্য’ ছড়ানোয় ইউক্রেনের নিন্দা করেছেন।
সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার কিয়েভের কর্মকান্ডকে ‘তথ্য যুদ্ধের অংশ’ অ্যাখ্যা দিয়েছে। ইউক্রেন বলছে, তারা আরকাদি বাবচেঙ্কোকে খুনে রাশিয়ার চক্রান্ত উন্মোচন করেছে। মস্কো এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কিয়েভের কর্মকান্ডই ‘উসকানিমূলক’।
ক্রেমলিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ৪১ বছর বয়সী বাবচেঙ্কোকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছিল কিয়েভ পুলিশ। হত্যাকান্ডের পেছনে রাশিয়ার হাত থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিল তারা। এ নিয়ে দুই পক্ষের বাদানুবাদের মধ্যেই বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন বাবচেঙ্কো। ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ভাসিল হেরিৎসাক জানান, বাবচেঙ্কোকে হত্যা করতে রুশ বাহিনী যে খুনিকে টাকা দিয়েছিল, তাকে ধরতে চিরুনি অভিযান চলছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতারের কথাও জানিয়েছে কিয়েভ পুলিশ। ২০১৪ সালে মস্কো ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ করে নিলে কিয়েভের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে চলা রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে রাশিয়া ছদ্মবেশে বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে বলেও অভিযোগ কিয়েভের। বাবচেঙ্কোর ‘খুনের খবর’ প্রকাশিত হওয়ার পর দুই দেশ নতুন করে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে ২০১৭ সালে রাশিয়া ছেড়ে আসা সাংবাদিক জানান, মাসখানেক আগে তাকে হত্যায় রুশ চক্রান্তের কথা জানতে পেরে ইউক্রেনের পাল্টা-অভিযানে সহায়তা করেছেন তিনি। এ (খুনের নাটক) ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না, উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন বাবচেঙ্কো।
গত বছর রাশিয়ার একটি সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৯২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ‘দুঃখিত নন’ লিখে ফেসবুকে তোপের মুখে পড়েছিলেন বেশ কয়েকটি রুশ গণমাধ্যমের যুদ্ধবিষয়ক প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করা বাবচেঙ্কো।
সিরিয়া ও ইউক্রেন নিয়ে ক্রেমলিনের ভূমিকাকে ‘আগ্রাসন’ অ্যাখ্যা দেওয়ায় ‘মৃত্যুর হুমকি’ পেয়েই দেশ ছেড়েছেন বলেও দাবি তার। রাশিয়া ছেড়ে পালিয়ে আসা বাবচেঙ্কোকে হত্যায় খুনি ঠিক করতে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ইউক্রেনের এক নাগরিককে রিক্রুট করে বলে অভিযোগ ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী প্রধানের।
রুশ বাহিনীর হয়ে কাজ করা ওই ইউক্রেনীয় বাবচেঙ্কোকে মেরে ফেলতে বেশ কয়েকজনকে ৩০ হাজার ডলার দেওয়ারও প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব পাওয়াদেরই একজন নিরাপত্তা বাহিনীকে ঘটনাটি জানিয়ে দেন বলে দাবি হেরিৎসাকের।
পুতিনের সমালোচক বাবচেঙ্কোকে হত্যার রুশ চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেওয়ার দাবি করলেও সাংবাদিকদের সক্ষমতার অবমূল্যায়ন করায় বিভিন্ন সংগঠন ইউক্রেনের তীব্র সমালোচনা করেছে।
ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিনিধি হারলেম দেসির সাংবাদিকের জীবন নিয়ে কিয়েভের মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বাবচেঙ্কোকে নিয়ে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার কৌশলের সমালোচনা করেছেন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের প্রধান ক্রিস্টোফে ডেলোয়েরও।
বাবচেঙ্কোকে নিয়ে ইউক্রেনের কর্মকান্ডকে ‘মিথ্যা প্রচার যুদ্ধের মুখোশ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে সবাইকে বিস্মিত করার পর বুধবার এক টুইটে বাবচেঙ্কো পুতিনের কবরে নাচতে নাচতে ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরেশেঙ্কো বলেছেন, বাবচেঙ্কো ও তার পরিবারকে সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত কিয়েভ। তিনি বলেন, মস্কো যেভাবে শান্ত হয়ে আছে, তা খুবই অস্বাভাবিক।
"