নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া সর্দি-কাশি-জ্বর

গরমে রোগবালাই বাড়ছে। আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। প্রচণ্ড গরমে শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। এতে বাড়ছে চর্মরোগ, সর্দি-কাশি ও জ্বর। হিটস্ট্রোকও হচ্ছে। বাড়িতে সামাল দিতে না পেরে অনেক বাবা-মা শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন। বড়রাও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গরমে রান্না করা খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এসব বাসি-পঁচা খাবার খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ফলে ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। এ সময় সবাইকে সাবধানে চলাচল করতেও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই সময়ে প্রচুর পানি পান, লেবুর শরবত, স্যালাইন ও তরল খাবার খেতে হবে। তেল-মশলাজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

শরীরের কোনো অংশে সরাসরি রোদ লাগানো যাবে না। বাইরে বের হওয়ার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, সানগ্লাস ও ছাতা ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার চারপাশে খোলা খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। পূর্ণবয়স্কদের দিনে ৩-৩.৫ লিটার সুপেয় পানি পান করা উচিত।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় রোগীর উপচেপড়া ভিড়। তাদের বেশির ভাগ রোগী জ্বর, সর্দি-কাশি, হিটস্ট্রোক, পেটের সমস্যা, টাইফয়েড ও পানিবাহিত হেপাটাইটিসে ভুগছেন। তীব্র গরম, আবহাওয়ার পরিবর্তন, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি খাওয়ার কারণেই রোগ বাড়ছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইসিডিডিআরবিতে গত ৭ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ হাজার ৫২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে এই হাসপাতালে গড়ে ৩ জন রোগী ভর্তি হতেন, তবে বর্তমানে এই সংখ্যা ৫০০ জনের কাছাকাছি। শিশু হাসপাতালে গড়ে ৭০০ থেকে ৯০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। একইভাবে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বেড়েছে রোগীর চাপ।

শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২ বছরের শিশু ফুয়াদের হাতে ক্যানোলা লাগানো। তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। ফুয়াদের মা রোকেয়া বেগম বলেন, গত সন্ধ্যায় ফুয়াদের জ্বর হয়। এক পর্যায়ে তার খিঁচুনি শুরু হয়। ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি, চিকিৎসকরা তাকে ভর্তির পরামর্শ দেন।

একই হাসপাতালে ভর্তি আরেক রোগীর স্বজন মোয়ায়েম আহমেদ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে গরমের মাত্রাটা বেড়ে গেছে। আমার ভাগ্নি আইসক্রিম ও ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি বেশি খায়। দিনে একাধিকবার গোসল করে। এরপর তার গলাব্যথা ও জ্বর আসে। ফার্মেসি থেকে শুরুতে ওষুধ কিনে তাকে খাওয়াই। কিন্তু, তাতে কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাপপ্রবাহ এলেই শিশুদের অসুখে আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। ফলে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। এই সময়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার পাশের হোটেল থেকে খাবার ও পানীয় পরিহার করতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগী রাকিবুল ইসলাম বলেন, দুপুরবেলা ছাদে গিয়ে হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে যাই, ছাদ থেকে আমাকে বাসায় নিয়ে মাথায় পানি দেওয়া হয়। এতে জ্ঞান ফিরলেও শরীর দুর্বল হয়ে যায় ও বারবার পায়ের পেশিতে টান পড়ছিল। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আমার হিটস্ট্রোক হয়েছিল।

এপ্রিলে চলমান তাপপ্রবাহে প্রচণ্ড গরম ও অস্বস্তিকর আবহাওয়া বিরাজ করছে রাজধানীসহ দেশের সব জেলায়। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ৫৪টি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া অফিস, যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিন এ জেলায় বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ২২ শতাংশ। এর আগের দিনও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিনের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরের তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গরমে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। প্রতি বছর গরম এলেই ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরের মানুষজন বাসার বাইরে যে পানি পান করেন, তা নিরাপদ নয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ বলেন, প্রতি বছর এই সময়ে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। ঢামেকে এখন রোগীর যে চাপ আছে, তা আগামী কয়েক দিনে আরো বাড়তে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close