জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ

  ৩১ মার্চ, ২০২৪

বাঁধে বাধ মানবে না ফসলহানির আশঙ্কা

সুনামগঞ্জ জেলায় ৪২টি ছোট-বড় হাওরে বোরো ধান রক্ষার জন্য এবার ৭৩৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধের কাজ হচ্ছে। গত বছর ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে তিন দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন দাবি করছে, বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, উল্টোচিত্র। বিভিন্ন বাঁধে মাটির কাজ এখনো চলছে। কৃষকরা অভিযোগ করছেন, কমপেকশন, দূর্বাঘাস লাগানো ও জিওটেক্স লাগানোর কাজও শেষ হয়নি। যেসব বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে কাজ হয়েছে দায়সারা। কাজ চলছে পুরোনো আদলেই। নামমাত্র মাটি ফেলে চলে গেছে প্রজেক্টের লোকজন। ফসল রক্ষায় এ বাঁধের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে চাষিদের। তাছাড়া আগাম বন্যা হলে অসমাপ্ত বাঁধে ফসল রক্ষা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। সব মিলিয়ে আশঙ্কায় আছেন হাওরের চাষিরা।

সুনামগঞ্জের হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান, যা দিয়ে এলাকার চাষিদের সারা বছরের খোরাক হয়। তাই ফসলটি তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু আগাম বন্যায় ফসলহানির ঝুঁকি থাকে। তখন মাঠে মারা যায় চাষির বেঁচে থাকার স্বপ্ন। এ কারণে প্রতি বছরই ফসল রক্ষায় অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়। এবারও জেলার ৪২টি ছোট-বড় হাওরে ৭৩৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধের কাজ হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী গত বছর ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু করে চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু তিন দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের দাবি, বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন বাঁধে মাটির কাজ এখনো চলছে।

এবার ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৯১ কিলোমিটার অস্থায়ী ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার, নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকার হাওরাঞ্চলের বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধের কাজে নীতিমালা পরিবর্তন করে অঢেল অর্থছাড় দিয়েছে। জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার বাঁধের কাজ পিছিয়ে আছে এখনো। কৃষকরা অভিযোগ করছেন, মেয়াদ শেষ হলেও এখন চলছে বাঁধের নির্মাণকাজ। কোথাও কোথাও কমপেকশন, দূর্বাঘাস লাগানো ও জিওটেক্স বসানো হয়নি। বাঁধের কাজের মান নিয়ে কৃষকরা চরম বিক্ষুব্ধ। মাটির বদলে ফেলা হচ্ছে বালু। বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ধর্মপাশা উপজেলার সোখাইর রাজাপুরের কৃষক উজ্জ্বল আহমদ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় হাওরে নামমাত্র মাটি ফেলে বাঁধ করা হয়েছে। এসব বাঁধ অল্প বৃষ্টি হলেই ধসে যাবে। এছাড়া জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় বাঁধের কাজ অনেক পিছিয়ে আছে।’ তাহিরপুর উপজেলার সোলেমানপুর গ্রামের কৃষক নিপেন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের এলাকার বাঁধের কাজ এখনো বাকি আছে। এসব কাজ দ্রুত শেষ না করলে আগাম বন্যা হলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।’ ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন দাবি করছে কাজ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবে এখনো অনেক কাজ বাকি। এসব গাফিলাতির জন্য এবার যদি ফসলের কোনো ক্ষতি হয় আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।’

সাধারণত মার্চের শেষে ও এপ্রিল মাসের শুরুতেই প্রতি বছর আগাম বন্যার আশঙ্কায় থাকেন সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকরা। হাওর এলাকায় এখনো ধানের থোড় আসেনি। এর মধ্যে যদি আগাম বন্যা হয়, তাহলে জেলার ৪২টি হাওরে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে কৃষকের স্বপ্ন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘প্রতি বছরই এ সময়ে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে যদি অধিক বৃষ্টি না হয়, তবে বন্যার শঙ্কা তেমন নেই। চলতি মাসের শেষদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। মেঘালয়ে অধিক বৃষ্টি হলে আগাম বন্যার শঙ্কা আছে। তবে আমাদের বাঁধগুলো জরুরি মেরামতের জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মো. রাশেদ কবাল চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আগাম বন্যার শঙ্কায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। জেলা প্রশাসক জানান, নৌকা, জিওব্যাগ ও ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ থেকে ভারতের মেঘালয়ে দীর্ঘস্থায়ী ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে শতভাগ ফসল তলিয়ে যায়। নিমিষেই শেষ হয়ে যায় ২২ লাখ কৃষকের স্বপ্ন। ২০১৭ সালের পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোনো দুর্যোগ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ফসল ঘরে তোলা যায়। ২০২২ সালে আগাম বন্যায় আংশিক ফসলহানি হলেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close