নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ মার্চ, ২০২৪

মাসজুড়ে বজ্রঝড়ের শঙ্কা

রাজধানীতে গতকাল রবিবারও ঝড়ো বৃষ্টি হয়েছে। সারা দিন আকাশ ঘোমড়া ছিল। বিকেলে ঝুম বৃষ্টি নামে। বৃষ্টিপাতের কারণে ঘরমুখী মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। সড়কে পানি জমে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এর আগে শনিবার মধ্যরাতের কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে রাজধানীর রাস্তাঘাট, ইন্টারনেট লাইন। কোথাও কোথাও গাছ ভেঙে পড়েছে। চলতি মাসজুড়েই এই বজ্রঝড় হতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘এই মাসটাই বজ্রঝড়ের মাস, কালবৈশাখী ঝড়ের মাস। এ সময় এ ধরনের ঝড় হওয়া স্বাভাবিক। এই মাসে মাঝে মাঝে ঝড় হতে থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘কয় দিন ধরে থেকে থেকে বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা কমেছে। তবে বৃষ্টি কমে এলে তাপমাত্রা বাড়বে।’ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ।

শনিবার রাত সোয়া ২টা নাগাদ রাজধানীতে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। প্রথমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি। পরে তীব্র বজ্রপাত এবং বড় বড় শিলা পড়তে থাকে। ঝড় চলে প্রায় ৩০ মিনিট। এ দিন ঢাকাতে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৯২ কিলোমিটার।

শনিবার ভোর ৬টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৮, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ২১, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ২০, ময়মনসিংহ ও রংপুরে ১৮, সিলেটে ১৪, নেত্রকোনা ও সৈয়দপুরে ১৩, রাঙামাটিতে ৯, ফেনীতে ৬, নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ও তেঁতুলিয়ায় ২, কুমিল্লা ও চাঁদপুরে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অফিস ঢাকাসহ সাত বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার তথ্য জানিয়ে ওইসব এলাকার নদীবন্দরগুলো ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে রবিবার ভোর ৬টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। তবে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

সোমবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, একইভাবে রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া মঙ্গলবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় দেশের সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে সামান্য শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শনিবার রাতে নিকলী আবহাওয়া অফিস এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। গতকাল রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় নিকলী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পরিদর্শক আখতার ফারুক বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশে ঝড়বৃষ্টির পরিমাণ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা যায়।

তিনি বলেন, শনিবার রাতে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বছরের শুরুতেই ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে সামান্য শিলাবৃষ্টি হয়েছে। রবিবারও আকাশ মেঘলা রয়েছে। অস্থায়ী ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে। সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৩ মিলিমিটার। যার মধ্যে হিসাব অনুযায়ী ১০ মিলিমিটার পর্যন্ত হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মাঝারি ধরনের ভারী, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার ভারী এবং এর বেশি বৃষ্টি হলে তাকে অতি ভারী বলা হয়।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নে ঝড়ে ও শিলাবৃষ্টিতে গাছপালা, ঘরের টিন ফুটোসহ আধাপাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ৮০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকেই ঘর ছাড়াও রয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে এসব খবর পাওয়া গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ও ৮নং ওয়ার্ডে গত শনিবার রাতের প্রায় ৪০ মিনিট স্থায়ী হওয়া শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি ওই এলাকার প্রায় ৮০০ অধিক পরিবারের টিনের চালা ফুটো হয়েছে। এছাড়া অনেক গাছ ভেঙে গেছে। ঘরে থাকার মতো তাদের জায়গা নেই। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত ফারুক, ফিরোজা, আবুল হাশেম বলেন, জীবনে এ রকম শিলাবৃষ্টি কখনো দেখিনি। এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলসহ সব শেষ। ৭নং ওয়ার্ডে ফিরোজা বলেন, আমার একটা মাত্র ঘর তাও শিলাবৃষ্টিতে শেষ। স্বামী নিয়ে এখন কোথায় থাকব। কি খাব? এখন গাছের নিচে ছাড়া কোথাও জায়গা নেই। বোয়ালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কোনো বরাদ্দ নেই। তবে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দিলে হয়তো কিছুটা রক্ষা করা যাবে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিকলী (কিশোরগঞ্জ) ও কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close