মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪

মিরসরাইয়ে মুহুরী প্রকল্প

বৈধ মাছের ঘেরেও বেজার উচ্ছেদ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া ‘মৎস্য জোন’খ্যাত মুহুরী প্রকল্প এলাকায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার অভিযানের পর গতকাল বুধবারও সকাল থেকে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বেজা। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ওই প্রকল্প এলাকার মৎস্য চাষিদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তারা আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা অবৈধ মাছের ঘের অপসারণ করছি, প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে। সরকারের বন্দোবস্ত করা ভূমি ও মাছের ঘের চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বেজার এ কর্মকর্তা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

মাছ চাষিরা বলছেন, বেজা কর্তৃপক্ষ নিজেদের অধিগ্রহণ করা অঞ্চল চিহ্নিত না করেই বৈধ মাছের ঘের ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। এটা অন্যায়। বৃহত্তর এ মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র বাঁচাতে প্রয়োজনে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন এবং আদালতের শরণাপন্ন হবেন।

মাছ চাষি আজমল হোসেন বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর যেসব প্রকল্প গড়ে উঠেছে তা অবৈধ। আমরা বৈধ ঘেরে মাছ চাষ করছি। বেজা কর্তৃপক্ষ অবৈধ ঘেরগুলো উচ্ছেদ করার পর ৩০ বছরের পুরোনো বৈধ ঘেরেও অভিযান শুরু করেছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হব। আন্দোলনে যাব। এতে কিছু না হলে আদালতের শরণাপন্ন হব।’

আরেক মাছ চাষি নুরুল আবছার বলেন, ‘সরকার কৃষি ও মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। আমরা এখান থেকে বছরে ৪৯ হাজার টন মাছের জোগান দিই। ১৯৮৬-৮৭ সাল থেকে এখানে মাছ চাষ চলছে। আজকে এটি একটি মৎস্য জোনে পরিণত হয়েছে। দেশ লাভবান হচ্ছে। আমরা বেজাকে অনুরোধ করব তারা যেন অন্যায়ভাবে কোনো মৎস্য ঘের উচ্ছেদ না করে।’

বেজার উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়াছিন বলেন, ‘এখানে অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে কিছু অসাধু লোক মাছের ঘের তৈরি করেছে। আমরা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মাছের ঘের অপসারণ করছি। এতে স্থানীয় প্রশাসনও আমাদের সহযোগিতা করছে।’ সরকারের বন্দোবস্তকৃত ভূমি ও মাছের ঘের চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বেজার এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তা আমাদের জানা নেই।’

এদিকে গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, অবৈধ মাছের ঘের উচ্ছেদের পর সরকার থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া জমিতে গড়ে ওঠা মাছের ঘের এলাকায়ও অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বেজা এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এতে স্থানীয় মাছ চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও মিরসরাই ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৮৬-১৯৮৭ সাল থেকে উপজেলার মুহুরী প্রকল্প এলাকার ইছাখালী ও বাঁশখালী মৌজায় সমুদ্রতীরে জেগে ওঠা চর বন্দোবস্ত দেয় সরকার। প্রথম ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভূমিহীনদের মাঝে ১২০০ একর। পরে ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০০ একর, চিংড়ি চাষিদের মাঝে ১৩৮৫ একর এবং সর্বশেষ ২০০৪-০৫ সালে ভূমিহীনদের মাঝে ২৫০০ একর ভূমি বন্দোবস্ত দেয় সরকার। পরে ৫ হাজার ৩৮৫ একর ভূমিতে সমন্বিত মাছচাষ শুরু করে বন্দোবস্ত গ্রহীতারা।

মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মুহুরী প্রকল্প এলাকার মিঠা পানির এসব মৎস্য ঘেরে বছরে উৎপাদন হয় ৪৯ হাজার টন মাছ। যা চট্টগ্রাম জেলার মৎস্য খাদ্য চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ করে। এর আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।

আনোয়ার এগ্রো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ও মিরসরাই মাছ চাষি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলা ও সোনাগাজী উপজেলার বৃহৎ অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর গড়ে উঠছে। চাষিদের দাবি শিল্প জোনের জন্য মৎস্য প্রকল্প অধিগ্রহণ না করে বরং এটিকে মৎস্য জোন হিসেবে ঘোষণা করা।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close