আবদুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪

হাওরে বিষটোপে মারা পড়ছে অতিথি পাখিও

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি। শীত মৌসুমে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ হাওর। কিন্তু ফাঁদ পেতে পাখি ধরছেন শিকারিরা। শুধু তা-ই নয়, বিষটোপ দিয়েও পাখি শিকার করছেন এমন অনেক শিকারি। এতে মারা পড়ছে অনেক অতিথি পাখি এবং ব্যাহত হচ্ছে অতিথি পাখির নিরাপদ আবাসস্থল। এসব পাখি শিকারিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছেন পরিবেশবাদীরা। তারা এমন কাজ কঠোর হাতে দমন করারও দাবি জানিয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ৬টি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হাকালুকি হাওরের অবস্থান। এখানে ছোট-বড় ২৩৮টি বিল, ১০টি নদী ও অসংখ্য খাল রয়েছে। প্রতি বছর শীতের শুরুতে সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান এলাকা থেকে এসব পাখি একটু উষ্ণতার খোঁজে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হাকালুকিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে এসে আশ্রয় নেয়। পাখির নিরাপদ আশ্রর জন্য ১৯৯৯ সালে সরকার এ হাওরকে পরিবেশগত সংকটপূর্ণ এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। তারপরও এসব এলাকায় চলছে অবাধে পাখি নিধন। কর্তৃপক্ষের নজর এড়াতে পাখি হত্যায় বেছে নিয়েছে বিষটোপ।

গত দুই সপ্তাহে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওরের জুড়ীর অংশে নাগুয়া ও চাতলার বিলে পাখি দেখতে ও ছবি তোলার জন্য আসেন কয়েকজন আলোকচিত্রী। তারা হাকালুকির নাগুয়া বিলে ৩২টি পাখি মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় আশপাশে আরো দুটি পাখি বিষটোপ খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখেন। এ ঘটনা তাদের ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট করেন। মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায়। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, শিকারিরা দলবেঁধে বিষটোপ ও জাল দিয়ে পরিযায়ী পাখি শিকার করেন। পরে এসব পাখি তারা গোপনে চড়া দামে বিক্রি করেন। তারা আরো বলেন, হাকালুকি হাওরে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাখির সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। আগে অনেক পাখি দেখতাম। এবার আগের চেয়ে কম পাখি চোখে পড়ছে।

স্থানীয়রা জানান, হাকালুকি হাওরের পাখির দাম অনেক বেশি। ২টি হাঁস প্রজাতির পাখি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখেন। শিকারিরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পাখি শিকার করে থাকেন।

গতকাল মঙ্গলবার জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের (হেডকোয়ার্টার মৌলভীবাজার) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডি এফ ও ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এসব ঘটনা জানার পর আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি। এখন জড়িতদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। অচিরেই এ বিষয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী যেকোনো বন্যপ্রাণী হত্যা, শিকার, ক্রয়-বিক্রয় ও নিজের দখলবন্দি করে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন আইন থাকা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না পাখি নিধন। একটি অসাধু চক্র পাখি শিকারের কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। আমরা পাখির শিকার রোধে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছি, তবু এসব বন্ধ করতে পারছি না। আইনের প্রয়োগের অভাবে মূলত পাখি নিধন হচ্ছে। পাখি শিকার ও বিক্রি রোধে আরো কঠোর হওয়া দরকার বলে জানান তিনি। হাকালুকি হওরে বিষটোপ দিয়ে ও ফাঁদ পেতে শিকারের জন্য মারা যাচ্ছে অতিথি পাখি। এসব শিকারিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close