প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০২ জুলাই, ২০২২

বিটকয়েনে পরিবেশ দূষণ

বিটকয়েন, ক্রিপ্টোকারেন্সি, ব্লকচেন আর্থিক বাজারে বিশাল পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিনিয়োগের এই মঞ্চ বাস্তবে কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করছে। সেই ‘পাপের’ প্রায়শ্চিত্ত করতেও ডিজিটাল সমাধানসূত্র বের করতে হবে, তা না হলে বৈশ্বিক পরিবেশ দূষণ আরো বাড়বে। খবর ডয়সে ভেলের

ক্রিপ্টো কারেন্সি আমাদের পরিচিত আর্থিক জগতে বেশ বিঘœ ঘটাচ্ছে। অনেক নবাগত বিনিয়োগকারী সেই হুজুগের সুযোগ নিয়ে যথেষ্ট টাকা কামাচ্ছেন। কিন্তু এই জগত শুধু শ্যাম্পেন ও দামি ইয়টের মতো চাকচিক্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নতুন ক্রিপ্টো কারেন্সি, বিশেষ করে বিটকয়েন মাইনিং করা পরিবেশের জন্য দুঃস্বপ্ন বটে। সেই প্রক্রিয়ায় প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয় ও হাজার হাজার টন ইলেকট্রনিক আবর্জনা সৃষ্টি হয়। কিন্তু ক্রিপ্টো জগতের নতুন কয়েকজন সদস্য সে পরিস্থিতি বদলাতে চাইছেন। শুধু ২০২১ সালেই বিটকয়েন মাইনিং প্রক্রিয়ায় যত বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে, তা থাইল্যান্ডের বাৎসরিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের সমান। সে বিদ্যুতের সিংহভাগই সস্তার জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি থেকে আসে। সেই শক্তি মোটেই নির্মল বা পরিবেশবান্ধব নয়।

এই মুহূর্তে নিউইয়র্ক থেকে আমস্টারডামগামী প্রায় ছয় ঘণ্টার এক উড়ালের কারণে বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, একটি বিটকয়েন লেনদেনে সেই নির্গমনের মাত্রা তার থেকেও বেশি। যা ভিসা, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে একটি লেনদেনের কারণে কার্বন নির্গমনের প্রায় ২০ লাখ গুণ বেশি। সে সঙ্গে ই-ওয়েস্ট বা ইলেকট্রনিক বর্জ্যও সৃষ্টি হয়। কারণ, মাইনিং কম্পিউটারগুলো হয় বিকল হয়ে পড়ে অথবা প্রতি ১২ থেকে ১৮ মাস অন্তর সেগুলো আপগ্রেড করতে হয়। পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি যত সস্তা হচ্ছে, সে সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিশ্র জ্বালানির মডেল বিটকয়েন মাইনারদের মধ্যেও তত জনপ্রিয় হচ্ছে। ২০২০ সালে বিটকয়েনের বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ব্যবহারের ৩৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে এসেছে।

বিটকয়েন ব্যবহার সত্ত্বেও কার্বন নির্গমন নিয়ে মনে দুশ্চিন্তা থাকলে সেই প্রক্রিয়ার অন্তর্নিহিত ব্লকচেন প্রযুক্তি এমন বিবেক দংশন দূর করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। ব্লকচেন প্রক্রিয়ায় যাচাই করা কার্বন ক্রেডিট টোকেন কিনলে নিজের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো সম্ভব। বিনিয়োগের সেই অর্থ সরাসরি পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগে ব্যয় করা হয়। যেমন- ক্রিপ্টো জগতের বিখ্যাত বিনিয়োগকারী ‘উইংকেলভস টুইনস’ ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জে নিজেদের বিটকয়েন ভা-ারের পাপের ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে ৪০ লাখ ডলার ঢেলেছেন।

মস ডট আর্থ নামের ব্রাজিলের এক পরিবেশ প্রযুক্তি কোম্পানি জলবায়ু সচেতন ক্রিপ্টো অনুরাগীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা লুইস ফেলিপে আডাইমে বলেন, আমরা ক্রিপ্টো বিনিয়োগকে সবুজ বিনিয়োগে রূপান্তরিত করছি।

লুইস আডাইমে মস ডট আর্থের প্রতিষ্ঠাতা। একবার বোতাম টিপে যে কেউ এই কোম্পানির ‘ভেরিফাইড কার্বন ক্রেডিট’ কিনতে পারে। সেগুলোর নাম ‘এম সিওটু টোকেন’।

ব্লকচেন টোকেন ব্যবহার করলে সবার সবুজ বিনিয়োগ সংক্রান্ত লেনদেনের স্পষ্ট রেকর্ড সৃষ্টি হয়। সে অর্থ সরাসরি অ্যামাজন অরণ্য সংরক্ষণের কাজে লাগানো হয় বলে এই কোম্পানি দাবি করে। কোম্পানির মতে, এম সিওটু টোকেন বিক্রির মাধ্যমে অরণ্যে দেড় কোটি ডলার মূল্যের প্রকল্প চালানো সম্ভব হয়েছে এবং প্রায় ৫০ কোটি গাছ বাঁচানো গেছে। ফলে ভবিষ্যতে সম্ভবত আমাদের সব দূষণ সংক্রান্ত লেনদেনের সঙ্গে এমন প্রায়শ্চিত্ত বাধ্যতামূলক করাও হতে হবে।

এমন কয়েকজন পথিকৃৎ ক্রিপ্টো জগতের পাপের প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু এখনো তাদের সংখ্যা কম। মোটকথা বিটকয়েন ও ডিজিটাল মুদ্রা মোটেই ক্ষণস্থায়ী হবে না। ফলে সেগুলোকে টেকসই করতে চাইলে বিনিয়োগকারী, কোম্পানি ও সরকারকে এ খেলার নিয়ম বদলানোর কাজ শুরু করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close