reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ আগস্ট, ২০১৬

দিল্লিজয়ী জুবায়ের!

জুবায়ের হোসেন। ছবি : রাজীব জবরজং

জুবায়ের হোসেন। সখের বসে মোবাইলের অ্যাপ্স বানানো শুরু করেছিলেন ২০১২ সালের দিকে। শখ একসময় ঝোঁকে রূপ নেয়। দেশের জন্য কিছু একটা করার স্বপ্ন। বন্ধু আসিফ কামাল তুর্যকে সঙ্গে নিয়ে আবিষ্কার করলেন মোবাইল অ্যাপ্সের মাধ্যমে ভ্যাট ফাঁকিবাজদের ধরার পদ্ধতি।

তার অ্যাপ্স ব্যবহার করে অতি সহজেই ধরা যায় গ্রাহকের থেকে ভ্যাটের নাম করে যে টাকা নিচ্ছে সেই টাকা সরকার পাচ্ছে কি না। দেশপ্রেমী তরুণদের মধ্যে অ্যাপ্সটা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ডেকে তার কাজের প্রশংসা করেন। শুরু হয় নতুন করে রাজস্ব আদায় অভিযান। মূসক গোয়েন্দাদের অভিযানে অংশ নেয় ভ্যাট চেকার টিম। হাতেনাতে ধরতে থাকে ভ্যাট ফাঁকিবাজদের। প্রতিদিনে কয়েক কোটি টাকার ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায় করতে থাকে দলটি। ভ্যাট চেকারদের উৎসাহ বাড়িয়ে দেয় হাজার তরুণের ভালোবাসা।

মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রোসি নানান নামের এক বড় ভাই জুবায়েরকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে বলেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আইটি খাতে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে গুগলের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘এমব্রিলিয়ন্থ সাউথ এশিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০১৬’ এ নামে অংশ নেন জুবায়ের ও তার ভ্যাট চেকার। বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে। জুবায়ের ও তার বন্ধু তুর্য সব তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করার পর ডাক আসে দিল্লি থেকে। তুর্যের পরীক্ষা চলে আসায় একাই যেতে হয় জুবায়েরকে। ১৯ জুলাই ওড়াল দেন দিল্লির পথে। প্রথম দেশের বাইরে। প্রথম বড় কোনো মঞ্চে। তাই বলে কি ঘাবরে গিয়েছিলেন জুবায়ের? জুবায়ের জানান, প্রেজেন্টেশনে কখনো ভয় লাগেনি তার। কারণ তিনি নিজের কাজে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এ ছাড়া জুবায়ের জানতেন তিনি অংশ নিয়েছেন এমনই ক্যাটাগরিতে যা জনগণ ও সরকারের মধ্যে আইটি সংযোগ তৈরি করছে । তার অ্যাপ্স সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে দিয়েই করিয়ে নেওয়ার কৌশলী ভূমিকা রাখছে।

২৩ জুলাই ২০১৬। নয়াদিল্লির গালা ইভেন্টে অংশ নেন জুবায়ের। তাকে এশিয়ার সেরা সেরা প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়তে হয়েছে। আগের রাতে ঘুম হয়নি একটুও। সারারাত জুবায়েরের চিন্তা কীভাবে দেশকে উপস্থাপন করা যায়। কারণ এখানে কথা বলবে জুবায়ের; কিন্তু সবাই দেখবেন বাংলাদেশ। খুব অল্পতে মূল কথা গুছিয়ে বলার সিদ্ধান্ত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে প্রেজেন্টেশন শেষ করে তিনি। শ্রীলংকা পার্লামেন্ট থেকে একটা দল এসেছে। হায়দরাবাদ পুলিশ এসেছে তাদের প্রজেক্ট নিয়ে। রেজাল্ট ঘোষণার সময় বলা হয় এবারের আসরের সবচেয়ে ছোট মানুষটা জিতে নিচ্ছে বড় পুরস্কার। মঞ্চে ওঠে জুবায়ের। মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে কনফারেন্স রুম। সদা মুখে লেগে থাকা হাসিটা আরো প্রশস্ত হয়। এশিয়ার সবগুলো দেশের আইটিবোদ্ধাদের হারিয়ে পুরস্কার হাতে ওঠে জুবায়েরের, পুরস্কৃত হয় বাংলাদেশ।

স্নাতকরে ছাত্রের মেধায় মুগ্ধ হয় এশিয়া। অনুষ্ঠান শেষ হতেই শ্রীলংকা, কলকাতা ও হায়দরাবাদ পুলিশ থেকে অফার আসে তাদের সঙ্গে কাজ করার। বিনয়ের সঙ্গে তাদের জানিয়ে দেন জুবায়ের, দেশে থেকে দেশ নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন তার।

জুবায়ের দেশের জন্য কাজ করছেন; পুরস্কৃত হওয়ার জন্য নয়। তার পরও এ ধরনের পুরস্কার আত্মবিশ্বাসের পারদ বৃদ্ধি করে। নিজেকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবার দ্বার উন্মুক্ত করে। জুবায়েরের একটু মন খারাপ। দেশকে নিয়ে যারা সারাক্ষণ ভাবেন বলে মনে হয় আসলে তা লোক দেখানো। কারণ আইটি খাতে উন্নতির কথা বলা হচ্ছে। সেখানে এমন একটা আসরে তাদের যেতে হয়েছে নিজ খরচে। যেখানে দেশকে উপস্থাপন করছেন সেখানে দেশের দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণের সব চেষ্টাই বৃথা হয়েছে। একপর্যায়ে অভিমান নিয়েই স্ব-উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন। দেশের দায়িত্বশীলরা তরুণদের দিকে সজাগ দৃষ্টি দিলে তার মতো আরো তরুণ তুর্কি বেরিয়ে আসবেন। দেশকে নিয়ে যারা সত্যিই ভাবেন তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিলে প্রযুক্তির চেহারা পাল্টে যাবে বলে মনে করেন তিনি। তবে সবকিছুর পরও কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেনই। সেই এগিয়ে আসাদের নিয়েই কাজ করতে চান আসিফ কামাল তুর্য ও জুবায়ের হোসেন।

লেখা : মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দিল্লিজয়ী জুবায়ের,অ্যাপ্স
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist