মোবাইলের ছবি পর্নো সাইটে, সাবধান!
মোবাইল ফোনে জরুরি তথ্য ও ব্যক্তিগত ছবি রাখেন অনেকেই। কিন্তু সামান্য ভুলে বা দুর্ঘটনায় আপনার জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপদ।
সম্প্রতি, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সেখানকার নাগরিকদের প্রতি একটি সর্তকতা জারি করেছে। ওই সতর্কবার্তায় সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি মোবাইল ফোনে রাখতে নিষেধ করা হয়।
কেন এই সতর্কতা
গত বছরের আগস্টে স্মার্টফোন হারিয়েছিলেন, কলকাতার নিউটাউনের সুখবৃষ্টি আবাসনের বাসিন্দা সংঘমিত্রা (৩৫)। ফোন হারানোর পর বিষয়টি পুলিশকেও জানিয়েছিলেন তিনি। চাকরি ও কাজের চাপে ফোনটির কথা ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিন আগে সংঘমিত্রার এক বন্ধু তাকে ফোন করে জানান, একটি পর্নো সাইটে তার (সংঘমিত্রার) ছবি পাওয়া যাচ্ছে।
শুনে মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, একটা নয়, একাধিক পর্নোগ্রাফিক সাইটে ছবি রয়েছে সংঘমিত্রার!
সংঘমিত্রা আবারও পুলিশের কাছে যান। তদন্তে পুলিশ কর্মকর্তারা দেখতে পান, সংঘমিত্রার হারানো ফোনে কোনো সিমকার্ড লাগানো হয়নি। কিন্তু ফোনটির গ্যালারি খুলে তার সব ছবি পর্নোসাইটে ব্যবহার করা হয়েছে।
শুধু সংঘমিত্রাই নন, প্রতি দিন এমন অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে রাজ্যের বিভিন্ন থানায়। এরমধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে।
এক গৃহবধূ, তিন সন্তানের মা, সংঘমিত্রার মতোই ফোন হারিয়েছিলেন। ফোনটি যে তরুণ পান তিনি ফোনটি ফেরতও দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। ওই তরুণ গৃহবধূকে ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার প্রস্তাব দেন। তা না হলে গৃহবধূর ছবিগুলো পর্নোসাইটে তুলে দেওয়ার হুমকি দেন। অর্থাৎ ফোনটি ফেরত দেওয়ার আগে ওই তরুণ গৃহবধূর মোবাইলের সব ছবি কপি করেছেন।
এভাবে আরও কিছুদিন ওই গৃহবধূকে চাপ দিতে থাকেন তরুণ। কিন্তু মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেন ওই গৃহবধূ। বর্তমানে ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি, চার তরুণ গ্রেফতারও হয়েছে।
এ বিষয়ে ফোন হারানোর ঝুঁকি ও ভয়াবহতার কথা বলেন সাইবার আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ফোনে নিরাপত্তা বাড়াতে অনেকে অনেক অ্যাপ ব্যবহার করেন। যাতে অন্য কেউ ফোনের গ্যালারি বা তথ্যের হদিশ না পায়। কিন্তু সেই সমস্ত অ্যাপ পুরোপুরি নিরাপদ নয়। এখন সাধারণ মানুষ থেকে অপরাধী, সবাই উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার জানেন। তাই এই সমস্ত অ্যাপের লক ভাঙা অনেকের কাছেই জলভাত।’
সাইবার অপরাধ তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা একাধিক সময়ে দেখেছি, প্যাটার্ন বা পাসওয়ার্ড দিয়ে লক ফোনও চোর বা অপরাধী খুলে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, চোরাই ফোনে থাকা বিভিন্ন যোগাযোগ ও সোশ্যাল অ্যাপ ব্যবহার করছে।’
বিষয়টি কিন্তু খুবই বিপদজনক। কারণ, সাধারণত অ্যানড্রয়েড ফোনে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপ খোলা থাকে। তাই শুধু গ্যালারি নয়, এসব অ্যাপ থেকেও চুরি হয় ছবি।
সে জন্যই হয়তো সাইবার বিশেষজ্ঞরা ফোনে ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য রাখেতে নিষেধ করছেন।
এবার ভাবুন, ঘটনাগুলো ভারতের হলেও তা আমাদের দেশে হবে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে ফোনে ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি রাখার ক্ষেত্রে আপনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন?
পিডিএসও/রিহাব