নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

ইউপি সদস্যদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি শিক্ষিত মেম্বারও নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষিত হলে লোকজন তাদের সম্মান করবে। পাশাপাশি তাদের কাজের ক্ষেত্রের পরিধি বুঝতে পারবে। তারা জনগণের সমস্যা সহজে বুঝবে এবং সমাধানের চেষ্টা করবে। এতে ইউনিয়ন পরিষদের কাজকর্ম গতিশীল হবে।

রোববার ঢাকার কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর মিলনায়তনে স্থানীয় সরকার বিভাগের লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট কর্তৃক (এলজিএসপি-৩) আয়োজিত ‘ইউনিয়ন পরিষদকে অধিকতর কার্যকর ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদেরের সভাপতিত্বে এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

মো. তাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ে উন্নত জীবন এবং সেবাদানে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম আরো জনবান্ধব ও গতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সুশাসনের আওতায় আনতে জনপ্রতিনিধিদের দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন তিনি।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ছোটবেলায় দেখতাম সম্রান্ত পরিবার থেকে চেয়ারম্যান মেম্বার নির্বাচিত হতেন, কিন্তু এখনকার দিনে সেটা আর হচ্ছে না। ফলে যারা ইউনিয়ন পরিষদের নেতৃত্বে আসছেন তাদের দায়বদ্ধতাটুকু তারা বুঝতে পারছে না। কিন্তু সরকার স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালী ও কার্যকরি করতে সব রকমের কাজ করেছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে আরো শক্তিশালী করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

কর্মশালায় বক্তারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আর্থিক সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করে স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিত করা ও স্থানীয় সরকার উন্নয়নে প্রণীত ইউপি আইন-২০০৯ এ বর্ণিত কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদকে গতিশীল করতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর অনুকূলে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি নির্ধারিত ফর্মুলা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া। বার্ষিক বরাদ্দ ও মধ্য মেয়াদি বাজেটে তিন বছরের সম্ভাব্য বরাদ্দ ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে জানিয়ে দিতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় বাড়াতে বিদ্যমান মডেল ট্যাক্স সিডিউল অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা আদায় নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্থানীয় পর্যায়ের আয় থেকে স্থানীয় সরকার বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে অংশ দেওয়া যেতে পারে, সেগুলো হলো আয়কর, ভ্যাট, কর্পোরেট ট্যাক্স, স্ট্যাম্পস, ল্যান্ড রেভিনিউ, ইলেক্ট্রিসিটি, টেলিফোন, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিল। যা স্থানীয় পর্যায়ে পরিশোধ করা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ওয়ার্ড সভা, উন্মুক্ত বাজেট সভায় জনঅংশগ্রহণের মাধ্যমে সব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

ইউপির জনবল ঘাটতি দূর করতে হবে। দ্রুত প্রতিটি ইউপিতে একজন করে কম্পিউটার অপারেটর কাম হিসাব রক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য ইউনিয়নের ১০ জন গ্রাম পুলিশের মধ্য থেকে বাছাই করে তাদের একটি অংশকে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ারও পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। মনিটরিংয়ের জন্য মাঠ প্রশাসনের লোকবল বৃদ্ধি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, দেশের পার্বত্য তিন জেলায় ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরকারি কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন দেওয়া দরকার। কারণ স্থানীয়ভাবে যে অর্থ আয় করার কথা বলা হয়েছে তা পার্বত্য জেলার ইউনিয়নগুলো থেকে আয় করা সম্ভব হয় না।

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (স্থানীয় সরকার), উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার), বাংলাদেশের আট বিভাগ থেকে মোট ১৬ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, আট বিভাগের আট ইউপি সদস্য, আট বিভাগের আট ইউপি সচিব ও সংশ্লিষ্ট ৫ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তারা, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী,মো.তাজুল ইসলাম,কর্মশালা,ইউপি সদস্য
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close