বিশেষ প্রতিনিধি

  ১৫ মার্চ, ২০১৮

পূর্ণ কর্মবিরতি চলছে অফিস-আদালতে

তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বাঙালির অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলনের ঝড় বইছে ঢাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। শুরু হয়েছে সংগ্রাম পরিষদ গঠন। গড়ে উঠছে বাঙালির প্রতিরোধ ব্যূহ। পূর্ণ কর্মবিরতি চলছে অফিস-আদালতে। সামরিক বাহিনীর নির্দেশ উপেক্ষা করে কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে দেশরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীরাও। কালো পতাকা উড়ছে। মাঝে-মধ্যে উড়ছে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা। বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জোরালো হয়ে উঠছে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলেও।

আজ ১৫ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর হাতে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে-বিপক্ষে ঝড় বইছে গোটা পাকিস্তানে। পশ্চিম পাকিস্তানে চলছে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি-পূর্ব পাকিস্তান জ্বলছে ক্ষোভের আগুনে। ঠিক এমনই এক উত্তুঙ্গ দিনে আলোচনার নামে পাকিস্তান বাহিনীর প্রায় সব জেনারেলকে নিয়ে কঠোর সামরিক প্রহরায় বিকেলে ঢাকা এলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান সামরিক গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান। বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হয় না কোনো সাংবাদিক বা বাঙালিকে। বিমানবন্দর থেকে ১৮ পাঞ্জাব ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়নের তত্ত্বাবধানে ইয়াহিয়া সোজা চলে এলেন প্রেসিডেন্ট হাউসে।

অথচ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে তখন নয়া সামরিক বিধি জারির প্রতিবাদে চলছিল স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ। নূরে আলম সিদ্দিকী এতে সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, শাজাহান সিরাজ প্রমুখ। সমাবেশ থেকে বাঙালিকে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান। সকালে বেসামরিক কর্মচারীরা ঢাকার নাখালপাড়ায় সভা শেষে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা করেন চিকিৎকরা। বিকেলে কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডে অনুষ্ঠিত হয় নারী সমাবেশ। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেতার ও টেলিভিশন শিল্পীরা দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করেন। নগরীর মোড়ে মোড়ে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে গণসংগীত ও পথনাটক পরিবেশন করে উদীচী।

খুলনায় শহীদ হাদিস পার্কে এক জনসভায় বাংলা জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান অবিলম্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং জাতীয় সরকার গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি আহ্বান জানান।

করাচিতে আজ সংবাদ সম্মেলন করেন পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি আগের দিনে দেওয়া বক্তৃতার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন প্রযোজ্য হতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া ভুট্টোর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম পাকিস্তানে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দেন পিডিপির নবাবজাদা নসরুল্লাহ, ন্যাপের (ওয়ালী) মাহমদুল হক উসমানী, কাউন্সিল মুসলিম লীগের খাজা মাহমুদ মান্টু, নবাবজাদা শের আলী খান ও খাজা মোহাম্মদ সফদার, ভাওয়ালপুর যুক্তফ্রন্টের মিয়া নিজামুদ্দীন হায়দার, কনভেনশন মুসলিম লীগের সৈয়দ আলী আসগর শাহ, জামাতের মিয়া তোফাইল, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগের হামিদ সরফরাজ, রাওয়ালপিন্ডি আওয়ামী লীগের শামসুদ দোহা প্রমুখ।

করাচিতে এক জনসভায় পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েক রাজনৈতিক নেতা বলেন, ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন তার পিপলস পার্টি এই অঞ্চলে ৩৮ শতাংশ ভোটও পাননি। ক্ষমতা লাভ করার জন্য আওয়ামী লীগই একমাত্র দল। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান ওয়ালী খান সাংবাদিকদের বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের আর কোনো অস্তিত্ব নেই।

রাতে ঢাকায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ বিবৃতিতে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাখ্যা করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের এই আহ্বানে জনগণের নিরঙ্কুশ সাড়া পাওয়া গেছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
১৫ মার্চ,স্বাধীনতা,অগ্নিঝরা মার্চ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist