সাহাদাৎ রানা

  ১৩ মার্চ, ২০২৩

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কষ্টে আছেন মানুষ

ছবি : সংগৃহীত

ধারাবাহিকভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। যাদের পক্ষে অধিক মূল্য দিয়ে পণ্য কেনা খুবই কষ্টসাধ্য। মাসের নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সংসার চালাতে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে নিত্যপণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাপে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। কোনোভাবে আয় ও ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারছেন না তারা। নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। আর সেই আগুনে পুড়ছেন সাধারণ মানুষ।

তিন বছর আগে কঠিন একসময় পার করেছে বিশ্ব। কারণ তখন বিম্বজুুড়ে ছিল করোনার প্রকোপ। বেঁচে থাকার প্রশ্নে সবার মধ্যে কাজ করেছে আতঙ্ক আর ভয়। তবে সেই ভয় আর আতঙ্ককে সঙ্গী করে বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর লড়াই করেছেন মানুষ। সেই লড়াইয়ে মানুষ জিতলেও এটা সত্যি, করোনার কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষদের। গত তিন বছরে অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়েছেন। প্রতিদিনই এমন তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন অনেক শ্রমজীবী মানুষ। শুধু তা-ই নয়, অনেকের কমে গেছে আয়ের পরিমাণও। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ রয়েছেন চরম অস্বস্তিতে।

অবশ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্য নতুন কোনো খবর নয়। বরং বছরজুড়েই নিত্যপন্যের ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে পণ্যের মূল্য। তবে সবাই প্রত্যাশা করেছিল করোনার পর নিয়ন্ত্রণে থাকবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতায় এমনটি হয়নি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্য সাধারণ মানুষকে ফেলেছে চরম ভোগান্তিতে। অথচ বর্তমানে যেসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে নেই যৌক্তিক কোনো কারণ। আজ এক দামে কোনো একটি পণ্য কিনে নিয়ে গেলে পরদিন দেখা যায় সেই পণ্যের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে কয়েক টাকা। এ বিষয়ে দোকানির সহজ ও সেই কমন যুক্তি-চাহিদার চেয়ে পণ্যের জোগান কম। আবহাওয়া খারাপ ইত্যাদি। পাইকারি বাজারের সঙ্গে নেই খুচরা মূল্যের সামঞ্জস্য। বাজার থেকে সাধারণ ক্রেতা যে দামে পণ্য কিনছেন, উৎপাদক সেই দাম কল্পনাও করতে পারেন না। এর সুফল নিচ্ছেন এক প্রতারক মধ্যস্বত্বভোগীরা। যারা প্রতি মুহূর্তে ক্রেতাদের জিম্মি করছেন, জিম্মি করছেন কৃষকদেরও। যারা নিজেদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে পণ্য উৎপাদন করছেন।

এ ক্ষেত্রে শুধু লাভবান হচ্ছেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। আর ঠকছেন কৃষক ও সাধারণ ক্রেতা। আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত। সেই ভাতের চালের দামও বাড়ছে কোনো কারণ ছাড়াই। এ ছাড়া নাভিশ্বাস উঠেছে ভোজ্য তেল, মসলা, ডালসহ নিত্যপণ্যের অসহনী মূল্যবৃদ্ধিতে। ব্রয়লার মুরগির দাম অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। গরিবের মাংস হিসেবে ব্রয়লারকে বিবেচনা করা হলেও এখন আর সেই সুযোগ নেই। অস্বাভাবিক দামের কারণে ব্রয়লার মুরগি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়া। সেই মাছের মূল্যেও আগুন। কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। আর গরুর মাংসেও বরাবরের মতো আগুন। দাম বাড়ায় বাধ্য হয়ে মানুষকে আড়াই শ গ্রাম করে কিনতে হচ্ছে। দোকানিরাও ক্রেতা কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে আড়াই শ গ্রাম ও আধা কেজি করে বিক্রি করছেন। এটা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভালো খবর হলেও সামগ্রিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চিত্রকে নির্দেশ করে, যা আগামীর জন্য কোনোভাবেই শুভ নয়।

এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেন সবার কাছে সাধারণ ঘটনা। মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ঘটনা হলেও বিপরীতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। কাগজপত্রে বাড়লেও বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই। বরং দিন দিন অনেকের কমে গেছে আয়ের পরিমাণ। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ রয়েছেন চরম অস্বস্তিতে। আমাদের দেশে সিন্ডিকেট একটি কমন বিষয়। এই কমন বিষয়টির কাছেই এক প্রকার জিম্মি বাজার, জিম্মি সাধারণ মানুষ।

কৃষক আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। এদের সহায়ক হিসেবে রয়েছেন ব্যবসায়ী শ্রেণি। ব্যবসায়ী ও উৎপাদক শ্রেণি হচ্ছে অর্থনীতির সহযোগী শক্তি। এদের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় প্রয়োজন। বিশেষ করে উৎপাদক শ্রেণির মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা সবার আগে জরুরি। বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে, তারা যে পণ্য উৎপাদন করবেন তার সঠিক ও ন্যায্যমূল্য পাবেন। কোনো সিন্ডিকেটের কাছে তাদের প্রাপ্য মূল্য চলে যাবে না। থাকবেন না জিম্মি হয়ে। আরো একটি বিষয় খুবই জরুরি। সেটা হলো ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি ঠিক মতো বাজার মনিটরিং করা হয় তবে অনেকাংশে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অবশ্য আমরা শুধু এসব ক্ষেত্রে রমজান মাসে কিছু অভিযান দেখি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। শুধু রমজান মাসে নয়, সারা বছরই নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যারা বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব।

‘এখন টিসিবির ট্রাকসেলে ভালো পোশাক পরা মানুষদেরও লাইন ধরতে দেখা যাচ্ছে’ এটা সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী গত বছর বলেছিলেন। এতেই প্রমাণ হয় দেশে নিত্যপণ্যের মূলবৃদ্ধির সঙ্গে আর পেরে উঠছেন না সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে লোকলজ্জার ভয় এড়িয়ে টিসিবির ট্রাকসেলে দাঁড়াতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এমন খবর নতুন হলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির খবর নতুন নয়। কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এমনটা হচ্ছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। যদি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লাগাম টেনে না ধরা যায় টিসিবির ট্রাকসেলে ভালো পোশাক পরা মানুষদের লাইন আর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক

[email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি,কষ্টে আছেন মানুষ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close