সম্পাদকীয়

  ১৩ জুন, ২০২১

বৃহৎ স্বার্থের প্রশ্নে ক্ষুদ্র স্বার্থের বলি

পাশাপাশি দুটি খবর। একটির শিরোনাম ভরাট হচ্ছে ফসলের জমি। অপরটি জয়পুরহাটে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হাজার হেক্টর। একটি অপরটির বিপরীত। একটি সাধারণের পক্ষে, অপরটি বিপক্ষে। একটির মাঝে লুকিয়ে আছে লাখো মানুষের স্বপ্ন, অপরটিতে দুঃস্বপ্ন। বস্তুত স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের মধ্যেই আমাদের বসবাস। তবে দুঃস্বপ্ন এখানে বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি। এ দেশের মানুষ সব দুঃস্বপ্নকে মোকাবিলা করেই সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, মোংলা সমুদ্রবন্দরের পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্পিং করার কারণে গ্রামবাসী আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি ভরাট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি এবং এলাকার পানি নেমে যাওয়ার খাল। বালু ভরাটের নামে সরকারি জমিতে খাল ও কয়েক শ একর মৎস্য চিংড়িঘের ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে। এই ড্রেজিংকাজের সঙ্গে জড়িত আছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও একটি চীনা কোম্পানি।

তথ্য মতে, মোংলা বন্দরে দেশি-বিদেশি জাহাজ আসা-যাওয়ার পথে বড় বাধা হচ্ছে চ্যানেলে ডুবোচর। আর এ ডুবোচরে আটকা পড়ে শিডিউল মোতাবেক পণ্য খালাসবোঝাই করতে পারে না। ফলে অনেক জাহাজ মালিক মোংলা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। আর সে কারণেই মোংলা পশুর চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে।

আমরা জানি, বৃহৎ স্বার্থের প্রশ্নে ছোটখাটো স্বার্থকে বলি দিতে হয়। এখানে মোংলা-পশুর চ্যানেল ড্রেজিং একটি আন্তর্জাতিক নৌবন্দরকে সচল রাখতে সহায়ক। বিষয়টি কতটা জরুরি তা ভেবে দেখা দরকার। আবার প্রকল্পের কর্মপদ্ধতির কারণে ভরাট হচ্ছে ফসলি জমি ও চিংড়িঘের। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টিও হেলাফেলার নয়। যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের সততার সঙ্গে এবং গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। যদিও মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, সমস্যার সত্যতা যাচাই করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ কতটুকু দেওয়া হবে! এ প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা মনে করি, ক্ষতিগ্রস্তদের এমন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় যেন তারা পুনর্বাসিত হতে পারেন।

দ্বিতীয়টি জয়পুরহাটে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টন। এখানে ফসলি জমির পরিপূর্ণ ব্যবহারের ইঙ্গিত রয়েছে। ধারণাটিকে বায়বীয় ধারণা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কেননা জয়পুরহাট এরই মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, উদ্বৃত্তের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ২০২১-২২ মৌসুমে ৬৯ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে রয়েছে উচ্চফলনশীল জাতের ৬৩ হাজার ৩৬০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ৫ হাজার ৩৬০ ও স্থানীয় জাতের ১ হাজার ৭০০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ টন। আশা করা হচ্ছে এবারও এখানকার চাষিরা উৎপাদনে আবারও একটি রেকর্ড গড়ার কাছাকাছি পৌঁছাতে সক্ষম হবেন।

আমরা মনে করি, খাদ্য উৎপাদনে জয়পুরহাট একটি উদাহরণ। তাকে অনুসরণ করতে পারলে যেকোনো সময়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে চমক সৃষ্টি করতে পারে দেশ। কেবল স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়। রপ্তানিকারকের তালিকায় নাম লেখানোর মর্যাদা অর্জনে সক্ষম হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে। তবে এর জন্য দেশের প্রতিটি জেলাকে নিজের মেরুদণ্ডের ওপর দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জনের জন্য শপথ গ্রহণ করতে হবে। জয়পুরহাট পারলে আমরাও পারব না কেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। একই সঙ্গে জয়পুরহাটকে অনুসরণ করে ক্ষুদ্র স্বার্থকে বলি দিয়ে পথের সন্ধান করতে হবে। আশা করি দেশের প্রতিটি জেলা জয়পুরহাটর মতো উদাহরণ সৃষ্টিতে সফল হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বার্থ,সম্পাদকীয়,খাদ্য উৎপাদন,প্রকল্প
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close