এম এ মাসুদ

  ০৮ মার্চ, ২০২১

নিরাপদ থাক নারী, উন্নত হোক অর্থনীতি

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক অংশই নারী। এটি যে শুধু বিশ্বের তা নয়, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের অর্ধেক মানবসম্পদ এই নারী, যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বড় অংশীদার। আর এই অর্ধেক অংশকে বাদ দিয়ে আর্থ-সামজিক উন্নয়ন কখনো কল্পনা করা যায় না। অথচ মোট জনশক্তির অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও নারীদের অধিকার আজও শুধুই কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। ১৯১৪ সালের ৮ মার্চ থেকে কয়েকটি দেশ এবং ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ থেকে সকল দেশে নারীদেরকে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হচ্ছে।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, নারীরা হচ্ছেন আজ কুসংস্কারসহ বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার। নারী অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা হলেও কাঙ্খিত অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। যৌতুক, বাল্যবিবাহ, এসিড নিক্ষেপ, নির্যাতন, কুসংস্কার আর ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন অনেক নারী যা বিভিন্ন ইলেট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় হরহামেশাই চোখে পড়ছে। এই তো গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার আশাশুনিতে স্কুলে টাকা হারিয়ে যাওয়ায় চাল পড়া খাইয়ে এক শিক্ষিকাকে চোর সনাক্ত করে অসম্মান, পরপর মেয়ে হওয়ার দায়ভার নারীদের উপর চাপিয়ে করা হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন , ঘটছে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা। সভ্যতার অগ্রগতি হলেও এখনো দূর হয়নি এমন কুসংস্কার।

শহরাঞ্চলের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নারীদের মজুরি পুরুষের সমান হলেও গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় এর ব্যতিক্রম। গ্রামীণ জনপদে কৃষিক্ষেত্রে শ্রমের যথেষ্ট চাহিদা থাকায় নারী শ্রমিকদের কদর বাড়লেও বাড়েনি তাদের মজুরি। শ্রম ঘণ্টা সমান হলেও পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারীদের মজুরি এখনো প্রায় অর্ধেক। এভাবে ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা যে শুধু বৈষম্য তা নয়, অমানবিকও বটে। অথচ কৃষি তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। গৃহিণী হিসেবে স্বামীর ফরমায়েশ পালন, সন্তানের লালনপালন, স্কুলে পাঠানোসহ রান্না, গৃহসজ্জার মতো কাজগুলো করতে হয় নারীদেরই। সারাদিন অবিশ্রান্ত ও নিষ্ঠার সাথে এমন দায়িত্বগুলো পালন করা সত্ত্বেও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি ক'জন! অর্থনীতিতে তাদের যথেষ্ট অবদান থাকা সত্ত্বেও পারিবারিক চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি ভেবে তাদের নেই স্বীকৃতি, নেই মূল্যায়ন। অথচ পরিবারের গণ্ডির মধ্যে থেকেও অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন এসব নারী।

দেশে নারী শিক্ষার হার, কর্মসংস্হান বাড়লেও নারীরা রক্ষা পাচ্ছেন না যৌতুক নামক অভিশপ্ত প্রথা থেকে, বলি হতে হচ্ছে তাদের এ অভিশপ্ত প্রথার। টাকার অংকে মোহরানার পরিমাণ বাড়লেও তা ওই নাকফুল আর কানের দুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। পিতা-মাতার সম্পদের উপর ন্যায্য অধিকার থাকলেও কখনো পিতা-মাতা ছেলে সন্তানদের লিখে দিয়ে, কখনোবা ভাইয়েরা নামমাত্র মূল্য বা পেশিশক্তির জোরে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন তাদের।

বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষায় রাখছেন তারা মেধার স্বাক্ষর। গুরুত্বপুর্ণ পদেও রয়েছেন নারীরা। তবুও বৈষম্য যেন পিছু ছাড়ছে না। পারিবারিকভাবে অসম অধিকার, কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের উপেক্ষা করা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবার, নারীর ক্ষমতায়নে ইউনিয়ন পরিষদের মতো প্রতিষ্ঠানের সংরক্ষিত পদে (তিন ওয়ার্ড) নারীদের রাখা হলেও অনেক ক্ষেত্রে ওই একজন সাধারণ মেম্বার (এক ওয়ার্ড) বা একজন কাউন্সিলরের মতোই ভাবা হচ্ছে তাদের। অথচ বিগত কয়েক দশকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়েছে দেশ, এগিয়েছে বিশ্ব। স্বাস্থ, শিক্ষা, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে মর্যাদার আসনে আসীন হচ্ছেন নারীরা। কিন্তু সমান, এমনটি বলা যায় না।

যা হোক, নারীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা বা প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নারী, পুরুষ, সমাজ সর্বোপরি রাষ্ট্রের। কেননা, এর সাথে জড়িত রয়েছে আমাদের সামগ্রিক কল্যাণ। নিরাপত্তার পাশাপাশি নারীরা যেন পান সমান সামাজিক মর্যাদা, ন্যায্য পারিশ্রমিক। সেজন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষে নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা ও অধিকার। তবেই মিলবে অর্থনৈতিক মুক্তি, উন্নত হবে সমাজ, উন্নত হবে দেশ, উন্নত হবে বিশ্ব। আর সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : কলামিস্ট ও গণমাধ্যমকর্মী [email protected]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অর্থনীতি,নারী দিবস,মুক্তমত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close