সম্পাদকীয়

  ১১ অক্টোবর, ২০২০

আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে

দেশে একের পর এক নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ধরা পড়ছে ধর্ষক, তবু এ ব্যভিচার থামছে না। সরকারে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ও সব রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন প্রতিবাদমুখর, তার পরও সামাজিক এ ব্যাধি রোধ করা যাচ্ছে না। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ কলঙ্কিত হয়েছে। এরপর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এখলাসপুর গ্রাম, তারপর লক্ষ্মীপুরের রামগতি। ক্ষোভে উত্তাল দেশ। ধর্ষণ-নিপীড়নের প্রতিবাদে রাজপথের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন পালন করছে মানববন্ধন, সমাবেশ ও গণ-অবস্থান কর্মসূচি। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছে দেশের মানুষ। উচ্চারিত হচ্ছে ঘৃণা। কিন্তু তার পরও থেমে নেই নিপীড়ন।

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। গত বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করতে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রস্তাব তোলা হবে। দেশে বর্তমানে দন্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯ নম্বর ধারায়ও ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবনের কথা বলা আছে। তবে এ আইনে ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের কথা বলা আছে। যদিও ভারত, ইরান, চীন, গ্রিস, রাশিয়াসহ এশিয়া-ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদন্ড, শিরচ্ছেদ, প্রকাশ্যে গুলি করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিধান প্রচলিত আছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন। কিন্তু পরের বছর এ সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হন ১ হাজার ৪১৩ জন নারী। আর চলতি বছরে প্রতিদিন অন্তত তিনজন নারী ধর্ষিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই হিসাব অসম্পূর্ণ। পত্রিকায় সব খবর আসে না। সব ভুক্তভোগী থানা-পুলিশের কাছেও যান না। প্রথমত, লোকলজ্জার ভয়ে। দ্বিতীয়ত, তারা ভাবেন, অভিযোগ করেও কোনো লাভ হবে না। বিশেষ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যদি হন কোনো প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। তাহলে তার দায়ভার ক্ষতিগ্রস্ত বক্তির ওপরই বর্তাবে। ফলে কেউ আর আইনের আশ্রয় নিতে চান না।

নারী ও শিশু নির্যাতনের একেকটি ঘটনা কিছুদিন পর পর সারা দেশকে নাড়া দিয়ে গেলেও এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির নজির কম। বিশেষ করে ধর্ষণের বেশির ভাগ মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় ধামাচাপা পড়ে যায়। তা ছাড়া ঠিকমতো ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, সামাজিক জড়তা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বিচারে বিলম্ব হওয়া বিচারহীনতারই সামিল। তবে আইন করলে বা প্রচলিত আইন সংশোধন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান আনা হলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নির্যাতন,ধর্ষণ,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close