এসএইচ জাহিদ, শাবি প্রতিনিধি

  ২৫ মার্চ, ২০২৪

স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক শাবির ‘চেতনা-৭১’ ভাস্কর্য

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে বিজয় উদযাপন করছে একজন ছাত্র। অন্যদিকে একজন ছাত্রী সংবিধানের প্রতীকী বই বুকে জড়িয়ে জানান দিচ্ছে দেশমাতৃকার প্রতি সম্মান। প্রথম দেখাতে মনে হবে দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নির্ভিক প্রহরীর মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দুজন দেশপ্রেমিক। বলছিলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চেতনা ৭১’ভাস্কর্যের কথা।

একাত্তরের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে বৃহত্তর সিলেটের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যটি। ক্যাম্পাসের এ বিল্ডিংয়ের উত্তরদিকে অবস্থিত ভাস্কর্যটির নির্মাণ ব্যয় ছিলো প্রায় ৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। যেটি নির্মাণে ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পাশাপাশি অর্থায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও।

৩০ জুলাই ২০১১ ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন শাবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন। ভাস্কর্যের নকশা প্রণয়ন এবং নির্মাণ করেন ঢাকার নারায়ণগঞ্জে স্থাপিত ‘নৃ-স্কুল অব স্কাল্পচার’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং শিল্পী মোবারক হোসেন নৃপাল।

সৌন্দর্য বর্ধনে ভাস্কর্যটিতে একাডেমিক ভবনগুলোর সাথে মিল রেখে লাল ও কালো সিরামিক ইট দিয়ে তৈরি হয়েছে ভিত্তি বেদির ৩টি ধাপ ৷ তিনটি ধাপের প্রথমটির ব্যাস ১৫ ফুট, মাঝেরটি সাড়ে ১৩ ফুট এবং উপরের ধাপটি ১২ ফুট। প্রত্যেকটি ধাপ ১০ ইঞ্চি করে উঁচু। ধাপ ৩টির উপরে মূল বেদিটি ৪ ফুট উচু, তার উপরে ৮ ফুট উঁচু ভাস্কর্যটির মূল অংশ।

পেরিয়েছে ১৩টি বছর, তবে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে শাবির ‘চেতনা ৭১’ ভাস্কর্য। সময়ের পরিক্রমায় আগত নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে জানান দিয়ে যাচ্ছে তার তাৎপর্যতা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভাস্কর্যটি শিক্ষক, কর্মকর্তা থেকে দর্শনার্থীদের কাছে হয়ে উঠেছে আত্বমর্যাদার প্রতীক।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা যে আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষা বুকে লালন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তারই বাস্তব রূপ যেন ‘চেতনা ৭১’ ভাস্কর্য। দিন পেরিয়ে রাতে এলেও অন্ধকারে মিলিয়ে যায় না ভাস্কর্যটি। অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংগুলো হতে ছুটে আসা আলোর রশ্মি পাশাপাশি সর্বদা চাঁদের আলোয় আলোকিত থাকে এ প্রাঙ্গণ। সন্ধ্যা হলেই পরিণত হয় আড্ডাস্থলে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে টেন্টগুলো বসানো হয় এ ভাস্কর্যকেই কেন্দ্র করে।

ভাস্কর্যটি সম্পর্কে শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুর উদ্দীন রাজু বলেন, “চেতনা ৭১ শুধু একটি ভাস্কর্যই নয়, এটি স্বাধীন বাংলার মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহকও বটে । ভাস্কর্যটি দেখলেই হৃদয়ে ৭১-এর চেতনার মৃদু বহিঃপ্রকাশ ঘটে। শ্রদ্ধা জাগ্রত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লক্ষ শহীদের প্রতি । প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ভাস্কর্যটি দেখবে আর ধারণ করবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, স্মরণ করবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।”

শাবিতে ঘুরতে আসা তরঙ্গ শেখর বলেন, “শাবি ক্যাম্পাস সৌন্দর্যে ভরপুর। যে কয়টি স্থাপনা শাবিকে আকর্ষণীয় ও পরিচিত করে তুলেছে তার মধ্যে ‘চেতনা ৭১’ অন্যতম। সৌন্দর্য্য ছড়ানোর পাশাপাশি ভাস্কর্যটির রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস। যে ইতিহাস ‘চেতনা ৭১’ কে মানুষের হৃদয়ের অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।”

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চেতনা-৭১ ভাস্কর্য,শাবি,সার্বভৌমত্ব,স্বাধীনতা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close