ঢাবি প্রতিনিধি

  ৩০ নভেম্বর, ২০১৮

পথনাটক পরিষদের ‘শীতকালীন পথনাটক প্রদর্শনীর’ উদ্বোধন

বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের উদ্যোগে ‘শীতকালীন নিয়মিত মৌসুমী পথনাটক প্রদর্শনী ২০১৮’- এর ২৬তম মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে শুক্রবার বিকেলে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ এর উদ্বোধন করেন।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা রুখে দাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে এ বছর এই আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়।

১৯৯২ সাল থেকে শুরু হয়ে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ প্রতিবছর এ আয়োজন করে আসছে। এ বছর ৩০ নভেম্বর থেকে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত প্রতি শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানসহ সারাদেশব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে।

বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, জাপানের প্রগতিশীল লেখক সংঘের সম্পাদক নাওমি ওয়াতানাবে, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আখতারুজ্জামান, ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য লাকী ইনাম, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বারি, সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য রতন সিদ্দিকী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গিয়াস।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মামুনুর রশীদ বলেন, পথনাটক নিয়ে আমরা বিশাল আন্দোলনে নেমেছিলাম। আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশে পথনাটককে আমরা একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পেরেছি যা বিশ্বের কোথাও নেই। বিভিন্ন সময়ে এই পথনাটক প্রতিবাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পথনাটক একটি উচ্চাঙ্গের আঙ্গিক কিন্তু এ আঙ্গিক অনেক ব্যবহারের ফলে অনেক স্থুল হয়ে পড়েছে। পথনাটকের মাধ্যমে আমরা মানুষের অনেক কাছে যেতে পারি। এ সময় তিনি এই পথনাটক প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আসুক এটাই আমরা চাই। এই সরকারের মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চায় যেসকল সমস্যা রয়েছে, তা সমাধান হবে আশা করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের সমস্যা দুর হয়নি। শুধু ইশতেহারে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সমস্যাগুলোর কথা রাখার দাবি করলেই হবে না, সেগুলো বাস্তবায়নে নির্বাচিত সরকারকে চাপ দিতে হবে।

গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি হলো সংস্কৃতি এবং কাঠামো হলো রাজনীতি। সংস্কৃতির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করবেন, তারা যেন ইশতেহারে সংস্কৃতির উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে অন্তত এক শতাংশ বরাদ্দ রাখার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেন।

তিনি বলেন, এদেশের সংবিধান রচয়িতা ড. কামাল যখন ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলেন, তখন আমরা মনে করেছিলাম এটি একটি বিকল্পধারার প্রগতিশীল সংগঠন। কিন্তু এই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ২৫ জন স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দিয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। ড. কামালসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা এই যুদ্ধাপরাধীদের দলে যোগ দিয়েছেন। এরপরেও তারা কিভাবে বলেন যে, তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করেন? তারা কি মানুষকে বোকা ভাবেন? মানুষ সময়মত আপনাদের বোঝাবে যে, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে চায়। আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশে আমরা কাজ করে যাব।

সভাপতির বক্তব্যে মান্নান হীরা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের শক্তির কথা নয়, চেতনার কথা বলি। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও দুঃখের সাথে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সম্মান বর্তমানে ‘হরিলুটের ব্যাপার’ হয়ে দাড়িয়েছে। আজ আমাদের সংবিধান প্রণেতা স্বাধীনতাবিরোধিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ করেও একজন সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধিদের সাথে রয়েছেন। এটা অত্যন্ত লজ্জার। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্যরা অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এরপর জাতীয় সংগীত এবং গণসংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মান্নান হীরার রচনা ও পরিচালনায় ‘মুর্খ লোকের মুর্খ কথা’ এবং সাইফ আহমেদের রচনা ও আহমেদ গিয়াসের নির্দেশনায় ‘বোধোদয়’ নাটক দুটি পরিবেশন করা হয়। নাটক দুটি পরিবেশন করেন যথাক্যমে আরণ্যক নাট্যদল এবং সুবচন।

পিডিএসও/অপূর্ব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পথনাটক,পরিষদ,উদ্বোধন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close