সম্পাদকীয়

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাংলাদেশের অর্জন

কিছু ডাটা ও কিছু তথ্য দিয়ে শুরু করা যাক। তা না হলে অনেক কিছুই বাদ পড়ে যাবে। নিন্দুকেরা গালমন্দও করতে পারে। আর গালমন্দ হজম করার মতো মানসিকতায় এখনো পৌঁছাতে পারিনি। তাই তথ্য দিয়েই শুরু। তথ্য ১. গত এক বছরে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়েছে দুই ধাপ—১৩৮ থেকে ১৩৬ (স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান—এই তিনের নির্দেশিকায় তৈরি সামষ্টিক সূচকই মানব উন্নয়নের ব্যারোমিটার)। তথ্য ২. গত পাঁচ বছরে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়েছে সাত ধাপ। তথ্য ৩. ১৯৯০ থেকে ২০১৭, এই ২৭ বছরে বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন সূচকের মান বেড়েছে ৫৭ শতাংশ।

বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন পরিসংখ্যান-২০১৮ বিশ্বমঞ্চে এসে উপস্থিত হলো গত শুক্রবার। প্রায় ১৯০টি দেশ একযোগে তাকে স্বাগত জানাতে ভুল করেনি। পরিসংখ্যানের পক্ষে যে তথ্য প্রকাশ করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ১৮৯টি দেশের মানব উন্নয়নের বিভিন্ন মাত্রিকতার মান, তাদের অগ্রগতি, মানব উন্নয়নের অসমতা ও বৈষম্য এবং মানব বঞ্চনার স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়েছে এই তথ্যে। এখানে বাংলাদেশের অর্জন ঈর্ষণীয়ও বটে। এ অর্জন স্বাভাবিক বলে উচ্চারিত হলে তাকে অবমূল্যায়ন করা হবে। আবার অস্বাভাবিকও বলা যাবে না। এটি আমাদের সামষ্টিক শ্রম, মেধা ও মননের পরিচর্যার ফসল।

আমরা আমাদের আয়ূ বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। এ মুহূর্তে আমাদের গড় আয়ু ৭৩ বছর; সেখানে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ায় ৬৯ বছর। এখানে শিশু মৃত্যুর হার হাজারে ২৪, এবং অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর হার ৩৪; যেখানে উন্নয়নশীল বিশ্বে এ সংখ্যাদ্বয় ৩৩ ও ৩৪। বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ মানুষই সুপেয় পানি পান করে। উন্নয়নশীল দেশে সই সংখ্যা ৮৬ শতাংশ। এ ছাড়াও মানব উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রে নারী পুরুষের ক্ষমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক। প্রাথমিক শিক্ষায় তো এই অগ্রগতি প্রশংসার দাবি রাখে। এখানে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তির হার বেশি। উন্নয়নশীল বিশ্বে যা আমাদের চেয়েও কিছুটা কম।

মাথাপিছু অনেক কম আয় নিয়েও বাংলাদেশের এই অর্জন। উন্নয়নশীল দেশের গড় মাথাপিছু আয় যেখানে ১০ হাজার ডলার এবং ভারতে ছয় হাজার—বাংলাদেশে তা মাত্র ৩ হাজার ডলার। এ থেকেই বোঝা যায় যে, অন্যদের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক দক্ষতার সঙ্গে তার আয়কে সামাজিক রূপান্তরে সক্ষম হয়েছে। তবে ঘাটতিও যে নেই—তাও নয়। এই ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন আরো বেশি মনযোগের। প্রয়োজন আরো বেশি সামাজিক বিনিয়োগের। কেবল ভৌতকাঠামোই মূলধন নয়, মানব মূলধনও একটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মূলধন। এই অর্জন নিশ্চিতভাবে আমাদের গর্ব এবং অহংকার। এই অহংকারের আলোয় আলোকিত হয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে—এটাই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,বাংলাদেশ,উন্নয়ন,মাথাপিছু আয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close