আকিব হৃদয়, কিশোরগঞ্জ

  ১৭ এপ্রিল, ২০২০

কিশোরগঞ্জে শিশুকে গরম ডিম ঢুকিয়ে নির্যাতন

অভিযুক্ত আটক

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নে ১০ বছরের এক শিশুকে দোকানে উল্টো করে টানিয়ে পায়ুপথে গরম ডিম ঢুকিয়ে নির্যাতন করার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে শিশুটির মুখে একের পর এক গরম আলু ঢুকিয়ে গামছা দিয়ে নাক-মুখ বেঁধে বেধম পেটানো হয়।

গত সোমবার (১৩ এপ্রিল) রাতে শিশুটিকে নির্যাতন করেন গুনধর বাজারের মানিক হোসেন (২৪) নামে এক দোকানদার।

তবে শিশুটিকে মেরে ফেলার ভয় দেখানোয় ঘটনার জানাজানি হয় বুধবার রাতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযুক্ত মানিককে আটক করেছে। তিনি গুনধর গ্রামের খাঁ হাটির মৃত আবদুল আওয়ালের ছেলে। অন্যদিকে নির্যাতিত শিশুর নাম শাহনূর। সে গুনধর সাহেব বাড়ির সাখাওয়াত মিয়ার ছেলে।

এলাকাবাসী জানায়, বাবার সাথে শাহনূরের মায়ের ছাড়াছাড়ি হয় আট বছর আগে। এরপর থেকেই শিশুটির মা তার আরও দুই সন্তান নিয়ে মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। শাহনূর নানির বাড়িতে থেকে ওই দোকানদারের ফরমায়েশ করতো। বিনিময়ে মাঝেমধ্যে খাবার পেত।

সোমবার রাতে শাহনূরকে পঁচা ভাত খেতে দেওয়া হয়। ভাত না খেয়ে ফেলে দেওয়ায় মানিক তার ওপর অমানবিক এই নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে মাথায় পানি ঢেলে কিছুটা সুস্থ করে বলে দেওয়া হয়—এই ঘটনা কাউকে জানালে মেরে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া হবে।

এ ঘটনা ভয়ে কাউকে জানায়নি শাহনূর। বুধবার বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি পরিবারের লোকজনকে জানায়।

লোমহর্ষক এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় এখন তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়। এলাকাবাসী ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার বিচার চাইছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহনূরের নানি রুমু বেগমের (৭০) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। গরম ডিমের নির্যাতনে পায়ুপথের আশপাশ ঝলসে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে ক্ষতের।

রুমু আরও জানান, শাহনূরকে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। করোনার কারণে তার ভর্তি নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে মানিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, শাহনূর আমার দোকানের টাকা চুরি করেছিল, এজন্য কয়েকটি ছেলে তাকে এই শাস্তি দিয়েছে। আমি শুধু কয়েকটি চড় থাপ্পড় দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় লিখবেন না। আমি শিশুটির পরিবারকে ওষুধপত্র কিনে দেবো।

এ বিষয়ে রাত ৮টার দিকে করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বলেন, লোকমুখে শুনে আমরা সন্ধ্যার দিকে অভিযান চালিয়ে মানিককে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। তবে এ বিষয়ে এখনো পরিবারের পক্ষে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কিশোরগঞ্জ,নির্যাতন,ডিম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close