নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ অক্টোবর, ২০১৯

বাসা তো নয় যেন ক্যাসিনো

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় মিনি বার, জুয়ার সামগ্রী

চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। বাসার ভেতরে মিনি বারের সন্ধান পেয়েছেন তারা।

গতকাল সন্ধ্যায় ডিএনসির সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, গতকাল রোববার বিকেলে গুলশান-২ নম্বরের ৫৭ নম্বর রোডে ১১/এ নম্বর বাসায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ মদ, সিসা, অল্প পরিমাণ গাঁজা ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। তার বাসার তৃতীয়তলা ও ছাদে এসব পাওয়া যায়। বাসার ছাদকে মিনি বারের মতো সাজানো হয়েছে। তিনি বলেন, ক্যাসিনো কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাড়ির কেয়ারটেকার।

কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই : আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আরেক চিত্রনায়ক অকালপ্রয়াত সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডেও তার নাম জড়িত। বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক পাচারসহ বেশ কটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ৫০টির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে বাংলাদেশে আসে। তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভূত। তারা ‘বাহাইয়ান’ সম্প্রদায়ের লোক। ‘বাহাইয়ান’কে সংক্ষেপে ‘বাহাই’ বলা হয়। উপমহাদেশের উচ্চারণে এই ‘বাহাই’ পরে ‘ভাই’ হয়ে যায়।

জানা যায়, আজিজ মোহাম্মদ নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি নিয়ে অনেকেই মনে করেন গডফাদার বলেই তাকে ভাই বলে ডাকা হয়। সাধারণত মাফিয়া ডন বা গডফাদারদের ভাই ডাকে তাদের অনুগতরা। কিন্তু আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গডফাদার বলা যায় কি না, সেটা নিয়ে তর্ক থাকলেও ভাই শব্দটি সে কারণে আসেনি। ‘ভাই’ তাদের বংশপদবি। তাদের পরিবারের সবারই নামের শেষে ভাই পদবি আছে।

পারিবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই বেশ ধনাঢ্য ব্যক্তি। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে তার হোটেল রিসোর্টের ব্যবসা রয়েছে। তিনি নব্বইয়ের দশকে অর্থলগ্নি করেন সিনেমায়। ৫০টির বেশি সিনেমায় তিনি বিনিয়োগ করেন। যেহেতু সিনেমায় লগ্নি করেন, তাই এই সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সালমানের পরিবারের সখ্য গড়ে ওঠে। একটি পার্টিতে সালমান সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। সেই পার্টির একপর্যায়ে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু খেতে নিলে সালমান ক্ষিপ্ত হয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে চড় মেরে বসেন। তার এক সপ্তাহ পর রহস্যজনক মৃত্যু হয় সালমান শাহর। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলা হলেও গুঞ্জন উঠে এটি একটি হত্যাকা-। তখনই চড় দেওয়ার ব্যাপারটি আলোচিত হয়। ধারণা করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাই হয়তো সালমানের মৃত্যুর সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত।

১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে আরেক চিত্রনায়ক অকালপ্রয়াত সোহেল চৌধুরী খুন হন। এই হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম জড়িত। এ হত্যা মামলায় আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেফতারও করে গোয়েন্দা পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের বেশির ভাগই আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর। একটি খুনের ঘটনায় একসঙ্গে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর অংশ নেওয়া ছিল বিরল ঘটনা। যদিও সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হয়ে যায়। এরশাদের প্রেমিকা মেরির প্রতি আজিজের আকৃষ্ট ছিলেন। ফলে এরশাদ তাকে জেলে নিয়েছিলেন এমন মুখরোচক গল্পও প্রচলিত আছে তার নামে। প্রচার আছে, মিডিয়ার অনেক তরুণীর সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের গল্প। তবে আজিজ মোহাম্মদ নিজে মিডিয়ার আলোচনা এবং তাকে ঘিরে মিথ পছন্দ করতেন। প্রায়ই বলতেন, এত লোকের মধ্যে আমাকেই গডফাদার বলা হয়, তাই বা কম কীসে!

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ক্যাসিনো,ডন,আজিজ মোহাম্মদ ভাই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close