নড়াইল প্রতিনিধি

  ০২ জানুয়ারি, ২০১৮

শিল্পী সুলতানের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা

শিল্পী এস এম সুলতানের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা প্রদর্শন করলেন সুলতান ভক্ত নড়াইল শহরের সারজান। নিজের ফার্মেসির সামনে বিভিন্ন খবরের কাগজে প্রকাশিত সুলতানের প্রতিবেদন, ফিচার এবং তার কাছে সুলতানের লেখা কয়েকটি চিঠির কপি প্রদর্শনের আয়োজন করেছেন তিনি। শিল্পী সুলতানের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার এ আয়োজন সুলতান মেলায়। মেলাপ্রাঙ্গণ থেকে তার দোকানের দূরত্ব মাত্র কয়েক শ গজ। সুলতান ভক্ত সারজানের এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।

জানা যায়, শিল্পী সুলতান সারা জীবনই কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওঠবস ও চলাফেরা করেছেন। একই এলাকার মানুষ হওয়ায় সারজান বয়সে ছোট হলেও অকৃতদার এই সুলতানের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। শিল্পী তার জীবদ্দশায় প্রায় প্রতিদিনই এই সারজানের দোকানে এসে বসতেন এবং গল্প করতেন। প্রয়াত এই শিল্পীর যেকোনো অনুষ্ঠানের খবর পেলে সেখানে ছুটে যান এই সুলতান ভক্ত সারজান। নিজের দোকানেও শিল্পীর ছবির পাশে নিজের একটি ছবি বাঁধাই করে রেখেছেন।

যে সুলতান একদিন বিশ্বকে কাঁপিয়েছেন, দেশকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, সেই বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান অনেক সময়-অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অভাব তাকে তাড়া করে ফিরেছে। সুলতানের নিজের জন্য ওষুধ, প্রিয় শিশু ও পশুপাখির জন্য, ঢাকায় যেতে, বাড়ির অতিথিসহ বিভিন্ন কারণে হাতে গোনা আপন দুই-একজনের কাছ থেকে টাকা ধার করেছেন, তাদের একজন হচ্ছেন নড়াইল শহরের সারজান।

শিল্পী সুলতান শহরের রূপগঞ্জ এলাকার তাহিদুল ইসলাম সারজানের মিতালি ফার্মেসির ওষুধের দোকানে প্রায় প্রতিদিনই বসতেন। অত্যন্ত আপন মানুষের মতো তার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করতেন। অসুস্থতা বা কাজের কারণে অনেক সময় তিনি আসতে পারতেন না। শিল্পীর কাছে অর্থ না থাকলে তার (সুলতানের) কাছের মানুষ বলে পরিচিত বানছা বিশ্বাস বা ওসমান, কখনো দুলাল সাহা বা রহমানকে বাজার করতে সারজানের কাছে চিঠি লিখে বাজারের ব্যবস্থা করে দিতে বলতেন। সেসব চিঠির ভাষা আর পাঁচটি চিঠির ভাষার মতো নয়। শিল্পীর মৃত্যুর এতগুলো বছর পরেও তিনি এসব চিঠি যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। শিল্পীর লেখা কয়েকটি চিঠি প্রদর্শনীতেও রাখা হয়েছে।

সুলতান একটি চিঠিতে লিখেছেন, ‘সারজান, পশুপাখিদের জন্য যন্ত্রণা আমার সহ্য হচ্ছে না, নিতান্ত অর্থাভাবে আছি। কোন রকম বাজার হচ্ছে না। কিছু ব্যবস্থা কর।’ সুলতানের মৃত্যুর কিছুদিন আগে ১৯৯৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর লিখেছেন, ‘সারজান, বিষ্ণুকে পাঠালাম। অন্তত তিন শত টাকার সাহায্য করিও।’ একই সালের সালের ১২ সেপ্টেম্বর লিখেছেন, ‘সারজান কিছু মনে কর না। এই অভাব একটু সুস্থ হলে আর থাকবে না। কারো কাছে বলা যায় না। চালিয়ে নিও।’ ১৯৯০ সালের ৩ এপ্রিল এক চিঠিতে লিখেছেন, ‘শূন্যহাত। বাজার খরচ নাই। দুলালকে (সুলতানের পালিত পুত্র) ঢাকা পাঠাইয়াছি। হয়তো শিল্পকলা একাডেমী থেকে এক মাসের টাকা পাওয়া যাবে। তিন দিন পর আসবে। তুমি অন্তত দুই শত টাকা ওসমানের (সুলতানের বাসার কেয়ারটেকার) মারফত সাহায্য করিও।’

অন্যের জন্য লিখেছেন, ‘সারজান, কুড়ি টাকা রহমানকে দিয়া দিবা। অন্যথায় ওর বাজার হবে না। কদিন তোমাকে বার বার বিরক্ত করছি। মনে কিছু করিও না।’ এর পরদিন অন্য এক চিঠিতে লিখেছেন, ‘সারজান, বানছা বিশ্বাস আমাদের বাড়িতে বছরভরে কাজ করে। খুবই বিশ্বস্ত। ভালো মানুষ। ওর জন্য ৫০ টাকা প্রয়োজন।’ ১৯৯০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর লিখেছেন, ‘সারজান চাল কিনতে হবে। জীবজন্তুর দুপুরে রান্না হবে না। কালকের মত একটু কষ্ট করে একটা ব্যবস্থা করিও।’ একই বছরের ৩ অক্টোবর লিখেছেন, ‘সারজান, আজকের বাজারের কোন ব্যবস্থা হল না। একটু কষ্ট করে দেখ সম্ভব হয় কি না। অন্যথায় জীবজন্তু নিয়ে মুশকিল, ওদের জন্য একটু ভাব কিছু করতে পার কি না।’ এ রকম শতাধিক চিঠি ৫-৬ বছর ধরে শিল্পী সুলতান তার প্রিয় সারজানের কাছে লিখেছেন। সাহায্যের এসব চিঠির জন্য সারজানের কখনো আপত্তি ছিল না বরং তিনি গর্ববোধ করেন। অনেক চিঠি হারিয়ে ফেললেও ৩০টির মতো চিঠি তিনি লেমিনেটেড করে বাঁধিয়ে রেখেছেন।

তাহিদুল ইসলাম সারজান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সুলতান কাকু আমাকে নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। মাঝে মাঝে আমি তাকে সাহায্য করতাম। সবচেয়ে বড় কথা হলো, একজন মহান ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পেরে নিজেকে গর্ববোধ করি। তার প্রতি এই শ্রদ্ধাবোধ এবং ভালোবাসা থেকেই এ প্রতিবেদন ও চিঠি প্রদর্শন করেছি।’

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিল্পী এস এম সুলতান,সুলতান ভক্ত সারজান,ভালোবাসা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist