প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সাপের বিষেও পরিবর্তন!

মাঝরাতে মায়ের চিৎকারে বাবা ঘুম থেকে উঠে দেখেন দেড় বছরের শিশুপুত্রের মাথার সামনে কুণ্ডলী পাকিয়ে সাপ। ছেলেকে রক্ষা করতে বাবা সাপটিকে সরাতে গেলে বাবার হাতে কামড় পড়ে। সেই রাতেই বাবাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কালো রঙের বিষধর সাপ ‘কালাচ’, বেশকিছু অঞ্চলে কালচিতিও বলা হয়। চিতি সাপের সঙ্গে মিল থাকলেও এরা সাংঘাতিক বিষধর। যে চারটি সাপের কারণে ভারতে সর্বাধিক মৃত্যু হয় তাদের অন্যতম এ জাতের সাপ।

পর দিন সকালে আবার মায়ের বিভিন্ন শারীরিক অস্বস্তি শুরু হয়। মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানা যায় সাপটি মাকেও কামড়ে ছিল। ঘটনাটি ভারতের ঝাড়গ্রামসংলগ্ন এক গ্রামের। গতকাল বুধবার কলকাতার অনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানায়।

বিষাক্ত প্রাণী ‘পয়জনাস’ নয়, ‘ভেনোমাস’। যেসব প্রাণীর কামড়ের জন্য বিষ শরীরে যায় এবং বিষক্রিয়া দেখা যায় তারা ভেনোমাস। আর যাদের খেয়ে ফেললে তাদের শরীরের সঞ্চিত বিষ আমাদের দেহে আসে তারা পয়জনাস। তবে গবেষকরা বলেন, জীব জগতের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাপের বিষের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যেও আসছে নানা পরিবর্তন।

সাপেদের ওপরের চোয়ালে চোখের ঠিক পেছনে থাকে তাদের বিষথলি যা লালাগ্রন্থির পরিবর্তিত রূপ। আর সাপের বিষ হলো বিশেষভাবে প্রস্তুত করা জুটক্সিন সমৃদ্ধ ‘লালা’। প্রচলিত মতবাদ অনুসারে, প্রায় ১০ কোটি বছর আগে টক্সিকোফেরা সরীসৃপ গ্রুপ থেকে বিষের উৎপত্তি, তারপর বিস্তার। ভারতে পাওয়া ৩০০-এর অধিক সাপের মধ্যে মাত্র ৫০টির বেশি বিষধর। মূলত কেউটে, চন্দ্রবোড়া, ফুরসা ও কালাচের কামড়ে মৃত্যুর হার সর্বাধিক।

এদের ‘মহাচার’ বলা হয়। বিষের শ্রেণিবিন্যাস মূলত তাদের ক্ষতিসাধন করার স্থানের ওপর হয়। নিউরোটক্সিন (কালাচ, শাখামুঁটি) যা মূলত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে নষ্ট করে। মায়োটক্সিন (র‌্যাটল স্নেক) যা মাংসপেশিকে নষ্ট করে এবং সাইটোটক্সিন যার মধ্যে কোষপর্দা-ধ্বংসকারী (গোখরো), হৃদযন্ত্রের ওপর ক্ষতিসাধনকারী (কোবরা) এবং রক্তকোষকে (চন্দ্রবোড়া) ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে। সাপের বিষ মূলত প্রোটিন, এনজাইম (ট্রান্সফারেজ, হাইড্রোলেজ ও অক্সিডোরিডাকটেজ) নিয়ে গঠিত।

সাপের বিষ তাদের বয়স, খাবার ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে তো একই প্রজাতির বিভিন্ন সাপের বিষথলিতে বিষের তারতম্য হয়। তাছাড়া প্রকৃতিক পরিবর্তন এবং প্রাণী জগতের বিবর্তনের কারণে সাপের বিষের গাঠনিক পরির্বতন আসছে। প্রচলিত অনেক অ্যান্টিভেমন এখন সর্পদংশনের ওষুধ হিসেবে কাজ করছে না।

সারা ভারতে মূলত ‘মহাচার’-এর কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম তৈরি হয়। কলকাতার বেঙ্গল কেমিক্যালেই দেশের প্রাচীন অ্যান্টিভেনম ইউনিট ছিল। হিমাচলের কসৌলি, মহারাষ্ট্রের হ্যাফকিন, চেন্নাইয়ের কিং ইনস্টিটিউট পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম তৈরি করে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের সাপেদের বিষের গুণগত পার্থক্য তৈরি হয়েছে যা থেকে আরো জটিল হচ্ছে অ্যান্টিভেনম তৈরির প্রক্রিয়া।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাপ,সাপের বিষ,বিষধর সাপ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close