কূটনৈতিক প্রতিবেদক

  ২১ জুন, ২০২০

বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিশ্বে এখন শরণার্থীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে শরণার্থী সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ। ২০১৯ সালের শেষে শরণার্থীর মোট সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৯৫ লাখ। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বে শরণার্থী ছিল ৭ কোটি ৮ লাখ। এ হিসাবে এক বছরে শরণার্থী বেড়েছে ৮৭ লাখ।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। ইউএনএইচসিআরের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে।

গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগে এত মানুষ কখনো গৃহহারা ছিলেন না। একই সঙ্গে বিশ্বে শরণার্থী সংকটের বর্তমান চিত্র বলে দিচ্ছে, শরণার্থীদের দুর্দশার দ্রুত সমাপ্তির আশা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ৯০-এর দশকে, প্রতি বছর গড়ে ১৫ লাখ মানুষ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরতে পারতেন। চলতি দশকে এ সংখ্যা কমে ৩ লাখ ৯০ হাজারে পৌঁছেছে। এটা প্রমাণ করছে শরণার্থী সংকটের স্থায়ী সমাধান ক্রমশ জটিলতর হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৫৭ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন নিজ দেশের ভেতরে। বাকিরা বাধ্য হয়েছেন দেশ ছাড়তে, যার মধ্যে ২ কোটি ৯৬ লাখ শরণার্থী, আর ৪২ লাখ মানুষ অন্য কোনো দেশে আশ্রয়ের আবেদন করে ফলের অপেক্ষা করছেন। অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও মঙ্গোলিয়ার মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি সংখ্যক শিশু এখন বাস্তুচ্যুত। তাদের সংখ্যা ৩ কোটি থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ, যার মধ্যে লাখ লাখ শিশু অভিভাবকহীন। এ ছাড়া বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিমাণ গত ১০ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

৮০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ এমন দেশে রয়েছেন, যেসব দেশ তীব্র খাদ্য সংকট ও অপুষ্টি সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে অনেক দেশ জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি শরণার্থী দীর্ঘমেয়াদি সংকটে আটকে আছে। প্রতি ১০ জনে গড়ে আটজনেরও বেশি শরণার্থী এখন আছে উন্নয়নশীল দেশে। সাধারণত প্রতিবেশী দেশেই তারা আশ্রয় নেন।

প্রতিবেদনে শরণার্থী বেড়ে যাওয়ার দুটি প্রধান কারণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, নতুন বাস্তুচ্যুতির বিভিন্ন ঘটনা, বিশেষত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল, ইয়েমেন ও সিরিয়ার সংঘাত। সংঘাতপূর্ণ আফ্রিকায় গত ৯ বছরে ১ কোটি ৩২ লাখ সিরীয় শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী অথবা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। এ সংখ্যা বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতির ছয় ভাগের এক ভাগ। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে নিজ দেশের বাইরে অবস্থানরত ভেনেজুয়েলার মানুষের পরিস্থিতি সম্পর্কে গত এক বছরে পাওয়া বিশদ তথ্য। তাদের অনেকেই আইনত শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত নন; কিন্তু সুরক্ষা ও সহায়তা তাদেরও প্রয়োজন।

প্রতিবেদন সম্পর্কে শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, পরিবর্তিত বাস্তবতায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ঘটনাই যে শুধু বেড়েছে তা নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে। নিজ দেশে প্রত্যাবাসন কিংবা নতুন কোথাও ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কোনো আশা ছাড়া এসব মানুষ বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে অনিশ্চয়তায়, এটা মেনে নেওয়া যায় না। শরণার্থীদের জন্য প্রয়োজন একেবারে নতুন ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা সংঘাতগুলোর সমাধানে চাই দৃঢ়প্রত্যয়।

উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ৫৫/৭৬ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ২০ জুন ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস’ পালিত হয়। এখানে উল্লেখ্য, ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত সংঘটিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর নানা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে শরণার্থীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকে। কিন্তু তখন পর্যন্ত শরণার্থী বলতে কী বোঝায়, শরণার্থী কারা, তাদের অধিকার কী কী এবং তাদের প্রতি আশ্রয় প্রদানকারী রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী কী এবং নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্য দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব-কর্তব্য কী হবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত আন্তর্জাতিক কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা বা সবর্জন গ্রহণযোগ্য কোনো সনদ ছিল না। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে শরণার্থীদের ক্ষেত্রেও মানুষ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার প্রাপ্য বলে স্বীকার করা হলেও সুনির্দিষ্টভাবে শরণার্থীদের জন্য কোনো অধিকার সনদ তখনো ছিল না। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে ১৯৫০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জাতিসংঘের একটি স্বতন্ত্র অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী ঞযব টঘ জবভঁমবব অমবহপু হিসেবে পরিচিত। এ টঘঐঈজ-এর কার্যক্রমকে একটি আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের আওতায় আনার জন্য ১৯৫১ সালে একটি আন্তর্জাতিক শরণার্থী কনভেনশন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে স্বাক্ষরিত হয় যা আন্তর্জাতিকভাবে ‘জাতিসংঘের শরণার্থী সনদ’ হিসেবে পরিচিত। এ সনদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আরেক অধিবেশনে পরের বছর থেকে অর্থাৎ ২০০১ সাল থেকে ২০ জুন ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close