ফজলুর রহমান মুক্তা, বাঘা (রাজশাহী)

  ৩০ মার্চ, ২০২০

করোনা আতঙ্কে বাঘায় গম ও আম নিয়ে বিপাকে চাষিরা

বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নতুন আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বর্তমানে এটি চীনের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬ লাখ। বাংলাদেশেও মারা গেছে পাঁচজন। ফলে দেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করাসহ অকারণে বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করে সরকারিভাবে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষসহ সীমান্তঘেষা বাঘা উপজেলার গম ও আমচাষিরা।

জানা যায়, করোনা আতঙ্কের কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের প্রধান অর্থকরী ফসল আম বাগান পরিচর্যা করতে পারছে না। অপরদিকে, জমিতে গম পেকে গেলেও লোকবলের অভাবে ঘরে তুলতে পারছে না। উপজেলার সব জায়গায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এক সঙ্গে চার থেকে পাঁচজন মানুষ অবস্থান করলে কিংবা মাস্ক ব্যবহার না করলে তাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। নিম্নআয়ের মানুষ ১০০ টাকা আয়ের জন্য দোকান খুললেই চায়ের কাপ, চুলা, টেবিল, চেয়ার সব ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এদিক থেকে মানুষের মধ্যে ভয় এবং আতঙ্ক কাজ করছে। ফলে বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের লোকজনসহ শ্রমিক ও দিনমজুর।

উপজেলার আড়ানী বাজারে চা বিক্রেতা গপু বলেন, গত ছয় দিন ধরে চায়ের দোকান বন্ধ রেখেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিন দিন আগে এসে চায়ের কাপ, চুলা, টেবিল, চেয়ার সব ভেঙে দোকান বন্ধ করে দিয়ে গেছেন। এখন কীভাবে চলব, ভেবে পাচ্ছি না। অথচ আড়ানী বাজারে আনোয়ারা ফার্মেসিতে ওষুধের দাম বেশি নিয়ে মারধরের অভিযোগ দেওয়া হলেও সেদিকে লক্ষ্য নেই উপজেলা প্রসাশনের।

বারখাদিয়া গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমার পরিবারের একমাত্র আয়-রোজগারের উৎস আম। গত বছর আমে বিপর্যয় হওয়ায় অতি কষ্টে একটি বছর পার করেছি। এবার গাছে যথেষ্ট মুকুল এসেছে। অথচ করোনা আতঙ্কের কারণে কোনো লেবারই কাজে যেতে চাচ্ছে না। বর্তমানে বাগানের যে অবস্থা, তাতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে না পারলে আমে চরম বিপর্যয় হবে। একই কথা বলেন অন্য বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরাও।

বাউসা গ্রামের কৃষক আবদুল মালেক জানান, তার তিন বিঘা জমিতে গম পেকেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে গম কাটার জন্য তিনি কোনো শ্রমিক পাচ্ছেন না। যাকেই ডাকা হচ্ছে, তারা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ভয়ে কাজে যেতে চাচ্ছে না। ফলে তিনি অনেকটা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, সমস্যা অনেক। তবে সব সমস্যার সমাধান এই মুহূর্তে দেওয়া যাবে না। দেশ এবং জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে রাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত নিবে, সেটা আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে। তিনি কৃষকদের উদ্দেশে বলেন, ফসল ফলানো এবং জমিতে কাজ করার বিষয়ে কোনো বিধি নিষেধ জারি করা হয়নি। তিনি সমাজের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে আগামি দুই-এক দিনের মধ্যে বিনামূল্যে চাল বিতরণ করা হবে বলে জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close