আমিনুল ইসলাম রানা, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

  ১৪ জুলাই, ২০১৯

রাজবাড়ী

ভাঙছে নদী, কমছে জেলার আয়তন

নদী ভাঙন ও মাটি খননে রাজবাড়ীতে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মানুষ আবাদি জমিতে বাড়ী তৈরি করছে। কেউ আবাদি জমি’র মাটি বিক্রি করছে। কেউ আবার জমি খনন করে পুকুর তৈরি করছে। অনেকে মিল কারখানাও তৈরি করছে। নদী ভাঙনেও প্রতিবছর কমিয়ে আসছে জমি। ছোট হয়ে আসছে জেলার আয়তন।

প্রতিবছর পদ্মার ভাঙনে জেলার পাঁচটি উপজেলায় শতশত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ছেন। নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি। নদী ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবাদে চলতে মাটি খনন। প্রভাবশালীরা অবাদে মাটি খনন করে বিক্রি করছে। মাটি খননের কারণেও বসতি জমি কমিয়ে আসছে। এদিকে অপরিকল্পীত ভাবে গড়ে উঠছে মিল কারখানা।

২০০১ সালে রাজবাড়ী জেলার আদমশুমারি রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১ মার্চ ১৯৮৪ সালে। পাঁচটি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা এবং ৪২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী জেলা। জেলার আয়তন ১১১৮.৮ বর্গ কিমি। এই জেলায় জনসংখ্যা রয়েছে ১০ লাখ, ১৫ হাজার ৫১৯ জন। ভোটার রয়েছে ৭লাখ ২৮ হাজার ৫৫১জন। মোট জমি ১ লাখ ১২ হাজার ৭৭৬ হেক্টর। আবাদি জমি ৭৭ হাজার ৭৪৭ হেক্টর। কৃষি পরিবার রয়েছে ১ লাখ ৮১হাজার ৪৯৫টি। কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল ৭৩শতাংশ মানুষ।

স্থানীয় কৃষক জব্বার শেখ নদীর দিকে তাকিয়ে বলেন, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এখান থেকে পায়ে হেঁটে নদীর পাড়ে যেতে সময় লাগত ২ঘণ্টা। প্রতি বছরে নদী ভাঙনের কারণে শতশত হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর আমারও প্রায় ১০ বিঘা জমি নদীতে চলে যায়। এখন যতটুকু রয়েছে আবাদ করে কোন রকম চলছে। এইটুকু যদি নদীতে চলে যায় আমাকে পরিবারসহ রাস্তার পাশে গিয়ে বসবাস করতে হবে। সরকারের কাছে দাবি রিলিফ নয়, নদী শাসন করলে আমরা সস্তি পাই।

দৌলতদিয়া নদী ভাঙন কবলিত গৃহবধূ মালেকা বেগম বলেন, আমাদের অনেক জমি ছিল। গোলা ভরা ধান ও গোয়াল ভরা গরু ছিল। নদী ভাঙনের কারণে আমরা এখন পথের ফকির হয়ে গেছি। এখনও যা জমি আছে কোন রকম সংসার চলছে। সুতরাং আমরা এই নদী শাসনের দাবি করি সরকারের কাছে।

মো. আয়নাল শেখ বলেন, চাকরী করার সুবাদে আমাকে এলাকার বাইরে থাকতে হয়। তবুও আমি প্রতিবছর ঈদেও বাবা-মায়ের মৃত্য বার্ষিকীতে বাড়িতে আসতাম। কিন্ত নদীতে আমাদের বাড়ী বিলীন হওয়ার কারণে এলাকায় আর আসা হয় না। তবুও নারীর টানে নদীর পারে এসে বসে রয়েছি। তিনি বলেন, সরকারের উচিত নদী শাসন করা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, রাজবাড়ী একটি কৃষি প্রধান জেলা। এই জেলায় মোট আবাদি জমি ৭৭ হাজার ৯শ’ হেক্টর। তার মধ্যে প্রতি বছরের নদী ভাঙনে, বাড়ী ঘর, শিল্প কারখানা, ইট ভাটা, এগুলোতে কিছু আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আবার অপর দিকে নতুন করে চর জাগে। যার কারণে আবার সেটা পূরন হয়ে যায়। তারপরও আমরা কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর ৮০ কিমি তীর ঘেসে রাজবাড়ী জেলা অবস্থিত। তার মধ্যে সিংহ ভাগ প্রায় ২৫-৩০ কিমি এলাকায় জুড়ে ভাঙন রয়েছে। ভাঙন এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্থ স্থানগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গা গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা রয়েছে যেমন- প্রাইমারি স্কুল, ঘর-বাড়ি তার আশপাশে নদী ভাঙন দেখা দিয়ে আমরা তাৎক্ষনিক ভাবে সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close