মো. নাজিম উদ্দিন, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

নদী খননে নেই উদ্যোগ

একসময়ের তিতাস এখন কৃষিজমি

বৈশাখ আসার অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার তিতাস নদী। নদীটি শুকিয়ে আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা সকলে এখন তিতাস নদীতে ধান চাষ করছেন। নদীতে পানি ও বিকল্প সেচ ব্যবস্থা না থাকার ফলে ফসলি জমিতে চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ৩ উপজেলার ২৭ গ্রামের লক্ষাধিক কৃষক।

উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ২টি বড় ও একটি ছোট নদী। নদীর নাম গুচ্ছ বই হতে নিলেই চোখে পড়ে তিতাস নদীর নাম। এই নদীটি ঘিরে ১৯৫৬ সালে অদ্বৈত মল্লবর্মণ ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস রচনা করে বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন।

পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ অবলম্বনে ঋত্বিক ঘটক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। যা ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের এক জরিপে দর্শক, চলচ্চিত্র সমালোচকদের ভোটে এটি সবার সেরা ১০টি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তালিকার মধ্যে শীর্ষস্থান লাভ করে।

নদীটি ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষে আরো দক্ষিণ দিকে ভৈরব-আশুগঞ্জ হয়ে মুরাদনগর, হোমনা ও তিতাস উপজেলার উপর দিয়ে বৃহত্তম নদী মেঘনায় গিয়ে মিশেছে।

এক সময় বছরের অধিকাংশ সময় এই নদীর উপর চোখে পড়তো সারি সারি পালতোলা নৌকা। আর এই নদী থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষি জমিতে ফসল ফলাত তিন উপজেলার প্রায় ২৭টি গ্রামের কৃষক। অথচ এখন খননের অভাবে সেই নদীতে পানি নেই। নদী পৃষ্ঠে বপন করা হচ্ছে ইরি-বোরো ধান ক্ষেত। বছরের চার মাস নদীতে পানি থাকলেও বাকি আট মাস থাকে পানি শূন্য। যা থেকে উত্তরন চায় কৃষকরা। নাগেরকান্দি গ্রামের কৃষক খোকন মিয়া বলেন, এই নদীর পানি দিয়ে আমরা খুব সহজে ফসল ফলাতে পারতাম। বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় আমাদের কৃষি কাজ করতে ভীষন কষ্ট হয়। সরকার যদি নদীটি খনন করার ব্যবস্থা করতো তাহলে সারা বছর নদীতে পানি থাকতো। যা থেকে কৃষি কাজ করতে আমাদের প্রায় ২৭টি গ্রামের কৃষকদের খুব সহজ হতো এবং কৃষি কাজ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারতো সহজে। আগে এই নদীতে জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। নদীতে বিভিন্ন প্রকার মাছ ধরা পড়তো, যেমন বোয়াল, শোল, চিতল, বাঘাআইড়, পাবদা, শিং, মাগুর, কৈসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এখন নদীতে পানি না থাকায় তিন উপজেলার কয়েক হাজার জেলে পরিবার আদি পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সারা বছরে এ উপজেলায় তিন ধরনের ধান চাষ হয়। এর মধ্যে বোরো ১৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর, আউশ সাত হাজার ৫০০, রোপা আমন পাঁচ হাজার ৯৯০ হেক্টর। সর্বমোট ৩১ হাজার ২৪০ হেক্টর জমি চাষ করেন কৃষকরা। উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ও শ্রীকাইল ইউনিয়নে দুই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায় সেচ ব্যবস্থার অভাবে। অথচ এক সময় তিতাস নদীর পানি এসব জমির পানির প্রয়োজন মেটাতো। কৃষকরা অবিলম্বে তিতাস নদীকে পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করে নদীতে পানি ও নদীর যৌবন ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষের নিকট জোড় দাবি জানিয়েছেন।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা ও রক্ষনাবেক্ষন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ খান বলেন, হোমনা উপজেলার দুলালপুর থেকে তিতাস উপজেলার লালপুর পর্যন্ত তিতাস নদীর প্রায় ৪৬ কিলোমিটার অংশ খননের একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষোয় আছে। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যে প্রকল্পটির অনুমোদন হবে। তখন নদীটি পুনরায় খনন করে আবার তার হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close