ফরিদপুর প্রতিনিধি

  ২১ জানুয়ারি, ২০১৯

সৌন্দর্যবর্ধক সূর্যমুখী এখন লাভজনক ফসল

ফরিদপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুল চাষ। অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আর স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষবাদ। ফরিদপুর বিএডিসির উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

কৃষি বৈচিত্র্যময় জেলা ফরিদপুরে প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে। এখানে শুরু হয়েছে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখীর চাষ। সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য ভোজ্য তেলের চাইতে একটু আলাদা। কোলেস্টেরল মুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সাময়িকী সূত্রে জানা যায়, রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল অনেক বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। এর তেল শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে। ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ এই তেল শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ দূর করতেও ভূমিকা রাখে। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন খেতে পারেন সূর্যমুখী বীজ বাদামের মতো ভেজে, সালাদ দিয়ে অথবা পাস্তা, স্যান্ডুউইচে খাওয়া যায়।

মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে, ফরিদপুরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখীর চাষ। জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় শতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। আর কৃষকেরা ভাল ফলন আশা করছেন।

সূর্যমুখী শুধু তেল উৎপাদনের জন্যই নয়, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য অনেকে বাড়ির আঙ্গিনায় ও অফিসের সামনে এর চাষ করে থাকেন। ফরিদপুর বিএডিসির ঘুরতে আসা রেহেনা পারভীন বলেন, দৃষ্টি নন্দন এই ফুল দেখতে আমি এখানে এসেছি। তিনি তাঁর বাড়ির ছাদে ও জমিতে এই ফুল চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

কৃষক জুয়েল মল্লিক বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যসুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার ওষুধ কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। তাছাড়া অন্যান্য তৈলবীজ যেমন সরিষার, তিলের চেয়ে তেল বেশি পাওয়া যায়। এ কারণেই সূর্যমুখী চাষ করেছি। অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করেছি। আশা করছি, ফলন ভালো পাব এবং লাভবান হব।

সূর্যমুখী চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুই বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা লভ করা সম্ভব। এছাড়া সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যয়।

ফরিদপুর বিএডিসির উপপরিচালক (ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন খামার) কৃষিবিদ মাহমুদুল ইসলাম খান জিয়া বলেন, আমার এই খামারে ২ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করা হয়েছে। আমাদের খামার থেকে উৎপাদিত বীজ দ্বারা ফরিদপুর জোনের প্রায় ১০০ চাষি সূর্যমুখীর চাষ করেছে। আমাদের অঞ্চলের চাহিদা মিটানোর পরে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদ পূরণ করা হচ্ছে।

সূর্যমুখী চাষ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে এ কৃষিবিদ বলেন, আমাদের নরমাল যে তৈল জাতীয় ফসল আছে, তার চাইতে সূর্যমুখী বীজে তৈলের পরিমাণ ৪২ থেকে ৪৪ শতাংশ বেশি। এটা অন্য ফসলের চেয়ে স্বল্প জীবন কাল ও লাভজনক। সে কারণেই সূর্যমুখী ফুল চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close